Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
লি কুয়ান ইউ (১৯২৩-২০১৫)

তাঁর হাতেই জন্ম আধুনিক সিঙ্গাপুরের

সামান্য একটা বন্দর উপনিবেশ থেকে বিশ্বের অন্যতম ঝাঁ চকচকে ধনী দেশ তৈরি করেছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে টানা ৩১ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদও সামলেছেন। আজ সকালে মারা গেলেন সেই লি কুয়ান ইউ। আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন লি।

শ্রদ্ধা। লিয়ের ছবিতে প্রণাম। সিঙ্গাপুরে। ছবি: রয়টার্স।

শ্রদ্ধা। লিয়ের ছবিতে প্রণাম। সিঙ্গাপুরে। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
সিঙ্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৮
Share: Save:

সামান্য একটা বন্দর উপনিবেশ থেকে বিশ্বের অন্যতম ঝাঁ চকচকে ধনী দেশ তৈরি করেছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে টানা ৩১ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদও সামলেছেন। আজ সকালে মারা গেলেন সেই লি কুয়ান ইউ। আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন লি। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি ছিলেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। আজ সকালে লিয়ের বড় ছেলে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুঙ্গ এক টিভি বার্তায় তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর দেশবাসীকে জানান। তার পরই হাসপাতাল আর পার্লামেন্ট হাউসের সামনের রাস্তা ফুলে ফুলে ঢেকে যায়। লিয়ের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ২৫ থেকে ২৮ মার্চ পার্লামেন্ট হাউসে শোয়ানো থাকবে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দেহ। ২৯ মার্চ শেষকৃত্য।

১৯২৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ সিঙ্গাপুরে জন্মেছিলেন হ্যারি লি কুয়ান ইউ। চিনের গুয়াংডং প্রদেশ থেকে তাঁর পূর্বপুরুষ সিঙ্গাপুরে চলে এসেছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার স্মৃতি মুছে ফেলতে প্রথম নাম হ্যারি ছেঁটে ফেলেছিলেন তিনি। তবে পরবর্তী কালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন লি। স্ত্রী কোয়া গেয়ক চুয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ লন্ডনে। বিয়ে সেখানেই। দুই ছেলে ও এক মেয়ে তাঁদের। ২০১০ সালে ৮৯ বছর বয়সে মারা যান কোয়া। বড় ছেলে সিয়েন এখন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী। আর ছোট ছেলে লি সিয়েন ইয়াঙ্গ ২০০৯ সাল থেকে দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন।

১৯৫৯ সালে স্বাধীন শহর-রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল সিঙ্গাপুর। তার পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন লি। কোনও প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন লি। একা হাতে কঠোর ভাবে সামলেছেন দেশের আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা। মাদক বা অস্ত্রের কারবার করলে সিঙ্গাপুরে শাস্তি ফাঁসি। দেশে চুইং গাম খাওয়ার রীতিও নিষিদ্ধ করেছেন এক সময়। আর এই সবের জন্য বিরোধীদের প্রচুর সমালোচনাও কুড়িয়েছিলেন পিপল্স অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) নেতা লি। কিন্তু কোনও দিন সে সব কথা গায়ে মাখেননি। বলতেন, “মানুষকে বিনা বিচারে আটকে রাখতে হবে। সে কমিউনিস্ট হোক বা ধর্মীয় মৌলবাদী। যদি তা না করো, দেশ কিন্তু তলিয়ে যাবে।” তাঁর দেশ পরিচালনার মূল মন্ত্র ছিল এটাই। তবে প্রধানমন্ত্রিত্বের পুরো রাস্তাটা মসৃণ ছিল না একেবারেই। ষাটের দশকে ভয়ঙ্কর জাতি বিদ্বেষে তছনছ হয়ে গিয়েছিল গোটা সিঙ্গাপুর। চিনা আর মালয়দের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে সেই সময় মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। তার পরই মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন লি।

লিয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিশ্বের তাবড় নেতারা শোকবার্তায় ভরিয়ে ফেলেছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি। তালিকায় ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। ভারতের সঙ্গে লিয়ের সম্পর্কও অবশ্য বহু দিনের। সেই ইন্দিরা গাঁধীর জমানা থেকেই। ১৯৬৬ সালে ইন্দিরার সিঙ্গাপুর সফরের পরে দু’দেশের আদানপ্রদান বাড়ে। ব্রিটিশ আমলে ভারত-চিন বাণিজ্যপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সিঙ্গাপুরের। ইন্দিরা এবং লি সেই বাণিজ্যপথ ফের চালু করেন। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে গভীর বাণিজ্যিক যোগ ছিল ভারতের। আধুনিক ও বহুজাতিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচিত লি। তাঁর সেই পরিচয়ের অন্যতম প্রমাণ সিঙ্গাপুরের পরিষেবা, তথ্য প্রযুক্তি, নির্মাণের মতো ক্ষেত্রে কর্মরত প্রচুর ভারতীয়। এখন ওই রাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৯.১ শতাংশ ভারতীয়। সংখ্যায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ তামিল। ওই তামিল সম্প্রদায়কে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও প্রথম বলেছিলেন লি-ই। তাই আজ তাঁর প্রয়াণের খবর পেয়ে দিল্লির পাশাপাশি শোকবার্তা এসেছে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেও।

শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গত বছরই বিদেশি লগ্নি টানতে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়েছিলেন তিনি। টুইটারে আজ মমতা লিখেছেন, “লিয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্তম্ভিত। গত বছর যখন সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঁর নামে একটি চেয়ার তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE