Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

৬৮ বছর পার, ছেলেকে দেখতে মরিয়া লি কেউম

সোমবার যুদ্ধে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলি মিলিত হবে উত্তর কোরিয়ার মাউন্ট কুমগাং রিসর্টে। যদিও সংখ্যায় তারা খুবই কম। আবেদনকারী ৫৭ হাজার। নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৯৩ জন।

লি কেউম সেওম।

লি কেউম সেওম।

সংবাদ সংস্থা
সোল শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা ৬৮ বছর আগে। সাং চোলে তখন চার বছরের শিশু। কোরিয়ার যুদ্ধ দেশটার পাশাপাশি আলাদা করে দিয়েছিল মা-ছেলেকেও। হাজার হাজার শরণার্থীর সঙ্গে পা মিলিয়ে একরত্তি মেয়েকে নিয়ে দক্ষিণে পাড়ি দিয়েছিলেন লি কেউম সেওম, স্বামী-ছেলেকে দেশের অন্য প্রান্তে ফেলে। কোরিয়ার যুদ্ধে আলাদা হয়ে যাওয়া আরও কয়েক হাজার পরিবারের মতোই।

আশির দশকে সেই পরিবারগুলিকেই মেলাতে উদ্যোগী হয়েছিল রেডক্রস ও সরকারি সংবাদমাধ্যম কেবিএস। এখনও পর্যন্ত ২০ দফায় পুনর্মিলন হয়েছে। তবে দুই দেশের অশান্তির জেরে ২০১৫ সালে থমকে গিয়েছিল উদ্যোগ। গত এপ্রিলে এই সংক্রান্ত ঐতিহাসিক চুক্তিতে সই করে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তার পর ফের সোমবার যুদ্ধে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলি মিলিত হবে উত্তর কোরিয়ার মাউন্ট কুমগাং রিসর্টে। যদিও সংখ্যায় তারা খুবই কম। আবেদনকারী ৫৭ হাজার। নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৯৩ জন।

১৯৫০ সালের জুনে যুদ্ধ বাধে কোরিয়ায়। একদিকে আমেরিকা অধিকৃত দক্ষিণ আর অন্যদিকে সোভিয়েত সমর্থিত উত্তর। অধুনা উত্তর কোরিয়ার হ্যামগিয়ং প্রদেশের বাসিন্দা লি-র তখন ভরা সংসার। তাঁদের প্রত্যন্ত গ্রামে তখনও .যুদ্ধের খবর পৌঁছয়নি। দলে দলে ঘর ছেড়ে পালানো শরণার্থীদের থেকে প্রথম যুদ্ধের খবর পান তাঁরা। খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গরুর গাড়িতে তুলে এক কাপড়ে রওনা হয় লিয়ের পরিবারও।

৯৭ বছরের এই বৃদ্ধা বলেছেন, ‘‘রাস্তায় যেতে যেতে ছোট মেয়েটা দুধ খেতে চায়। এত লোকের মধ্যে কী ভাবে সম্ভব?’’ ছোট একটা নালা পেরিয়ে মেয়েকে নিয়ে আড়ালে যান লি। ছেলে সাং চোলকে রেখে যান স্বামীর কাছে। যখন তিনি ফেরেন, তখন সবাই উধাও। স্বামী-ছেলের খোঁজে হাঁটতে শুরু করেন লি। এক সময়ে দেখা হয় শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে। তাঁরাও তখন হন্যে হয়ে লি-কেই খুঁজছেন। জানান, ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে খুঁজতে বেরিয়েছেন লিয়ের স্বামী। সেই শেষ। এর পর আর ছেলে বা স্বামীকে দেখেননি লি।

ক্রমে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে তখন আশ্রয় নিয়েছেন লি-রা। বুলেটের আওয়াজে ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছে গোটা পরিবার। এক সময়ে ঘোষণা হয়, যুদ্ধ শেষ। দক্ষিণগামী ট্রেনে চেপে বাকি শরণার্থীদের সঙ্গে একটি বন্দরে হাজির হয় পরিবারটি। সেখান থেকে নৌকা ধরে যান গওজে দ্বীপে। সেখানে যেতে গিয়ে ফের আলাদা হয়ে যান লি। তবে এ বার আর মেয়েকে কোলছাড়া করেননি তিনি।

শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে সেই দ্বীপে থাকতে শুরু করেন লি। বছরখানেক বাদে তাঁর মতোই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দেশছাড়া এক শরণার্থীকে বিয়ে করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একসময় ছেলের মুখটাও ঝাপসা হয়ে আসে। আমি যে ওকে আবার দেখতে পাব, ভাবিনি।’’ চার বছরের সেই ছেলে এখন বাহাত্তর।

পুনর্মিলনের জন্য নির্বাচিত ৯৩ জনের মধ্যে রয়েছেন হাম সেওং-চান। ৬ বছর বয়সে আলাদা হয়েছেন ভাইয়ের থেকে। বলেছেন, ‘‘সব সময়ে ভেবেছি মারা যাওয়ার আগে যেন একবার ভাইকে দেখতে পাই।’’ কিছু দিন আগে রেড ক্রস থেকে ফোন পান, প্রথম দফায় নির্বাচিত ৫০০ জনের মধ্যে তিনিও আছেন। ‘‘ভাই চিনতে পারবে তো? নিশ্চই পারবে। একই রক্ত’’, প্রত্যয় ৮৬ বছরের চানের মুখে। অবশ্য তাঁদের মতো ভাগ্যবান নন জাং কিয়া-হায়উন। ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ২১ বার আবেদন করেছেন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য। সুযোগ আসেনি। রিপোর্ট বলছে, এ ভাবে প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই মারা গিয়েছেন ৭৫ হাজার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Seoul South Korea War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE