ফ্লাইদুবাইয়ের বিমান দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে খারাপ আবহাওয়ার কথা আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু আজ ওই সংস্থারই কর্মীদের জেরা করে জানা গেল, বিমান চালকের অতিরিক্ত ক্লান্তিও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে।
গত শনিবার সকালে ৬২ জন সওয়ারি নিয়ে রাশিয়ার রস্তভ-অন-দনে আছড়ে পড়েছিল ফ্লাইদুবাই সংস্থার বোয়িং ৭৩৭, এফজেড৯৮১। দুবাই থেকে রাশিয়া যাচ্ছিল বিমানটি। সূত্রের খবর, রাশিয়ায় অবতরণের মুখে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় প্রায় দু’ঘণ্টা মাঝ আকাশেই চক্কর কেটেছিল বিমানটি। দ্বিতীয় বার অবতরণের চেষ্টা করতে গেলে রানওয়ে থেকে মাত্র আড়াইশো মিটার দূরে মাটিতে আছড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বিমানটি। ৫৫ জন যাত্রী ও সাত বিমানকর্মীর কেউই জীবিত ছিলেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্লাইদুবাইয়ের এক পাইলট আজ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাইলটদের শারীরিক ক্লান্তির কারণে উড়ানের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। সূত্রের খবর, ভেঙে যাওয়া বিমানটির ক্যাপ্টেন অ্যারিসটস সক্র্যাটোস কিছু দিন আগেই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ঘটনার সময়, তিন মাসের নোটিস পিরিয়ডে ছিলেন তিনি। অনিয়মিত কাজের রুটিনের জেরে প্রচণ্ড শারীরিক ক্লান্তিই ইস্তফার কারণ ছিল।
আর এক পাইলট জানাচ্ছেন, রাতের কাজ এবং দিনের কাজের মাঝখানে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া হয় না। ফলে লম্বা উড়ানের সময় প্রায়ই ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে। তিনি স্পষ্ট স্বীকার করেছেন, এ রকম অভিজ্ঞতা তাঁর নিজেরই হয়েছে।
গত শনিবার ফ্লাইদুবাইয়ের বিমানের দুর্ঘটনাটির পিছনেও এই কারণটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ প্রথম বার বিমান অবতরণ করতে গিয়ে প্রচণ্ড হাওয়া ও খারাপ দৃশ্যমানতার কারণে বাধা পেলেও, দু’ঘণ্টা পর দ্বিতীয় বার অবতরণের সময় আর ততটা খারাপ ছিল না আবহাওয়া। মধ্যবর্তী সময়ে পাইলট কী অবস্থায় ছিলেন সেই বিস্তারিত খবর পাওয়া যায়নি।
ফ্লাইদুবাই সংস্থার তরফে অবশ্য এই অনিয়মিত ও ক্লান্তিকর রুটিনের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। যদিও তথ্য বলছে, চলতি বছরের গোড়াতেই ফ্লাইদুবাইয়ের ৬০০ জন পাইলটের মধ্যে পঁচিশ জন পদত্যাগ করেছেন। আর এর কারণ হিসেবে প্রত্যেকেই জানিয়েছেন অতিরিক্ত খাটনি ও কম বিশ্রামের কথা।
এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। অতিরিক্ত খাটনির জন্য পাইলটদের ক্লান্ত হয়ে পড়া ও তার জেরে দুর্ঘটনা এর আগেও হয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তাইওয়ানে ট্রান্সএশিয়ার বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় একই তত্ত্ব সামনে এসেছিল। ২০১১-র উত্তর অতলান্তিক সাগরে এয়ার কানাডার বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই।
তবে ফ্লাইদুবাইয়ের বিমানটির ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ঠিক আগে পাইলট কী অবস্থায় ছিলেন, সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কি না, তা নিয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, ককপিট ভয়েস এবং ডাটা রেকর্ডার এত খারাপ ভাবে ভেঙেচুরে
গিয়েছে, যে তা থেকে তথ্য উদ্ধার করা কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy