১১ সেপ্টেম্বর। দিল্লি থেকে ৩৭০ জন যাত্রী নিয়ে উড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১০১ বিমানটি। গন্তব্যস্থল ছিল নিউ ইয়র্কের জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। টানা ১৫ ঘণ্টা ওড়ার পর আমেরিকার আকাশে পৌঁছে গিয়েছিল সেটি। কিন্তু বিপত্তি বাধল অবতরণের সময়।
প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি চলছিল। নেমে গিয়েছিল দৃশ্যমানতাও।অবতরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পাইলট রুস্তম পালিয়া। হঠাৎই দেখেন ল্যান্ডিং সিস্টেম কাজ করছে না!ফলেরক্তচাপ বাড়তে শুরু করে তাঁর ও সহ-পাইলটের। তা হলে উপায়?
সামান্য ভুলচুক হলেই যে সব শেষ। আকাশে চক্কর কাটা শুরু করে বিমানটি। কিন্তু আর কতক্ষণই বা আকাশে চক্কর কাটা সম্ভব! এ দিকে জ্বালানিও শেষ হয়ে আসছিল। ক্যাপ্টেন পালিয়া যোগাযোগ করলেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে। পুরো বিষয়টা জানালেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে এটিসি-রও তখন কিছু করার ছিল না। ককপিটের ওই ছোট্ট জায়গার মধ্যে তখন দুই পাইলট মনের সঙ্গে জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মনের ভিতরের ঝড় আর বাইরের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য ছাপিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রাখাটাই ছিল পাইলটদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এটিসির সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটের সেই কথোপকথনের অডিয়ো।
আরও পড়ুন: ক্ষেপণাস্ত্রে বাধা নয় আমেরিকা, আশায় ভারত
তবে ককপিটের ভিতরে দুই পাইলট যে কী ভয়ানক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তা কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বিমানে বসে থাকা যাত্রীরা। এ দিকে, ফুয়েল মিটারের কাঁটাটাও দ্রুত নেমে আসছিল। ফলে আর চক্কর কাটা মানেই নিশ্চিত দুর্ঘটনাকে আমন্ত্রণ জানানো। তাই আর দেরি না করেই পাশেরই নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে বিমান নামানোর সিদ্ধান্ত নিলেন পাইলটরা। ল্যান্ডিং সিস্টেম পুরোপুরি বিকল হয়ে যাওয়ায়, তাঁরা ঝুঁকি নিয়েই বিমানের ভর্টিকাল ও ল্যাটারাল নেভিগেশন সিস্টেম কাজে লাগান। যদিও বিমানের অপারেশনাল গাইডের মধ্যে এই সিস্টেম ব্যবহারের কোনও উল্লেখই ছিল না। শুধু তাই নয়, এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের এই সিস্টেম ব্যবহারের কোনও প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। কিন্তু সেই সময় দুই পাইলট দক্ষতার সঙ্গে ওই সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৭০ জন যাত্রীর প্রাণ রক্ষা করেছেন। ককপিটের মধ্যে সেই দুঃস্বপ্নের ৩৮ মিনিটের ঘটনাই শুনিয়েছেন ক্যাপ্টেন পালিয়া।
আরও পড়ুন: ইমরান কতটা সেনার রাশে, দেখবে দিল্লি
এআই-১০১ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ গোত্রের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বিমান। টানা ১৫ ঘণ্টার উড়ান। কিন্তু এত দূর উড়ানে পর্যাপ্ত জ্বালানি ছিল না কেন তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয় ল্যান্ডিং সিস্টেম বিগড়ে যাওয়ার বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এয়ার ইন্ডিয়াকে। বিশেষ করে ৩৭০ জন যাত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্ন যেখানে রয়েছে। কেন এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে বলেই জানিয়েছেন বিমান কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy