Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জেরুসালেম: অনড় ট্রাম্প, নিরপেক্ষ দিল্লি

ডোনাল্ড ট্রাম্প যা-ই বলুন না কেন, নয়াদিল্লি জানিয়েছে, প্যালেস্তাইন নিয়ে তারা পুরনো অবস্থানেই অনড় থাকবে। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘‘তৃতীয় কোনও দেশ ঠিক করে দেবে না, আমরা কোন বিষয়টাকে কী ভাবে দেখব।’’

প্রতিবাদী: জ্বলছে প্যালেস্তাইন। পশ্চিম ভূখণ্ডের রামাল্লার কাছে ইজরায়েলির সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ। ছবি: রয়টার্স।

প্রতিবাদী: জ্বলছে প্যালেস্তাইন। পশ্চিম ভূখণ্ডের রামাল্লার কাছে ইজরায়েলির সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

ডোনাল্ড ট্রাম্প যা-ই বলুন না কেন, নয়াদিল্লি জানিয়েছে, প্যালেস্তাইন নিয়ে তারা পুরনো অবস্থানেই অনড় থাকবে। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘‘তৃতীয় কোনও দেশ ঠিক করে দেবে না, আমরা কোন বিষয়টাকে কী ভাবে দেখব।’’

ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় টালমাটাল পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপও। গতকাল ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিচ্ছে আমেরিকা। এ-ও জানিয়ে দেন, খুব শীঘ্রই তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে মার্কিন দূতাবাস। ট্রাম্পের মন্তব্যে ফুঁসছে প্যালেস্তাইন। আরব দেশগুলো প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে এমন উস্কানিমূলক মন্তব্যের অর্থ কী?

জেরুসালেম নিয়ে দশকের পর দশক উত্তাল হয়ে রয়েছে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের সম্পর্ক। অভিযোগ, ১৯৮০ সালে জবরদখল করে জেরুসালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে ইজরায়েল। সেটা মানেিন প্যালেস্তাইন, বাকি দুনিয়াও।

ট্রাম্প এ দিনও নিজের অবস্থানে অনড়। বলেছেন, ‘‘আমেরিকার পক্ষে যেটা সবচেয়ে ভাল, প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েলের শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যেটা সঠিক, সেটাই করা হয়েছে।’’ প্রেসিডেন্টের নির্দেশে ইতিমধ্যেই তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে দূতাবাস সরানোর প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু হয়ে গিয়েছে, জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশ সচিব রেক্স টিলারসন।

আরও পড়ুন: ভোটের গুজরাত যেন বদলের বাংলা

ট্রাম্পের বক্তব্য, গত দু’দশকে তাঁর পূর্বসূরিরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, সেটা তাঁদের অক্ষমতা। সেই ১৯৯৫ সালে ‘জেরুসালেম এমব্যাসি অ্যাক্ট’ গ্রহণ করে মার্কিন কংগ্রেস তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে দূতাবাস সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিল। ওই আইন পাশও হয়েছিল। মাস ছয়েক আগে পুনরায় সেই প্রস্তাব পেশ ও পাশ হয়েছে সেনেটে, জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের কথায়, ‘‘যতই স্পর্শকাতর বিষয় হোক না কেন, একটা সত্যকে এ ভাবে এড়িয়ে গেলে শান্তি প্রক্রিয়ায় কোনও সুবিধা হয় না। ইজরায়েলের প্রশাসনিক ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সবই জেরুসালেমে।’’ তিনি জানান, জেরুসালেমের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন, দু’টো দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। আর তাতেই আমেরিকা সাহায্য করছে মাত্র। ট্রাম্পের বক্তব্য, জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি না দিয়ে কুড়ি বছর ধরে বিষয়টাকে ফেলে রাখায় শান্তি প্রক্রিয়া এগোয়নি।

শুক্রবার জেরুসালেম-বিতর্ক নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের। ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স-সহ আট দেশের ১৫ সদস্যের পরিষদের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। ক্ষুব্ধ প্যালেস্তাইন ও তুরস্কের বক্তব্য, জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশ অমান্য করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতির প্রধানও বলেন, ‘‘ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন, দু’দেশেরই রাজধানী হওয়া উচিত জেরুসালেম।’’ আমেরিকার মন্তব্য খুবই বিপজ্জনক বলেছে রাশিয়াও।

রাশিয়ার আশঙ্কা যে সত্যি, তার আঁচ মিলেছে আজই। উত্তপ্ত গাজা ও পশ্চিম ভূখণ্ড। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেথলেহেমে অন্তত ৪৩ জন জখম হয়েছে। বিক্ষোভ রুখতে রবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। চালানো হয়েছে কাঁদানে গ্যাস। রামাল্লার আল-মানার থেকে আল-বিরে পর্যন্ত মিছিল করেন বিক্ষোভকারীরা। ইজরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ করে পাথর ছুড়তে থাকেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেরুসালেমের ‘ওল্ড সিটি’র মূল প্রবেশপথে প্রার্থনায় বসে পড়েছিলেন বেশ কয়েক জন মুসলিম। শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।

সৌদি আরব বলছে, দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছে আমেরিকা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইপ রিচেপ এর্দোগান আজ বলেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়াকে আগুনের বলয়ে ফেলে দিয়েছেন ট্রাম্প।’’ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুই শুধু বলছেন, ‘‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE