Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেদের খুন করে কৃষ্ণাঙ্গ খুনির গল্প মায়ের! 

এক কৃষ্ণাঙ্গ বন্দুকবাজ গাড়ি সমেত তার দুই শিশুপুত্রকে আটক করেছে বলে দাবি করেছিল সাউথ ক্যারোলাইনার ইউনিয়ন কাউন্টির বাসিন্দা সুজ়ান স্মিথ। ১৯৯৪ সালের ২৫ অক্টোবরের সেই ঘটনার বিষয়ে টিভির পর্দায় সুজ়ানের কান্না দেখে তার সন্তানদের অপহরণের বিবরণ বিশ্বাসও করেছিলেন সকলে।

সুজ়ান স্মিথ

সুজ়ান স্মিথ

সংবাদ সংস্থা
ফ্লোরেন্স শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

সিকি শতক আগের ঘটনা। কিন্তু আজও মনে করলে শিউরে ওঠেন সাউথ ক্যারোলাইনার ইউনিয়ন কাউন্টির প্রবীণ বাসিন্দারা। সে সময়কার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন নতুন করে সামনে এনে সেই ঘটনার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে একটি প্রথম সারির মার্কিন সংবাদপত্র।

এক কৃষ্ণাঙ্গ বন্দুকবাজ গাড়ি সমেত তার দুই শিশুপুত্রকে আটক করেছে বলে দাবি করেছিল সাউথ ক্যারোলাইনার ইউনিয়ন কাউন্টির বাসিন্দা সুজ়ান স্মিথ। ১৯৯৪ সালের ২৫ অক্টোবরের সেই ঘটনার বিষয়ে টিভির পর্দায় সুজ়ানের কান্না দেখে তার সন্তানদের অপহরণের বিবরণ বিশ্বাসও করেছিলেন সকলে। কিন্তু কয়েক দিন পরেই সেই মনোভাব বদলে যায় তীব্র ঘৃণায়। ‘অপহরণের’ ৯ দিনের মাথায় গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, তিন বছরের ছেলে মাইকেল এবং ১৪ মাসের আলেকজ়ান্দারকে খুন করেছে মা সুজ়ান নিজেই। আর সেটা আড়াল করতেই কৃষ্ণাঙ্গ বন্দুকবাজের গল্প ফেঁদেছিল সে।

কী ভাবে তার দুই শিশু সন্তানকে অপহরণ করা হল, তা জানতে চাওয়া হলে টিভি ক্যামেরার সামনে সুজ়ান জানিয়েছিল, তার গাড়িটি ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকার সময় হঠাৎই এক কৃষ্ণাঙ্গ বন্দুকবাজ জোর করে তাতে উঠে পড়ে গাড়িটি বেশ কিছুটা চালিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। তার পরে তাকে জোর করে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেয় ওই কৃষ্ণাঙ্গ বন্দুকবাজ। তখন গাড়ির পিছনের আসনেই বসেছিল তার দুই ছেলে। চোখের জল মুছতে মুছতে টিভির পর্দায় সুজ়ান বলেছিল, ‘‘আমার মনের অবস্থা আমি বলে বোঝাতে পারব না... আমি ঘুমোতে পারছি না, খেতে পারছি না। ওদের কথা ভাবা ছাড়া আর কিছু করতে পারছি না।’’

ঘটনার মোড় ঘুরতে বেশি সময় লাগেনি। মাত্র ন’দিনের মাথায় জন ডি লং লেক থেকে একটি গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়িটির পিছনের আসন থেকে দু’টি শিশুপুত্রের দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে আসে একটি চিঠি। সুজ়ান যে সংস্থায় কাজ করত, সেই সংস্থার কার্যনির্বাহী আধিকারিকের ছেলে চিঠিটি লিখেছিলেন সুজ়ানকে। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি শুধু তোমার সঙ্গে থাকতে চাই। সঙ্গে কোনও পরিবার চাই না।’ তদন্ত যত এগোয়, পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে— কোনও কৃষ্ণাঙ্গ বন্দুকবাজ নয়, ওই দুই শিশুকে খুন করেছে তাদের মা-ই!

পরে নিজের দুই শিশু সন্তানকে খুনের কথা স্বীকারও করে নেয় সুজ়ান। পুলিশ জানায়, ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ওই মহিলা জানিয়েছিল, দুই ছেলেকে গাড়ির পিছনের আসনের সঙ্গে সিটবেল্ট দিয়ে বেঁধে রেখেছিল সে। প্রথমে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনাই ছিল বছর তেইশের সুজ়ানের। তবে লেকের কাছে পৌঁছনোর পরে নিজে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দুই শিশুপুত্র সমেত গাড়িটি জলে গড়িয়ে দেয় সে। যদিও এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য ছিল, এই হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না।

হত্যাকারী হিসেবে সুজ়ানের নাম সামনে আসায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় আফ্রো-মার্কিন সম্প্রদায়। তাদের বক্তব্য ছিল, যে কৃষ্ণাঙ্গের বিবরণ দিয়েছিল সুজ়ান, তার সঙ্গে কারও চেহারার মিল পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার সঙ্গে ১৯৮৯ সালের একটি ঘটনার তুলনাও টানেন অনেকে। সে বারও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে খুন করে সেই দায় এক কৃষ্ণাঙ্গের নামে চাপিয়েছিল খুনি। সত্যি সামনে আসতে আত্মহত্যা করে সাদা চামড়ার ওই যুবক।

আদালতে সুজ়ানকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ হিসেবে তুলে ধরেন সরকার পক্ষের আইনজীবী টমি পোপ। শুনানির সময়ে হাতে মাইকেল এবং আলেকজ়ান্দারের ছবি নিয়ে পোপ তাদের মৃত্যুকালীন অনুভূতিগুলোর বিবরণ দিতে থাকেন। বলেন, সুজ়ান এমন এক জন অভিনেত্রী, যে যখন ইচ্ছে চোখের জল ফেলতে পারে! সে এক জন স্বার্থপর মা। আইনজীবীরা তার জন্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি করলেও শুনানি শেষে সুজ়ানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। ৩০ বছরের আগে প্যারোলের সুযোগ দেওয়া হবে না তাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায় শুনে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল সুজ়ান। তবে মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মাইকেল ও আলেকজ়ান্দারের বাবা এবং সুজ়ানের প্রাক্তন স্বামী ডেভিড স্মিথ। তিনি বলেন, ‘‘মাইকেল আর আলেকজ়ান্দারকে ভুলতে পারব না। ভুলতে পারব না যে, সুজ়ান ওদের সঙ্গে কী করেছে। ওর মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় আমি এবং আমার পরিবার হতাশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Violation Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE