Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্বেচ্ছা নির্বাসনের অসুখ, জাপানে আক্রান্ত ১০ লক্ষ

বাইরের জগ়ৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে একা ঘরে আটকে ফেলেছেন নিজেদের। সারা সকাল ঘুমিয়ে জেগে উঠছেন রাতে। এর পর গোটা রাত চোখ আটকে কম্পিউটারের পর্দায়! পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন— যোগাযোগ তো দূরস্থান, বাক্যালাপ পর্যন্ত বন্ধ সকলের সঙ্গে। কেউ ছ’মাস কেউ বা আবার ৩০ বছর নিজের ঘরের বাইরে পা রাখেননি।

সংবাদ সংস্থা
টোকিও শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

বাইরের জগ়ৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে একা ঘরে আটকে ফেলেছেন নিজেদের। সারা সকাল ঘুমিয়ে জেগে উঠছেন রাতে। এর পর গোটা রাত চোখ আটকে কম্পিউটারের পর্দায়!

পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন— যোগাযোগ তো দূরস্থান, বাক্যালাপ পর্যন্ত বন্ধ সকলের সঙ্গে। কেউ ছ’মাস কেউ বা আবার ৩০ বছর নিজের ঘরের বাইরে পা রাখেননি। এ ভাবেই সমাজ থেকে নির্বাসিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন জাপানের প্রায় দশ লক্ষ মানুষ। বেশিরভাগই যুবক। জটিল এই মানসিক রোগের নাম হিকিকোমরি। এর কারণ কী, প্রতিকারই বা কী— হাতড়ে বেড়াচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাৎপর্যপূর্ণ, হিকিকোমরি আক্রান্তদের অধিকাংশই যুবক। কেউ সদ্য কলেজ পেরিয়েছেন। কেউ একখনও কলেজের চৌকাঠও পেরোননি। এবং এটাই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কার সবচেয়ে বড় কারণ। তাঁরা মনে করছেন, মেধাবি এবং কর্মঠ তরুণ-তরুণীরা নিজেদের সমাজ থেকে আলাদা করে নিলে তার মারাত্মক প্রভাব পরতে পারে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উপরে। আক্রান্তের তালিকায় অবশ্য রয়েছেন মধ্য পঞ্চাশের প্রৌঢ়ও। যাঁদের অনেকেই ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছা-বন্দি।

ছাত্রাবস্থায় এই জটিলতার শিকার হয়েছিলেন তাকাহিরো কাটো। এখন তিনি হিকিকোমরি বিশেষজ্ঞ। কাটোর কথায়, ‘‘জাপানের জনসংখ্যার এক শতাংশ হিকিকোমরি বা এই জাতীয় মানসিক জটিলতার শিকার। এটা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। আক্রান্তরা অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় পেরনো। অনেকেই নামী প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছেন। এ ভাবে তরুণ প্রজন্ম সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু উঠতি প্রজন্মের মধ্যেই এর বিস্তার বাড়ছে ক্রমশ।’’

যার নজির ১৮ বছরের ইউতো ওনিশি। তিন মাস হল চিকিৎসা শুরু হয়েছে ইউতোর। তার আগের তিন বছর শোয়ার ঘরের চৌকাঠ পেরোননি তিনি। সারা সকাল ঘর বন্ধ করে ঘুমোতেন। আর সারা রাত বসে থাকতেন কম্পিউটারের সামনে। ওনিশির নিজেই বলছেন, ‘‘আমি জানি এটা অস্বাভাবিক। কিন্তু আমি এ ভাবেই থাকতে চাই। এক বার এ ভাবে থাকতে শুরু করলে বাস্তব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মানুষ।’’

জাপানি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হিকিকোমরি শব্দটা অসুখ এবং আক্রান্ত দু’ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম এবং উন্নয়ন মন্ত্রীর মতে, হিকিকোমরিরা সমাজ থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলেন নিজেদের। কোনও কাজ বা লেখাপড়ায় যাবতীয় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখেন না। কখনও ছ’মাস, কখনও আবার বছরের পর বছর ধরে চলে এই অবস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীরাই এই রোগে আক্রান্ত হন। নিম্নবিত্তদের মধ্যে এর নজির প্রায় নেই বললেই চলে। কাটোর মতে, মধ্যবিত্ত পরিবার, পরিবেশেই এই জটিলতার ঝুঁকি বেশি।

কিন্তু কেন? সঠিক জবাব নেই। তবে একটা সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরছেন কাটো। জাপানে ছেলেমেয়েদের মধ্যে, বিশেষত ছেলেদের মধ্যে
সেরা কলেজে সুযোগ পাওয়া, ভালো নম্বর পাওয়া এবং পরবর্তীতে ভালো সংস্থায় চাকরি পাওয়ার চাপ থাকে অত্যন্ত বেশি। সেই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে, একপ্রকার
গা বাঁচাতেই সমাজ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তাঁরা। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, ছেলে-মেয়েদের এই অস্বাভাবিক আচরণ সমর্থন করছেন বাবা-মায়েরাই।

তবে এটা একটা সম্ভাবনা মাত্র। আর তাই কাটো বলছেন, ‘‘চিকিৎসা নয়, এ রোগের কারণ খুঁজে বার করতে হবে আগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Japan Computer hikikomori
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE