Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আবার রক্তাক্ত ফ্রান্স, উৎসবের নিসে ‘জঙ্গি’ ট্রাক পিষে মারল ৮৪ জনকে

ফরাসি জাতীয় পতাকায় সুসজ্জিত বিভিন্ন রাস্তা। ভূমধ্যসাগরের গায়ে গা লাগিয়ে ছুটে যাওয়া রাস্তা প্রমনাদ দে আঁগলে অন্য দিনের চেয়েও আলো ঝলমলে। রাতভর উৎসবে মুখর থাকার কথা ছিল গোটা এলাকাটার। কিন্তু উৎসব ততক্ষণে থেমে গিয়েছে। রাস্তার উপর কিছু দূর অন্তর অন্তর বিছিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। শীতল নিঃস্তব্ধতা সাগরতীরে। মাঝে-মধ্যে সেই নিস্তব্ধতা খান খান করে হু হু করে ছুটে যাচ্ছে পুলিশের গাড়ি অথবা অ্যাম্বুল্যান্স। বাকিটা শ্মশানের নৈঃশব্দ।

ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। নিস-এর সৈকতে।

ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। নিস-এর সৈকতে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ১৯:২৩
Share: Save:

ফরাসি জাতীয় পতাকায় সুসজ্জিত বিভিন্ন রাস্তা। ভূমধ্যসাগরের গায়ে গা লাগিয়ে ছুটে যাওয়া রাস্তা প্রমনাদ দে আঁগলে অন্য দিনের চেয়েও আলো ঝলমলে। রাতভর উৎসবে মুখর থাকার কথা ছিল গোটা এলাকাটার। কিন্তু উৎসব ততক্ষণে থেমে গিয়েছে। রাস্তার উপর কিছু দূর অন্তর অন্তর বিছিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। শীতল নিঃস্তব্ধতা সাগরতীরে। মাঝে-মধ্যে সেই নিস্তব্ধতা খান খান করে হু হু করে ছুটে যাচ্ছে পুলিশের গাড়ি অথবা অ্যাম্বুল্যান্স। বাকিটা শ্মশানের নৈঃশব্দ।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর ঠিক এই রকমই দেখাচ্ছিল দক্ষিণ ফ্রান্সের নিস শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়াক-ওয়ে প্রমনাদ দে আঁগলেকে। ওই রাস্তাতেই ঢুকেছিল সাদা ট্রাকটা। ফ্রান্সের জাতীয় দিবস ‘বাস্তিল ডে’ উদযাপনের জন্য গোটা নিস শহরের মধ্যে ওই রাস্তাটাই সবচেয়ে সুন্দর করে সেজে উঠেছিল। গোটা শহরটা যেন ভেঙে পড়েছিল ভূমধ্যসাগরের তীরে। আতসবাজির রোশনাইতে আকাশ আলোয় আলো। অধিকাংশই নিজেদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার পর উৎসব ক্ষেত্র আচমকা বদলে গেল বধ্যভূমিতে। মহম্মদ লহৌয়েজ বোহলেল নামে এক ব্যক্তি একটি অস্ত্র-বোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়ল ভিড়ে ঠাসা রাস্তাটায়। নিরীহ মানুষজনকে রাস্তায় পিষতে পিষতে প্রায় ২ কিলোমিটার ছুটল ট্রাকটা। বিপদ বুঝতে পেরেই পুলিশ ট্রাকটাকে থামানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছিল। চাকায় এবং উইন্ড-স্ক্রিনে গুলি চালিয়ে যত ক্ষণে পুলিশ ট্রাকটি থামিয়েছে, তত ক্ষণে প্রায় ২০০ জন চাকায় পিষ্ট। ট্রাক থেকে নেমেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে ঘাতক বোহলেল। পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। গুলির লড়াইই অবশ্য বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কয়েক মিনিটের মধ্যে ধরাশায়ী হয় হামলাকারী। কিন্তু তত ক্ষণে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী রাস্তাটার বিভিন্ন অংশ থেকে মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করেছে। পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দল যেখানে পৌঁছচ্ছে, সেখান থেকেই উদ্ধার হচ্ছে নিথর দেহ। রক্তাক্ত আরও অনেকে।

ভারতীয় সময় অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৮৪। জখম শতাধিক। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ফরাসি প্রশাসনিক সূত্রের খবর।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরেও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। হামলার পর নিসের বিস্তীর্ণ এলাকা চূড়ান্ত বিভ্রান্তি আর বিশৃঙ্খলার কবলে চলে গিয়েছিল। মানুষ উদভ্রান্তের মতো দৌড়চ্ছিলেন। কেউ জেনে, কেউ না জেনে। যাঁরা ঘাতক ট্রাকটির হত্যালীলা দেখেছিলেন, তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়চ্ছিলেন। আর বাকিরা দৌড়তে শুরু করেন পুলিশের নির্দেশে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বললেন, ‘‘পুলিশ শুধু বলল, বাঁচতে হল দৌড়তে থাকুন, এই রাস্তা ছেড়ে পালিয়ে যান। আমরা কিছুই জানতাম না। শুধু দেখলাম অনেকে দৌড়ে আসছেন আমাদের দিকে। পুলিশ আমাদেরও দৌড়তে বলছে। তাই আমরাও পালাতে শুরু করলাম। কত দূর দৌড়ে যেতে পারলে বাঁচব, বুঝতে পারছিলাম না।’’ পরিস্থিতি এক সময় এমন হয়েছিল যে নিসের রাস্তায় অনেক মানুষের পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।

আরও পড়ুন

দেখুন কী ভাবে কোন পথে ট্রাক নিয়ে হামলা

যে পথে এগোল ট্রাক

এই ঘটনার দায় কোনও জঙ্গি সংগঠন আনুষ্ঠানিক ভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্তও স্বীকার করেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিস হামলার সাফল্য উদযাপন করে বিভিন্ন পোস্ট ভেসে উঠতে শুরু করে শুক্রবার রাত থেকেই। ফরাসি পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীর পরিচয় বিশদে জানা গিয়েছে। তার জন্ম তিউনিশিয়ায়। পরে সে ফ্রান্সে আসে এবং সে দেশের নাগরিকত্বও পায়। ছোটখাট বেশ কিছু অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ তার নামে আগেও ছিল। সে জন্য মহম্মদ লহৌয়েজ বোহলেল নিসের পুলিশের নজরে ছিল অনেক দিন ধরেই। তবে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে তার নাম আগে কখনও জড়ায়নি। তাই ফরাসি গোয়েন্দাদের নজরে সে কোনও দিনই ছিল না। আইএস-এর ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়ে সে হামলা চালাল, না অন্য কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্য নানা মাধ্যমে জঙ্গি প্রচারে প্রভাবিত হয়ে নিজে নিজেই হামলা চালানোর প্রবণতা সম্প্রতি দেখা দিয়েছে তরুণ প্রজন্মের একাংশের মধ্যে। ৩১ বছরের বোহলেল, সে রকম কোনও ঘটনা ঘটাল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

ট্রাকও এখন অস্ত্র! হামলায় নিত্যনতুন কৌশল বদলাচ্ছে আইএস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওয়াশিংটনে বিবৃতি প্রকাশ করে নিস হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। ওবামা বলেছেন, ‘‘ফ্রান্স আমাদের সবচেয়ে পুরনো মিত্র। এই হামলার জবাব দিতে আমরা সব রকম ভাবে ফ্রান্সের পাশে থাকব।’’ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং প্রধানমমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নিস হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। একই সুরে ফ্রান্সের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযান আরও প্রবল করার ডাক দিয়েছে রাশিয়াও।ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওঁলা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওঁলা ঘোষণা করেছেন, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়ানো হচ্ছে। গত নভেম্বরে প্যারিসে জঙ্গি হামলায় ১৩০ জনের প্রাণ যাওয়ার পরে দেশের বিভিন্ন অংশে সামরিক তৎপরতা যতটা বৃদ্ধি করা হয়েছিল, এ বার সেই তৎপরতা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ফ্রান্সের সরকার। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওঁলার ঘোষণা, ইরাক এবং সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযান আরও তীব্র করবে ফ্রান্স।

ছবি: এএফপি।

নিস শহরে হামলার ভিডিও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bastille Day celebrations nice France
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE