ইরানের পার্লামেন্ট ভবন, এখনও ভিতর থেকে গোলাগুলির শব্দ আসছে বলে খবর। ছবি: এএফপি।
এ বার ইসলামি বিপ্লবের দেশেই হানা দিল ইসলামিক স্টেট বা আইএস। আক্রান্ত ইরান। জোড়া সন্ত্রাসবাদী হানায় কেঁপে উঠল শিয়া প্রধান দেশটির রাজধানী তেহরান। প্রথম হামলাটি হয়েছে ইরানের পার্লামেন্টে। অন্তত তিন জন সশস্ত্র জঙ্গি পার্লামেন্টে ঢুকে বেপরোয়া গুলি চালিয়েছে বলে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। এই হামলার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আয়াতোল্লা খোমেইনির সমাধিস্থলে হামলা হয়েছে। এক জঙ্গি সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। জঙ্গিরা সেখানে গোলাগুলিও চালিয়েছে বলে খবর।সন্ধ্যার পর তেহরান জঙ্গিদের কবলমুক্ত হয়। এই হামলায় মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বুধবার সকালে পার্লামেন্টেই প্রথমে হামলা হয়েছিল। ইরানি পার্লামেন্টের মধ্যে যখন নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াই চলছে, তখনই হামলা হয় ইরানে ইসলামি বিপ্লবের উদ্যোক্তা তথা প্রয়াত শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনির সমাধিস্থলে। আলি জাফরজাদেশ নামে এক এমপি সে দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সিকে (আইআরএনএ) জানান, তিনি তিন জঙ্গিকে পার্লামেন্টে হামলা চালাতে দেখেছেন। দু’জনের হাতে ছিল কালশনিকভ। এক জনের হাতে কোল্ট পিস্তল ছিল। জঙ্গিদের বেপরোয়া গুলিতে অনেকে জখম হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
আয়াতোল্লা খোমেইনির সমাধিস্থল, এখানেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। ছবি: এএফপি।
পার্লামেন্টের ভিতরে জঙ্গিরা ভিভিআইপি-দের পণবন্দি বানানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় বলে জানা গিয়েছে। পার্লামেন্ট চত্বরে দীর্ঘক্ষণ ইরানি বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলি বিনিময় চলে। সন্ধ্যার পর ইরানের প্রশাসন জানিয়েছে, সব জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।
পার্লামেন্ট চত্বর— ভিতরে গুলির লড়াই, বাইরে উৎকণ্ঠা। ছবি: রয়টার্স।
মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ গত কয়েক বছর ধরেই একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার। ইরাক, সিরিয়া নিরন্তর যুদ্ধে বিধ্বস্ত। নাশকতায় বিধ্বস্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, লিবিয়া, মিশরের মতো দেশও। কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানকে সাম্প্রতিক অতীতে খুব বড় সন্ত্রাসবাদী হানার শিকার হতে হয়নি। এ বার জঙ্গিরা বুঝিয়ে দিল, তেহরানও আর নিরাপদ নয়। আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ইরানে এই প্রথম হামলা চালাল আইএস।
আরও পড়ুন: কাবুলে ভারতীয় দূতের বাড়িতে রকেট হানা
গত শতাব্দীর গোড়ায় তুরস্কের মতোই মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন ইসলামি দেশ উদারনীতির পথে হাঁটতে শুরু করেছিল গোঁড়ামি ছেড়ে। কিন্তু ইসলামি দুনিয়ার ইতিহাস তার পর আবার একটা বাঁক নেয় ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর। ইরানে সেই ইসলামি বিপ্লবের প্রধান ছিলেন রুহোল্লা খোমেইনি, যিনি বিশ্বে বেশি পরিচিত আয়াতোল্লা খোমেইনি নামেই। গোঁড়া মতাদর্শের খোমেইনিই মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় ফের কট্টরবাদী ইসলাম চারিয়ে দিয়েছিলেন। অনেকের মতে, ধর্মীয় উগ্রতার সেই নবজন্ম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করেছিল পরবর্তীকালে ছড়িয়ে পড়া ইসলামি সন্ত্রাসবাদের। সন্ত্রাসের আগুনে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বিরাট অংশ এত দিন পুড়লেও, ইরান মোটামুটি নিরাপদেই ছিল। কিন্তু বুধবারের দুপুর দেখিয়ে দিল, মধ্য এশিয়ায় কট্টরবাদের স্রোত ফিরিয়ে আনা ইরান এ বার নিজেই আক্রান্ত হল সন্ত্রাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy