Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওলির সফরে ভারত-নেপাল সম্পর্কের জট খুলবে?

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবেশী-নীতিতে নেপালকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু কার্যত দেখা গেল কাঠমান্ডু প্রশ্নেই সাম্প্রতিক অতীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে সাউথ ব্লককে।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৮:১৮
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবেশী-নীতিতে নেপালকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু কার্যত দেখা গেল কাঠমান্ডু প্রশ্নেই সাম্প্রতিক অতীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে সাউথ ব্লককে।

আপাতত সেই মেঘ কাটল। ১৩৫ দিনের বিক্ষোভ এবং বনধ উঠিয়েছে মদেশীয় সম্প্রদায়। নেপালের পার্লামেন্টও সংবিধান সংশোধনে রাজি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামি ১৯ তারিখ ভারত সফরে আসছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম নয়াদিল্লি তথা ভারত সফর। বিদেশমন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক অচলাবস্থার পর আসন্ন সফরটি দু’টি দেশের জন্যই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছে দু’বছর হতে চলল। এটাও ঘটনা যে এর মধ্যে আইকে গুজরালের পর প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাঠমান্ডু সফরে গিয়েছিলেন মোদী। এক বছর আগে সে দেশে ভূমিকম্পের সময়ে চিনের সঙ্গে পাল্লা কষে ত্রাণকার্যে ঝাঁপিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু এতদসত্ত্বেও নেপালের সঙ্গে কাঙ্খিত অগ্রগতি ঘটেনি। উল্টে সে দেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব বেড়েছে। বিদেশমন্ত্রকসূত্রের মতে, ওলির সফরে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে, কাঠমান্ডুতে বিদ্যুৎ, শিক্ষা, কৃষি, কৃষিপণ্য, পর্যটন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় মাপের বিনিয়োগের পথে হাঁটবে ভারত।

সম্প্রতি দু’দেশের সম্পর্কে তলানিতে থেকে তুলে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল রচনার প্রথম ধাপ হিসাবে ওলির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মোদী। মদেশীয় সম্প্রদায় তথা ভারতের চাপ মেনে নিয়ে নেপালের সরকার সে দেশের সংবিধান সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্বভাবতই খুশি মোদী সরকার। আর সেই ইতিবাচক বার্তা সে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার অন্তেষ্টিকার্যে একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদল (যার মধ্যে ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, আনন্দ শর্মা, শরদ যাদবের মত বিভিন্ন দলের নেতারা) নিয়ে কাঠমান্ডু যান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেই সফরেও দু’দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ পথনির্দেশিকা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়।

এটা ঘটনা যে গত পাঁচ মাস ধরে নয়া সংবিধান ঘিরে মদেশীয়দের বিক্ষোভের জেরে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। নয়াদিল্লির যদিও যুক্তি ছিল, নিরাপত্তার কারণে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা নেপাল সীমান্তপথে মাল সরবরাহ করার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। আর তাই এই অচলাবস্থা। কিন্তু নেপালের রাজনৈতিক শিবিরে রটে যায় মদেশীয়দের মাধ্যমে কাঠমান্ডুকে চাপে রাখার জন্যই ভারত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। মদেশীয়দের মাধ্যমে নেপাল-রাজনীতিতে খেলছে ভারত—এমন সমালোচনা দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে করে এসেছে কাঠমান্ডু প্রশাসন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রচারই এতটাই পুষ্টি পেয়েছে যে কয়েকমাস আগে ভারতে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত দীপকুমার উপাধ্যায় সাউথ ব্লককে সাফ জানিয়ে গিয়েছিলেন যে এবার পেট্রোলিয়াম-সহ বিভিন্ন দ্রব্য আমদানির জন্য চিনের দ্বারস্থ হবে কাঠমান্ডু।

চিনের এই ‘তাস’ খেলার পর কূটনৈতিক সক্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয় মোদীর বিদেশমন্ত্রক। অবশেষে তার সুফল মিলতে চলেছে বলে মনে করছেন বিদেশমন্ত্রকের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

agni roy k p sharma oli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE