প্রমাণ আগেও মিলেছিল। কিন্তু সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনে সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের জড়িত থাকার প্রসঙ্গ বরাবর সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। এ বারও তার অন্যথা হল না।
গত কাল একটি প্রথম সারির মার্কিন দৈনিকে দাবি করা হয়, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র রিপোর্টে স্পষ্ট, খাশোগি-খুনের মাথা খোদ যুবরাজ সলমন। তাঁর নির্দেশেই ইস্তানবুলে গিয়েছিল ১৫ জনের হিট স্কোয়াড। গত কাল দৈনিকটির ওই রিপোর্ট নিয়ে হইচই পড়ে গেলেও মুখে কুলুপ এঁটেছিল মার্কিন প্রশাসন। ‘দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে’ বলেই চুপ করে থাকে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন বিদেশ দফতর। ২৪ ঘণ্টা পরে আজ মুখ খুললেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বললেন, ‘‘এখন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি সিআইএ। এত তাড়াতাড়ি কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ তবে জানিয়েছেন, খাশোগি খুনে সলমনের যোগ নিয়ে সিআইএ প্রধান জিনা হ্যাসপেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এ পর্যন্ত সলমনের জড়িত থাকার কোনও খবর নেই তাঁর কাছে। আগামী মঙ্গলবার সাংবাদিক-হত্যার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
কিন্তু সেই রিপোর্টে আদৌ কী বলা হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। গোড়া থেকে সলমনকে আড়াল করে গিয়েছেন ট্রাম্প। ঘুরিয়ে এ-ও বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে আমেরিকারই ক্ষতি। ফলে মঙ্গলবারের সিআইএ রিপোর্টে যা জানানো হবে, তাতে এখন থেকেই অন্য ‘গল্প’ দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। তা ছাড়া, ট্রাম্পের আজকের কথাতেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
দাবানল বিধ্বস্ত ক্যালিফর্নিয়া পরিদর্শনে যাওয়ার পথে আজ এয়ার ফোর্স-ওয়ানেই হ্যাসপেল ও বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়োর সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন সাংবাদিককে খুন! ভয়ঙ্কর ঘটনা। মঙ্গলবার তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। বিশদ জানানো হবে, কে বা কারা, কোন উদ্দেশ্য নিয়ে খাশোগিকে হত্যা করেছে। কিন্তু এখনই মন্তব্য করলে, বড্ড তাড়াতাড়ি বলা হয়ে যাবে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি সিআইএ।’’
বিদেশ দফতরের মুখপাত্র হেদার নওয়ার্টও আজ বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘সম্প্রতি কিছু দৈনিকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, খাশোগি খুনের তদন্ত প্রায় শেষ করে ফেলেছে মার্কিন সরকার। কিন্তু সেটা সঠিক নয়। খাশোগি হত্যা রহস্যের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। বিদেশ দফতর প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসেও আলোচনা চলছে। ওই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত অন্য দেশগুলির সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।’’
কিন্তু নওয়ার্ট যতই বলুন না কেন, কোনও মার্কিন দৈনিকই লেখেনি, সরকারি তদন্ত শেষ। তারা সিআইএ তদন্তের মূল্যায়ন করেছে মাত্র। দৈনিকে বলা হয়েছিল— খাশোগি খুনের আগে ও পরে দু’টি ফোন কল এসেছিল। পরের ফোনটিতে জানানো হয়েছিল, ‘কাজ খতম। বস-কে জানিয়ে দিন!’ সিআইএ নিশ্চিত, এই ‘বস’টি সৌদি যুবরাজ।
ট্রাম্প আজ জানান, ‘মর্মান্তিক’, তাই টেপগুলো শুনতে বারণ করা হয়েছে তাঁকে। ‘‘এখনও পর্যন্ত আমায় যা জানানো হয়েছে, সলমনের কোনও ভূমিকা নেই,’’ বলেন তিনি। সলমনের জড়িত না থাকার কথা ট্রাম্পকে কে জানিয়েছে, তা খোলসা করে বলেননি প্রেসিডেন্ট। সিআইএ-র কাছে জানতে চাওয়া হলে, মন্তব্য করেনি তারাও। হোয়াইট হাউসের ভিতরে অবশ্য অন্য ফিসফাস চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টার কথায়, ‘‘সবাই জানে কী ঘটেছে। পরিস্থিতিটাই আসলে সুবিধের নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy