Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জনজটে ২০ মিনিট, ১১ টন আবর্জনা সাফাই এভারেস্টে!

ক্লান্তি ও অক্সিজেনের রসদ ফুরিয়ে আসার মতো আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও  জনজটের জেরে পর্বতারোহীদের একটা বড় অংশকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
কাঠমান্ডু শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০৩:৩৮
Share: Save:

এভারেস্টে ‘জনজট’ পেরিয়ে কোনওমতে কাঠমান্ডুর হাসপাতালে পৌঁছতে পেরেছেন তিনি। বাঁ পায়ে ‘ফ্রস্টবাইট’ নিয়ে এখন হাসপাতালে আমিশা চৌহান। প্রতিকূল আবহাওয়ার ছাপ পড়েছে মুখেও। ২৯ বছরের এই তরুণীকে এভারেস্ট থেকে নামার সময়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। সেটাই তাঁর কাছে ভয়ঙ্কর। অনেককে অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি। বেঁচে ফিরে আমিশা বলছেন, ‘‘পর্বতারোহীরা প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ছাড়া বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গে আরোহণের চেষ্টা করছেন। এই ধরনের পর্বতারোহীদের আটকাতে হবে।’’

ক্লান্তি ও অক্সিজেনের রসদ ফুরিয়ে আসার মতো আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও জনজটের জেরে পর্বতারোহীদের একটা বড় অংশকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে। গত দু’সপ্তাহে ১১ জন প্রাণ হারান। ‘‘এই মরসুমে নেপাল ৩৮১টি পারমিট দিয়েছে এভারেস্টে আরোহণের। অথচ কয়েকশো আরোহীর ঠিকমতো প্রশিক্ষণই হয়নি। তাঁরা যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিজেরা তো নিচ্ছেনই, বিপদে ফেলছেন শেরপাদেরও,’’ বলেছেন আমিশা। তাঁর দাবি, শুধু শেরপাদের উপরে ভরসা করে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই অনেকে চলে আসেন। আমিশার মতে, এ ব্যাপারে যোগ্যতার মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া উচিত সরকারের।

এভারেস্ট-সহ আট হাজারি অন্য সব শৃঙ্গে মৃতের সংখ্যা এই মরসুমে ছুঁয়েছে ২১। এভারেস্টে চারটি মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে শৃঙ্গে অতিরিক্ত ভিড়কেই। ২০১৪-১৫-র পর এ বার ফের এত বেশি মৃত্যু এভারেস্টে।

চতুর তামাং (৪৫) নামে এক শেরপা জানান, এভারেস্ট ছোঁয়ার শেষ ধাপে তিনি ১০০-রও বেশি লোকের জমায়েত দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। শীর্ষ ছোঁয়ার মুখে সঙ্কীর্ণ সেই অংশকে (রিজ) এমনিতেই ‘মৃত্যু অঞ্চল’ বলা হয়। মানুষের শরীর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না সেখানে। সামিট করে যাঁরা নামছেন, তাঁরা পথ ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান তাঁদের কাছে, যাঁরা সে দিকে তখন এগোনোর চেষ্টা করছেন। ফেরার পথে অনেকেরই অক্সিজেনের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। চতুরের আশঙ্কা, এ বছরই ব্যবস্থা না নিলে আগামী বছর এই ভিড় সামলানো মুশকিল হবে।

এর মধ্যে গত কাল নেপাল সরকার এভারেস্টে ১১ টনের আবর্জনা পরিষ্কারের অভিযান শেষ করেছে। দশকের পর দশক ধরে জমে থাকা ওই আবর্জনার স্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। ১২ জন দক্ষ শেরপাকে নিয়ে এই অভিযান শুরু হয়। নেপালের পর্যটন বিভাগ জানায়ে, আবর্জনার পাশাপাশি চারটি মৃতদেহও উদ্ধার হয়। গত সপ্তাহে সেগুলি কাঠমান্ডু নিয়ে আসা হয়েছে। অন্তত ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে আবর্জনা সাফ করতে। চিনও এভারেস্টের উত্তর অংশ পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছে বলে দাবি নেপাল সরকারের।

নেপালের পর্যটন দফতরের তরফে দান্দু রাজ ঘিমিরে বলেন, ‘‘অসাধারণ এই শৃঙ্গের সৌন্দর্য রক্ষায় নেপাল যথেষ্ট সক্রিয় নয় বলে সমালোচনা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক স্তরে। পরিবেশবিদরাও উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন। এই অভিযানের পরেও সরকার এভারেস্টে মানব বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাবে।’’ ৭ টন আবর্জনা উদ্ধার হয়েছে এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে। আর ৪ টন আবর্জনা মিলেছে এভারেস্টমুখী গ্রাম লুকলা ও নামচে বাজার থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Mount Everest Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE