রাহুল মণ্ডল
চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কলকাতার রাহুল মণ্ডল। ‘‘হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। আমার হাত কাঁপছে। শুধু মনে হচ্ছে, মায়ের সঙ্গে কথা বলা দরকার’’, বলছিলেন তিনি। সুদূর লন্ডন থেকে ফোনে মাকে বললেন, ‘‘আজ ফাইনাল ছিল, আমি জিতে গিয়েছি মা।’’ লাজুক, মুখচোরা বছর তিরিশের ছেলেটাকে নিয়ে ততক্ষণে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে।
ব্রিটেনের নামজাদা টিভি সিরিজ কেক, পেস্ট্রি বানানোর তুমুল জনপ্রিয় শো ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’-এর চূড়ান্ত পর্ব ছিল মঙ্গলবার। অন্য দুই প্রতিযোগী কিম-জয় হিউলেট এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী রুবি ভোগালকে হারিয়ে যখন বিচারকেরা রাহুলের নাম ঘোষণা করলেন তখন টিভির পর্দার গনগনে আঁচ লন্ডন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতাতেও।
৯ সপ্তাহ ধরে বাছাই ১২ জনের মধ্যে থেকে সেরা কেক-বানিয়ে কে হবে তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জল্পনা চলছিলই। গবেষক বিজ্ঞানী রাহুলের ভক্তকুলের তালিকায় ছিলেন হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রোওলিংও। তবু সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নেবেন, ভাবেননি রাহুল। আর এটাই তাঁর ‘কুকিং সিক্রেট’ বলে মনে করছেন শোয়ের অন্যতম বিচারক পল হলিউড। রাহুলের সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘ও নিজেও জানে না, কতটা ভাল বেক করতে পারে। ফলের আশায় কাজ করতে দেখিনি ওকে।’’
আরও পড়ুন: কঙ্কালসার, অনাহারক্লিষ্ট, উলঙ্গ শিশুর ছবি ‘যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ’ ভাবল ফেসবুক!
ছোট থেকেই রান্নাবান্নায় উৎসাহ থাকলেও হাতেখড়ি অবশ্য বেশি দিন আগে নয়। ৭ বছর আগে গবেষণার জন্য লন্ডনে পাড়ি। শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোর গতি নিয়ে জটিল গবেষণায় ডুবে থাকা লাজুক ছাত্রটি পড়াশোনার বাইরে এমন কিছু চাইছিলেন যাতে সহজে বন্ধুত্ব পাতানো যায়। সেখান থেকেই কেক, পেস্ট্রি বানানো শুরু! ‘‘বছর দু’য়েক আগে যে বার বাবা-মা প্রথম লন্ডনে এলেন, ওঁদের জন্য প্রথম কেকটা বানিয়েছিলাম,’’ জানালেন রাহুল। তবে শোয়ের চূড়ান্ত পর্বটা কেকের মতো মসৃণ ছিল না। রঙিন ডোনাটের গায়ে নক্সা তুলতে গিয়ে এক বার তো আইসিং টিউব ফেটে গেল। আর শেষ বার শো-স্টপার কেকটা বানাতে গিয়ে তো মহাবিপত্তি!
কাঁচের জারে ভিক্টোরিয়া যুগের রক-গার্ডেনের আদলে তৈরি কেকে তখন বিস্কুটের সিঁড়ি, ক্রিমের ঝিল, আর চিনির তৈরি রংবেরঙের গাছপালা সাজানো চলছে। আচমকা জার ফেটে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে পড়ল কেকে। নতুন করে কেক সাজাতে রাহুলকে আরও ১৫ মিনিট দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। যদিও তা নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন দর্শকরা।
আরও পড়ুন: ধর্মদ্রোহে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্ত আসিয়া
বেকিং না গবেষণা, ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটবেন রাহুল? তাঁর উত্তর, ‘‘বেকিং আসলে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যোগফল। ভবিষ্যতে সেই বিজ্ঞানটাই সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy