Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আতঙ্কের প্রহর

সামান্য ছোঁয়াই যেন মহাপ্রলয়

দানবের মতো মেঘ ধেয়ে যাচ্ছে পশ্চিম দিকে। প্রচণ্ড জোর হাওয়াও। কলকাতায় কালবৈশাখীর চেয়ে বড় ঝড় দেখিনি। এ তো মনে হচ্ছে সাক্ষাৎ মহাপ্রলয়! বাইরে বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে পারলাম না। দুম করে অন্ধকার হয়ে গেল

ঝড়ের গতিপথ: (১,২,৩) এগোচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে, (৪) হাওয়াইয়ের পথে, (৫) মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে, (৬) মেক্সিকোর দক্ষিণ উপসাগরীয় এলাকার দিকে, (৭) দুই ক্যারোলাইনার দিকে, (৮, ৯) অতলান্তিক মহাসাগরে পাক খাচ্ছে। জামাইকার আবহাওয়া দফতর প্রকাশ করেছে এই উপগ্রহ চিত্র।

ঝড়ের গতিপথ: (১,২,৩) এগোচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে, (৪) হাওয়াইয়ের পথে, (৫) মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে, (৬) মেক্সিকোর দক্ষিণ উপসাগরীয় এলাকার দিকে, (৭) দুই ক্যারোলাইনার দিকে, (৮, ৯) অতলান্তিক মহাসাগরে পাক খাচ্ছে। জামাইকার আবহাওয়া দফতর প্রকাশ করেছে এই উপগ্রহ চিত্র।

সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলম্বিয়া শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:২৭
Share: Save:

আকাশ কিছু ক্ষণ আগেও বেশ পরিষ্কার ছিল। শরৎ কালে যেমনটা হয়। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় ফায়ার প্লেস-এর ভেন্ট থেকে সাংঘাতিক আওয়াজ। সঙ্গে মেঘের গর্জন। এটা গত কালের কথা। তখন ভাবছি, কী হল! এত দ্রুত ফ্লোরেন্স এসে গেল নাকি। বাইরে ছুটলাম দেখতে। ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢাকা। তা হলে পূর্বাভাস কি ভুল?

দানবের মতো মেঘ ধেয়ে যাচ্ছে পশ্চিম দিকে। প্রচণ্ড জোর হাওয়াও। কলকাতায় কালবৈশাখীর চেয়ে বড় ঝড় দেখিনি। এ তো মনে হচ্ছে সাক্ষাৎ মহাপ্রলয়! বাইরে বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে পারলাম না। দুম করে অন্ধকার হয়ে গেল। এখানে সাড়ে সাতটার আগে সূর্য ডোবে না। এখন বিকেল পাঁচটায় মনে হচ্ছে, রাত ন’টা। নিমেষের মধ্যে বৃষ্টিও শুরু। টানা ৪৫ মিনিট। তার পর সব বন্ধ, পরিষ্কার। হচ্ছেটা কী? টিভি খুলে জানলাম, কলম্বিয়ায় যা হল, সেটা শুধু ফ্লোরেন্সের লেজের ছোঁয়া।

এর পরেই জানলাম, আমরা বিপজ্জনক এলাকার মধ্যেই রয়েছি। ফ্লোরেন্সের তাণ্ডব আর কিছু মুহূর্তের অপেক্ষা। এটি ক্যাটেগরি ৫ থেকে ২-এ নামলেও বিপদ বেড়েছে। ঝড়ের গতি কমে গিয়ে তাণ্ডব চলবে অনেক ক্ষণ ধরে। উইলমিংটন, মার্টল বিচ আর চার্লসটন থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নতুন আরও অনেক জায়গা থেকেও সরানো হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে জল, আলো না-ও থাকতে পারে। সেনা, উপকূলরক্ষী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নেমে পড়েছে, ক্ষতি যতটা এড়ানো যায়। ওরাই বলছে, ‘স্টর্ম অব আ লাইফটাইম।’ তা হলে আমাদের জন্য কী!

আজ সকাল থেকেই অন্য ছবি। অদ্ভুত একদম। আমাদের উল্টো দিকের প্রতিবেশীর বাড়িতে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। এক ফালি রোদ যেন ব্লেডের মতো কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে। আকাশ থমথমে। শুধু দিগন্তের কাছে এক ফাঁক দিয়ে ওই টুকু আলো। হারিকেন আসার আগে শুনেছি, প্রকৃতির নানা রূপ দেখা যায়। এই রূপ আগে কখনও দেখিনি। জাপানি রূপকথায় দেবতারা যুদ্ধের আগে যেমন পোশাক পাল্টায়, প্রকৃতিও এখানে যেন তেমন।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেয়ের স্কুল, সবই আপাতত বন্ধ। সব ছাত্রকে ল্যাব-এ আসতে বারণ করে দিয়েছি। জল, খাবারদাবার জমা করে বাড়িতেই থাকার কথা বলেছি। বুধবার থেকে অনেক দোকানে জল নেই, পাউরুটি নেই। কোনওমতে যুদ্ধ করে তিন কার্টন জল পেলাম। আরও কিছু খাবারদাবার মজুত করে আপাতত সাত দিনের যুদ্ধের জন্য আমরা তৈরি। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প গ্যাস সিলিন্ডার আর গ্যাস ওভেন। ক্যান‌্ড ফুডও রেখেছি, যদি ফ্রিজ কাজ না করে! এ দিনই দেখলাম, হাইওয়েতে গাড়ির ভি়ড় শুধু এক দিকে। সবাই পশ্চিমে পাড়ি দিচ্ছে। গাড়ির উপরে বোঝাই করা জিনিস। অনেকে আসবাবও বেঁধে নিয়ে চলেছে। কত দিন ঘরছাড়া থাকতে হয় কে জানে!

এখন স্তব্ধ পরিবেশ। কী জানি কী হয়! বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তো এখানে ফ্লোরেন্সের আসল তাণ্ডব শুরু হবে।

(সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Storm Hurricane Florence Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE