সমাবেশে হাজির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। রয়টার্স
হাজারো মুখের ভিড়— ভাষা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ মিলেমিশে একাকার। আল-নুর মসজিদের উল্টো দিকে হ্যাগলে পার্কে আজ মানুষের ঢল। ঠিক এক সপ্তাহ আগে শ্বেত-সন্ত্রাসে নিহতদের স্মরণে প্রার্থনা করল গোটা দেশ। ইসলামকে শ্রদ্ধা জানাতে হিজাবে মাথা
ঢেকে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন ও আরও বহু অ-মুসলিম মহিলা।
গত শুক্রবার নমাজ চলাকালীন আল-নুর মসজিদে ঢুকে ৫০ জনকে খুন করেছিল শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি ব্রেন্টন ট্যারান্ট। চাপ-চাপ রক্ত, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের আওয়াজ, স্বজন হারানোর হাহাকার পেরিয়ে ক’টা দিন কেটে গিয়েছে মাঝে। ঠিক দুপুর দেড়টা নাগাদ দু’মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় প্রার্থনা। ওই সময়টাতেই মসজিদে হত্যালীলা চালিয়েছিল জঙ্গি। সে দিনের হামলা থেকে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, যাঁরা জখম হয়েছিলেন, প্রিয়জন হারানো বহু মুখ যোগ দিয়েছিলেন আজকের সমাবেশে। হুইলচেয়ারেই এসেছেন এক জন। সে দিন আল-নুর মসজিদে ছিলেন তিনি। গুরুতর জখম হয়েছিলেন। ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি এখনও। কান্নাভেজা মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে আল-নুর মসজিদের ইমাম গামাল ফৌদা বললেন, ‘‘দেশের মন ভেঙেছে, দেশটা কিন্তু ভেঙে পড়েনি।’’
ফৌদার কথায়, ‘‘ওই জঙ্গি চেয়েছিল তার অশুভ মতাদর্শে দেশটাকে টুকরো টুকরো করে দিতে। কিন্তু আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, নিউজ়িল্যান্ডকে ভাঙা যাবে না। আমাদের মন ভেঙেছে। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। এক সঙ্গেই আছি। আমরা লক্ষ্যে স্থির, কাউকে ভাঙতে দেব না।’’ হাততালিতে ফেটে পড়ে বিশ হাজার মানুষের জমায়েত। যেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জয়ের উচ্ছ্বাস!
একই কথা শোনা গেল প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্নের মুখেও। বললেন, ‘‘দয়া, সমবেদনা, সহানুভূতি একই শরীরে থাকে। কোনও একটি অংশ জখম হলেই গোটা শরীরে যন্ত্রণা হয়। আমরাও এক। গোটা দেশ শোকার্ত।’’ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মুসলিম সম্প্রদায় যখন প্রার্থনা শুরু করল, বাকিরা তখন তাঁদের ঘিরে দাঁড়ালেন। মহিলারা অনেকেই মাথা ঢাকলেন ওড়নায়। জুতো খুলে খালি পায়ে দাঁড়ালেন ছেলেরা।
প্রার্থনার পরে আজই ২৬ জনকে সমাহিত করা হয়। বাকিদের আগেই ওই কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ৩ বছরের মৌয়াদ ইব্রাহিমকেও আজ শায়িত
করা হয়। ছোট্ট ইব্রাহিম সে দিন বাবার হাত ছাড়িয়ে জঙ্গির দিকে ছুটে গিয়েছিল। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার শরীরটা।
আতঙ্কের ঘোর কাটছে না ইসমাত ফতিমার। ক্রাইস্টচার্চেরই বাসিন্দা তিনি। বললেন, ‘‘ভুলতে পারছি না, এক সপ্তাহ আগে এখানেই জঙ্গি-তাণ্ডব চলেছিল।’’ পুলিশের ব্যারিকেডে ঘেরা, ফুলের স্তূপের আড়ালে মসজিদের দরজাটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা ভেবেই ভাল লাগছে, আমরা এক। কেউ ভাঙতে পারেনি।’’
ক্রাইস্টচার্চের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সি ফাহিম ইমাম এখন অকল্যান্ডে থাকেন। শুক্রবারের সমাবেশে যোগ দিতে শহরে এসেছিলেন। বললেন, ‘‘সত্যিই অকল্পনীয়। কী ভাবে গোটা দেশ, সমস্ত সম্প্রদায় এক জোট হয়েছে। মন ভরে গেল!’’ জানালেন, বিমান থেকে নেমে দেখেন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে একটি লোক। তাতে লেখা ‘জানাজ়া’ (শেষকৃত্য)। লোকটি জানান, প্রার্থনা সমাবেশে যাঁরা যোগ দিতে চান, তাঁদের বিনামূল্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বললেন, ‘‘ক্রাইস্টচার্চে নেমে একটা অদ্ভুত ভালবাসা অনুভব করলাম এ বার। মুসলিম হিসেবে এত গর্ব আগে কখনও অনুভব করিনি। নিজেকে নিউজ়িল্যান্ডবাসী বলতে পেরেও আমি খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy