নওয়াজ শরিফ
প্রধানমন্ত্রিত্ব গিয়েছে, আইনসভার সদস্যপদ গিয়েছে, দলের প্রধানের পদ গিয়েছে, এ বার গেল সারা জীবনের মতো ভোটে লড়ার অধিকারটুকুও। নওয়াজ শরিফ এখন শুধুই পাকিস্তান মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠাতা। আর কিচ্ছু নন।
পানামা নথি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পরে আজ পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট কার্যত চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। পাক সংবিধানের ৬২(১)(এফ) ধারা উদ্ধৃত করে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ‘‘কোনও সরকারি পদে যিনি থাকবেন, তিনি হবেন সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ।’’ তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর সময়েও এই ধারাটির উল্লেখ করেছিল কোর্ট।
পাঁচ বিচারপতি সর্বসম্মত হয়েই আজকের রায় দিয়েছেন বলে খবর। যে রায়ের ফল সুদূরপ্রসারী বলেই জানাচ্ছে পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ। তারা জানাচ্ছে, শুধু সরকারি নয়, নওয়াজের যে কোনও আনুষ্ঠানিক পদে থাকার অধিকারই কেড়ে নিয়েছে কোর্ট। কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচন তো বটেই, নিজের দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে লড়ার অধিকারও হারিয়েছেন নওয়াজ। পাক পার্লামেন্টে পিএমএল(এন)-এর যে সমস্ত সদস্যের মনোনয়নপত্রে নওয়াজের সই ছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁরা নির্দল বলে বিবেচিত হবেন। দলের প্রধান থাকাকালীন নওয়াজের সমস্ত সিদ্ধান্তও খারিজ হয়ে যাচ্ছে।
নওয়াজের দলের প্রেসিডেন্ট পদে এখন রয়েছেন তাঁর ভাই তথা পাক পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। কোর্টের রায়কে ‘রসিকতা’ বলে কটাক্ষ করেছে তাঁর দল। দলীয় কর্মী সম্মেলনে নওয়াজের মেয়ে মারিয়াম বলেছেন, ‘‘এমন নয় যে, এই প্রথম বার নওয়াজকে সরানো বা শাস্তি দেওয়া হল। দলের শীর্ষ পদ থেকে সরানো হলেও তিনি মানুষের হৃদয়ে থাকবেন। তাঁকে বিয়োগ করা যায় না, শুধুই যোগ করা যায়।’’ নওয়াজ কন্যার দাবি, পাকিস্তানে পানামা কেলেঙ্কারির যৌথ তদন্তকারী দলের প্রধান জানিয়েই দিয়েছেন, নওয়াজের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উচ্ছ্বসিত তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান এ দিনও কালো টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ তোলেন নওয়াজের বিরুদ্ধে। প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক বলেন, ‘‘মিয়াঁ সাহেবের জন্য জেল পরিষ্কার করা হচ্ছে। ইতিহাসে প্রথম বার ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।’’
নওয়াজের সামনে এখন দু’টো রাস্তা। প্রথমত, রায়ের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বেঞ্চে আবেদন করা। কিন্তু সেই আবেদন যে গৃহীত হবেই, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। দ্বিতীয়ত, ভোটে জিতে তাঁর দল ক্ষমতায় এলে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাটির বিলোপ বা পরিবর্তন করা। যত দিন না তা হচ্ছে, নওয়াজ শরিফ শুধুই তাঁর দলের প্রতিষ্ঠাতা। আর কিচ্ছু নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy