রিল লাইফের নয়, তিনি রিয়েল লাইফের ‘আমির’।
ছোট করে ছাঁটা চুল। মাথার এক পাশে সিঁথি। আসলে সিঁথি নয়, দুর্ঘটনার প্রকট ক্ষত। আর ওই দুর্ঘটনাতেই ‘শর্ট টার্ম মেমরি লস’-এর শিকার হয়েছিলেন সঞ্জয় ওরফে আমির খান। কিছু ক্ষণ আগের কোনও কথাও মনে রাখতে পারতেন না তিনি। তাই সমস্ত কথা মনে রাখতে হত ডায়েরিতে লিখে। সেই একই ঘটনা এ বার ৭০ মিমি-র গণ্ডি ছাড়িয়ে রিয়েল লাইফে।
আরও পড়ুন: আসন বিভ্রাটে হবু ‘দম্পতি’কে বিমান থেকে জোর করে নামিয়ে দেওয়া হল!
উত্তর-পশ্চিম তাইওয়ানের বেইপুরের বাসিন্দা চেন হংঝি। প্রতি দিন তাঁর সকাল শুরু হয় মায়ের নিয়মমাফিক পাঠ দিয়েই। চেনের মা, ওয়াং মিয়াও চিয়ং তাঁকে মনে করিয়ে দেন তিনি আর ১৭ বছরে আটকে নেই। তাঁর আশেপাশের পরিবেশটাও বদলে গিয়েছে অনেকটাই। মাঝখানে কেটে গিয়েছে আরও আটটা বছর। আসলে মাত্র পাঁচ মিনিট আগের ঘটনা মনে রাখতে পারেন চেন। ঘুম থেকে উঠে প্রতি দিনই ভুলে যান তাঁর আসল বয়স ২৫। ভুলে যান মাঝের আটটা বছরের সমস্ত স্মৃতি। ঠিক যেমনটা ‘গজনি’ সিনেমায় আমির খানের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
ডায়েরির পাতায় নিজের তৈরি হরফে হিসাব লিখেছেন চেন হাংঝি।
১৭ বছর বয়সে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পেয়েছিলেন চেন। তার পর থেকেই ধীরে ধীরে ‘শর্ট টার্ম মেমরি লস’-এর একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। বর্তমানে বড়জোর ৫-১০ মিনিট আগের ঘটনাই মনে রাখতে পারেন চেন। তাই এই মুহূর্তে তাঁর ভরসা একটি কালো ডায়েরি। ওই ডায়েরিতেই প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে রাখেন চেন। প্রতি দিন তাঁকে কী কী কাজ করতে হবে তাও লেখা থাকে এই ডায়েরির পাতাতে।
অসুবিধা হয় না?
খুব স্বাভাবিক গলাতেই চেনের জবাব, ‘‘এটাই আমার রেকর্ড। আমি রোজ এখানেই সব লিখি। যদি দেখি খুব বৃষ্টি পড়ছে, আর বুঝি এখন আমার বাইরে যাওয়া উচিত নয়, তখন আমি লিখে রাখি- বৃষ্টি পড়ছে।’’ নতুন করে পড়াশোনা শুরু করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। বাবা মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে।
মা, ওয়াং মিয়াও চিয়ং-এর সঙ্গে চেন।
তাই ৬০ বছরের বৃদ্ধা মা-কে নিয়েই সংসার চেন হংঝির। সংসারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে মানুষ। পুরনো বোতল ‘রিসাইক্লিং’ করে কোনও মতে দিন কাটে মা-ছেলের।
কিন্তু, কী ভাবে ব্যবসার হিসাব রাখেন চেন?
চেন জানিয়েছেন, প্রতি দিন সকালে উঠেই ডায়েরি নিয়ে বসেন তিনি। লিখে রাখেন সে দিন কী কী কাজ করতে হবে তাঁকে। কার কার সঙ্গে দেখা করতে হবে। ব্যবসার হিসাবটাও লেখা থাকে কালো ডায়েরির পাতাতেই। কত বোতল জমা হয়েছে, কত টাকা রোজগার হল— সবটাই লেখা থাকে। তবে খুব বেশি টাকার লেনদেন কখনও করেন না তিনি। পাছে ভুলে যান টাকা কোথায় রেখেছেন। দুর্ঘটনার পর সংখ্যা, হরফ সবটাই ভুলে গিয়েছেন চেন। ফলে এখন নিজের তৈরি হরফেই ডায়েরি ভরান তিনি।
২০১৪ সালে ‘বিফোর আই গো টু স্লিপ’ নামে একটি সিনেমাও তৈরি হয়েছিল চেন-এর গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে। রোয়ান জফের পরিচালনায়, নিকোল কিডম্যান ও কলিন ফার্থ অভিনীত এই ছবি সুপার হিট হয়েছিল। এর পর থেকেই ‘শর্ট মেমরি ম্যান’ নামে সোশ্যাল মিডিয়া সেলেব হয়ে উঠেছিলেন চেন হাংঝি।
কিন্তু জনপ্রিয়তা তো দু’দিনের। প্রতি দিনের লড়াইয়ে না থাকে কোনও রুপোলি পর্দা, না থাকে গুণমুগ্ধের ভিড়। চেনের মায়ের তাই একটাই চিন্তা। তাঁর মৃত্যুর পর কে দেখাশোনা করবে চেন-এর?
ছবি: সংগৃহীত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy