হাফিজ সইদ। —ফাইল চিত্র।
পরিকল্পনা করেই কুলভূষণের পরিবারকে হেনস্থা করেছে পাক প্রশাসন। ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে যে দাবি ভারতের তরফে তোলা হয়েছিল, তা আরও স্পষ্ট করল লস্কর-ই-তৈবা এবং জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সইদ।
সাক্ষাতের নামে কুলভূষণের পরিবারকে হেনস্থা এবং অভব্য আচরণের জন্য প্রকাশ্য জনসভায় পাক গুপ্তচর সংস্থা (আইএসআই)-র ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেল হাফিজ সইদের মুখে। শুক্রবার রাউয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সেনার সদর দফতর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এই প্রকাশ্য জনসভা করে হাফিজ। সেই জনসভারই একটি ভিডিও ভারতের হাতে এসে পৌঁছেছে।
আইএসআইয়ের নজরকে চিতার সঙ্গে তুলনা করেছে হাফিজ। ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যে মুহূর্তে আইএসআইয়ের চোখে চেতনকূল (কুলভূষণের স্ত্রী)-এর জুতোয় অস্বাভাবিকত্ব নজরে এসেছে, তা খুলে নিয়েছে। আইএসআই ভীষণ স্মার্ট।’’
আরও পড়ুন: হাফিজের সভায় প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্রদূত, অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি
এই জনসভায় হাফিজ সইদের সঙ্গে মঞ্চে হাজির ছিল লস্কর ই তৈবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হাফিজে ঘনিষ্ঠ আমির হামজা। হামজাও একই ভাবে আইএসআইয়ের প্রশংসা করে বলে, ‘‘ভারত পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছিল তাঁর (কুলভূষণের) মা ও স্ত্রীকে দেখা করতে দেওয়ার জন্য। পাকিস্তান করুণা দেখিয়ে তাঁদের দেখা করার আমন্ত্রণ জানায়। ভারত বোধহয় ভেবেছিল কুলভূষণের সঙ্গে একই সোফায় তাঁরা মুখোমুখি হবেন। কিন্তু আইএসআই তা হতে দেয়নি।’’
রাওয়ালপিন্ডিতে জনসভায় ভাষণ দিচ্ছে হাফিজ। ছবি: টুইটার।
কুলভূষণের পরিবারকে হেনস্থা করা পাক প্রশাসনের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। গত ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানে কুলভূষণের মা ও স্ত্রী পৌঁছনোর পর থেকেই তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিল ভারতের কাছে। কারণ সাক্ষাতের দিন আতঙ্কের পরিবেশে কাচের দেওয়ালের দুই দিকে কুলভূষণের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁর পরিবারকে। ওই ঘরে ঢোকানোর আগে পায়ের জুতে থেকে কপালের টিপ সবই খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছিল তাঁদের। তাঁদের মাতৃভাষাতেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এর কড়া সমালোচনাও করা হয়। সাক্ষাতের নামে পাকিস্তান নিষ্ঠুর রসিকতা করেছে, এমন অভিযোগ আনে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক।
সেই অভিযোগ যে কতটা সত্য, হাফিজ সইদের জনসভাই তার প্রমাণ, সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এমনটাই বলছেন ভারতের প্রাক্তন মেজর জেনারেল জি ডি বক্সী। লস্কর-ই-তৈবা এবং জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সইদ ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল চক্রী হিসেবে অভিযুক্ত। ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই হাফিজের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ চেয়ে চাপ দিচ্ছে পাকিস্তানকে। আমেরিকা তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছে এক কোটি ডলার। রাষ্ট্রপুঞ্জ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে তাকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা হাফিজকে গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছে আমেরিকা। জি ডি বক্সীর মতে, এমন একজন সন্ত্রাসবাদী পাক সেনার সদর দফতরের কাছে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্য জনসভায় আইএসআইয়ের প্রশংসা করছে, এটাই প্রমাণ করে যে হাফিজ আসলে আইএসআই এবং পাক প্রশাসনের ছত্রছায়াতেই রয়েছেন।
তবে হাফিজের এই সভার ছবি প্রকাশ্যে আসার পর আরও একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সভামঞ্চে হাফিজের পাশে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্রদূতকে। ভারত এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy