কৃষিপণ্য, রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক প্রস্তুতকারী সংস্থা মনসান্টোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ‘বিষ’ ছড়ানোর অভিযোগ উঠছিল। এ বার এক মামলায় মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাটিকে ৩০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে বলল সান ফ্রান্সিসকোর আদালত।
মামলাটি করেছিলেন ডেয়ন জনসন নামে ক্যালিফোর্নিয়ার এক বাগানের মালি। ২০১৪-য় ক্যানসার ধরা পড়ে জনসনের। নন-হজকিন্স লিম্ফোমা। মামলার নথিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, বেনিসিয়া স্কুলে আগাছানাশক হিসেবে জনসন মনসান্টোর তৈরি ‘রাউন্ডআপ’-ই ব্যবহার করতেন। এতে গ্লাইফোসেট নামে যে উপাদানটি রয়েছে তা থেকেই ক্যানসার ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ জনসনের আইনজীবীর। গ্লাইফোসেট নিয়ে মার্কিন মুলুকে এটাই প্রথম মামলা বলেও জানান তিনি।
টানা আট সপ্তাহের শুনানি শেষে শুক্রবার এই মামলার রায় দিতে গিয়ে সান ফ্রান্সিসকোর আদালত জানায়, আগাছানাশক ‘রাউন্ডআপ’ কিংবা ‘রেঞ্জার’ বিপজ্জনক জেনেও ক্রেতাদের এ নিয়ে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে মনসান্টো। ক্ষতিপূরণ তাই দিতেই হবে। এ দিন শুনানির সময়ে কোর্টরুমেই ছিলেন বছর ছেচল্লিশের জনসন। রায় শুনে মার্কিন বিচারব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আশা রাখব, দেশ-বিদেশের সবাই এই ক্ষতিপূরণ পাবে। এমন বিষ যেন ভবিষ্যতে আর কেউ না ব্যবহার করেন।’’
জনসন ও তাঁর পরিবারকে সহানুভূতি জানালেও মনসান্টো কিন্তু আদালতের এই রায় মানতে নারাজ। কোর্টরুম থেকে বেরিয়ে সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট প্যাট্রিজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কোথাও নির্ঘাত একটা ভুল হচ্ছে।’’ গ্লাইফোসেটকে ক্যানসারের কারণ বলেও মানতে চাইছে না মনসান্টো। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করবে সংস্থাটি।
আগামী দিনে তাই গ্লাইফোসেট বিতর্ক আরও মাথাচা়ড়া দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ২০১৫-য় ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশনের ক্যানসার এজেন্সি কাঠগড়ায় তোলে গ্লাইফোসেটকে। আমেরিকার পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা যদিও বারবার বলে এসেছে, সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করলে গ্লাইফোসেট নিরাপদ।
যা নিয়ে পরে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তোলেন। সান ফ্রান্সিসকোর আদালতে রায় ঘোষণার পরেই এ দিন জনসনকে জড়িয়ে ধরেন পরিবেশকর্মী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। তাঁর কথায়, ‘‘এই রায় মনসান্টোর কাছে একটা বড় বার্তা। ব্যবসার নামে বিষ ছড়ানোর ধান্দা এ বার বন্ধ হোক।’’
মনসান্টো তবু লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আদালতের একটা রায়ে কিন্তু বিজ্ঞান বদলে যাবে না। আমাদের আগাছানাশক সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সর্বাধিক প্রচলিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy