Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিলামে ভারতীয় রেস্তরাঁর দু’শো বছরের পুরনো মেনু

প্রায় দু’শো বছর আগে লন্ডনে খুলেছিল প্রথম ভারতীয় রেস্তরাঁ। দ্য হিন্দোস্তানি কফি হাউস। এত বছর পরে নিলামে উঠল সেখানকার হাতে লেখা একটি মেনু।  তাতে রয়েছে জিভে জল আনা মশলাদার ২৫টি ভারতীয় খাবারের সম্ভার।

স্মৃতি: ভারতীয় রেস্তরাঁর ইতিহাস মনে করিয়ে ফলক। লন্ডনের রাস্তায়।

স্মৃতি: ভারতীয় রেস্তরাঁর ইতিহাস মনে করিয়ে ফলক। লন্ডনের রাস্তায়।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

প্রায় দু’শো বছর আগে লন্ডনে খুলেছিল প্রথম ভারতীয় রেস্তরাঁ। দ্য হিন্দোস্তানি কফি হাউস। এত বছর পরে নিলামে উঠল সেখানকার হাতে লেখা একটি মেনু। তাতে রয়েছে জিভে জল আনা মশলাদার ২৫টি ভারতীয় খাবারের সম্ভার। লন্ডনে বিরল বইয়ের মেলা বসেছিল ২৪ থেকে ২৬ মার্চ। সেখানে তালিকাটি বিক্রি করে জার্নডিস অ্যান্টিকুয়্যারিয়্যান বুকস। নিলামে মেনুটির দাম উঠেছে ৮,৫০০ পাউন্ড!

শেখ দিন মাহমেদ নামে এক ভারতীয় ১৮১০ সালে চালু করেন ওই রেস্তরাঁ। লিখেছিলেন আত্মজীবনীও। তিনিই প্রথম ভারতীয় যাঁর লেখা ইংরাজিতে ছাপা হয়েছিল।

জন্ম পটনার এক অভিজাত পরিবারে, ১৭৫৯ সালে। বাবার মৃত্যুর পরে মাত্র ১১ বছর বয়সে যোগ দেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে। আইরিশ অফিসার গডফ্রে বেকারের অধীনে কাজ করতে শুরু করেন। শীঘ্রই পদোন্নতি। হন সুবেদার। ১৭৮২ সালে পদত্যাগ করে আয়ারল্যান্ড হয়ে লন্ডনে যান মাহমেদ। ব্রিটেনের মধ্যে একটুকরো ভারতের ছোঁয়া আনতেই ওই রেস্তরাঁটি খোলেন মাহমেদ। ঠিকানা: ৩৪ জর্জ স্ট্রিট, পোর্টম্যান স্কোয়ার। ব্রিটিশ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলেন রেস্তরাঁর।

চালু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘দ্য হিন্দোস্তানি কফি হাউস’। অন্দরসজ্জা থেকে খাবার— সবেতেই ভারতীয় ছাপ। বসার জন্য বেতের চেয়ার। দেওয়ালে দেওয়ালে টাঙানো ভারতের মনোরম দৃশ্যের পেন্টিং। হাতে লেখা মেনুতে গলদা চিংড়ি ও মুরগির কারি। আনারস পোলাও। খাঁটি ভারতীয় ঘরানার আরও অনেক খাবার। ভারতীয় কেতায় তামাকসেবনের জন্য ভিতরে ছিল হুঁকো-ঘরও। বসে খাওয়াই শুধু নয়, এখান থেকে জিভে জল আনা সব খাবার যেত লন্ডনের ঘরে ঘরে। রেস্তরাঁটির অন্যতম গ্রাহক ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার চার্লস স্টুয়ার্ট। তিনি রোজ গঙ্গায় স্নান করতেন এবং ভারতীয় পোশাক পরতেন। খেতেন হুঁকো। পরিচিত ছিলেন হিন্দু স্টুয়ার্ট নামেও। গুজব ছিল, ১৬টি স্ত্রী ও হারেম ছিল তাঁর।

দিন মাহমেদ। নিজস্ব চিত্র

কিন্তু সাফল্যের শিখরে উঠলেও ক্রমে অবস্থা পড়তে শুরু করে রেস্তরাঁটির। কারণ, এটি চালানোর জন্য প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থের। এ ছাড়া পোর্টম্যান স্কোয়ারের অভিজাত ও ধনী নবাবরা নিজেদের বাড়ির রান্নার জন্য ওই রেস্তরাঁর ভারতীয় ও এক সময়ে ভারতে কাজ করেছেন এমন ইউরোপীয় বাবুর্চিদের কাজে রাখতে শুরু করেন। যার জেরে বিপাকে পড়ে মাহমেদের রেস্তরাঁ। অর্থকষ্টের মুখে ১৮১১ সালে সেটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি। ১৮১২ সালে সর্বস্বান্ত হন মাহমেদ। ১৮৩৩ পর্যন্ত রেস্তরাঁটি খোলা ছিল অন্য মালিকের অধীনে।

রেস্তরাঁটি বেচে দিয়ে ব্রাইটনে চলে যান মাহমেদ। সেখানে চালু করেন একটি ‘বাথ হাউস’। সেটিও ছিল ভারতীয় নবাবি ঘরানার গোসলখানা। মাথার মালিশ থেকে সুগন্ধি-পরিচর্যা তথা অ্যারোমাথেরাপির ব্যবস্থা ছিল সেখানে। প্রিন্স অব ওয়েলস যেতে পছন্দ করতেন সেখানে।

বিলেতে ভারতীয় রেস্তরাঁর ব্যবসায় নিজে হার মানতে বাধ্য হলও মাহমেদই কিন্তু পথ দেখিয়েছেন। ভারতীয় কারি এখন ব্রিটেনে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। মাহমেদের সেই ‘দ্য হিন্দোস্তানি কফি হাউস’ই এখানে বহু সফল ভারতীয় রেস্তরাঁর অনুপ্রেরণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE