Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভূস্বর্গ নিয়ে ভুয়ো টুইট পাক মন্ত্রীর

গোটা ফুটেজটিই তিন বছরের পুরনো। ২০১৬-র ৮ জুলাই তরুণ জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর শোকযাত্রার ভিডিয়োই আজকের উপত্যকার ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের মন্ত্রী আলি হায়দর জ়াইদি।

পাকিস্তানের মন্ত্রী আলি হায়দর জ়াইদি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

পাহাড়ি জনপদ ঘিরে জনস্রোতের ঢল। আবহে, ‘আজাদি’র দাবিতে স্লোগান। স্বয়ং পাকিস্তানের মন্ত্রী আলি হায়দর জ়াইদি টুইট করেছেন, এমনই ভিডিয়ো। সঙ্গে লেখা, ৩৫এ ধারা হটানোর পরে ‘ভারত-অধিকৃত কাশ্মীর’-এর এই দৃশ্য। ভুয়ো এই ছবি ঘিরে উত্তাল নেট-দুনিয়া।

গোটা ফুটেজটিই তিন বছরের পুরনো। ২০১৬-র ৮ জুলাই তরুণ জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর শোকযাত্রার ভিডিয়োই আজকের উপত্যকার ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘মোদীর হাত থেকে কাশ্মীর বাঁচাও’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে পাকিস্তানি মন্ত্রীর টুইট অন্তত ১১০০ বার ‘রিটুইট’ করা হলেও নেট-দুনিয়ায় এই অসত্য প্রচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভও কম নয়।

সরাসরি যোগাযোগের আওতার বাইরে থাকা জম্মু-কাশ্মীরকে ঘিরে এমন নানা কিসিমের ‘সত্য’ পল্লবিত হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান, সীমান্তের দু’পার থেকেই। কাশ্মীরে ফোন বা নেট-সংযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। ভূস্বর্গের ভিতরের খবর আসছে আবছা-আবছা কিংবা আসছেই না। এই পটভূমিতে কেউ কেউ বোঝাতে চান, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ার পরেও কাশ্মীরে একেবারই ‘শান্তিকল্যাণ’!

একটি ভিডিয়োয় সাদা পোশাকের জনতার একটি মিছিল চলেছে ভারতমাতা-র জয়ধ্বনি দিতে দিতে। মালয়ালম ও ইংরেজিতে ‘সুন্দর দৃশ্য’টি প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানি জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে উদ্বেল কাশ্মীর! ‘একদিন যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁরা এখন শান্ত’— বলে কারও মন্তব্যে মৃদু কটাক্ষেরও আঁচ! এই সব টুইট যাঁরা ছড়াচ্ছেন, তাঁদের অনেকের অনুগামীদের মধ্যেও কেন্দ্রীয় সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা রয়েছেন। ভুয়ো খবর ধরতে সিদ্ধহস্ত অল্ট নিউজ়-এর কাছে অবশ্য মিথ্যাটি ধরা পড়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে পুলওয়ামা হামলার পরে নিহত সিআরপি জওয়ানদের স্মৃতিতে বেঙ্গালুরুর বোহরা মুসলিমদের একটি মিছিলকেই এখন ভূস্বর্গের ‘খুশি’ কাশ্মীরিদের ছবি বলে চালানো হচ্ছে।

গুজরাতের একটি হোটেল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ছবি বা পঞ্জাবে শিখদের ধর্মীয় চিহ্ন ‘কিরপান’ উদ্ধারের ছবি দিয়েও দাবি করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী ভূস্বর্গের ধর্মস্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে। উত্তরপ্রদেশের একটি মাদ্রাসায় পুলিশি তল্লাশি অভিযানের ছবিও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এর উল্টো পিঠে রয়েছে, পুরনো ভিডিয়ো ব্যবহার করে কাশ্মীরের মানুষের ক্ষোভের ছবি তুলে ধরা। পাকিস্তান থেকে মিথ্যা রটিয়ে ভারতের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টাও অব্যাহত। যেমন, বারামুলায় কাশ্মীরের মেয়েদের পুরনো প্রতিবাদ-মিছিলের ছবিও টাটকা ছবি বলে ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘‘যুদ্ধটা আসলে এখন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতেই চলছে।’’— বলছেন সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘টুইটের মাধ্যমে রটানো মিথ্যায় দেশের সংহতিকে ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা রুখতে আইন রয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ থেকে এমন প্রচার হওয়া আরও বিপজ্জনক। যে নেট-মাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করে এ সব কুকাজ চলছে, তাদের সাহায্য চেয়ে সরকারি তরফে তদ্বির করা চলছে বেশ কিছু দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE