Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
International News

পাকিস্তানকে ‘কড়া বার্তা’ দিতেই অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের ম্যাপে রেখেছিল চিনা মিডিয়া?

খবর সম্প্রচারের সময় এই অঞ্চলের যে ম্যাপ দেখানো হয়, সেখানেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে দেখায় সরকার নিয়ন্ত্রিত এই সংবাদ মাধ্যম।

এই ছবিই দেখানো হয় চিনা সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে পাওয়া।

এই ছবিই দেখানো হয় চিনা সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে পাওয়া।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:৩২
Share: Save:

পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে কি ইচ্ছাকৃত ভাবেই ভারতের মানচিত্রে ঢুকিয়েছিল চিনের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক’ (সিজিটিএন)? তাতে কি বেজিংয়ের কোনও আপত্তি ছিল না? মানচিত্র নিয়ে বরাবরই খুব খুঁতখুঁতে চিনা প্রশাসন ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এটা ভারত-চিন সম্পর্কের একটা সদর্থক দিক।

চিন সরকারের একটি সূত্রের খবর, বন্দুকবাজদের ওই হামলায় করাচির চিনা উপ-দূতাবাসের দুই নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যুর ঘটনায় যথেষ্টই বিব্রত বেজিং। এর আগেও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্মীয়মাণ অর্থনৈতিক করিডরে। ওই করিডর যাঁরা বানাচ্ছেন, সেই চিনা শ্রমিকদের উপর আগেও হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গিরা। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতেই চিনের ধারণা হয়েছে, পাক ভূখণ্ডে চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না ইসলামাবাদ। তাই, পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ভারতের মানচিত্রে ঢোকানো হয়েছিল চিনের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারিত খবরে।

গত ২৩ নভেম্বর এই টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হচ্ছিল পাকিস্তানের করাচিতে চিনা উপ-দূতাবাসে হামলার ঘটনা। ওই হামলায় চিনা উপ-দূতাবাসের দুই নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়। সেই খবর সম্প্রচারের সময় এই অঞ্চলের যে ম্যাপ দেখানো হয়, সেখানেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে দেখায় সরকার নিয়ন্ত্রিত এই সংবাদ মাধ্যম। এর আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে কখনও ভারতের মানচিত্রে দেখায়নি কোনও চিনা সংবাদ মাধ্যম।

আরও পড়ুন- পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের অংশ দেখাল চিনা সংবাদমাধ্যম​

আরও পড়ুন- ইথিওপিয়ায় পণবন্দি ‘আইএল অ্যান্ড এফএস’-এর ৭ ভারতীয় কর্মী​

চিনের সরকারি চ্যানেলে এই ছবি দেখানো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ভারতের দীর্ঘ দিনের আপত্তি সত্ত্বেও চিন বরাবর পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবেই মনে করে এসেছে। চিনের সরকারি বয়ানেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। আর মানচিত্র নিয়ে বেজিং এতটাই খুঁতখুঁতে যে, স্কুলপাঠ্য বা কোনও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত মানচিত্রে কোনও ভুল থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে বাজার থেকে তুলে নেয় বা তাকে ‘ব্লক’ করে দেয় বেজিং।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর দিয়েই যাচ্ছে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের একটি অংশ। ভারতের মত না নিয়ে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে চিন ও পাকিস্তান রাস্তা এবং রেলপথ বানানোয় দীর্ঘ দিন ধরেই আপত্তি জানাচ্ছে দিল্লি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ভারত ও চিনের সামরিক বাহিনীর যৌথ মহড়া হবে। তার আগে একটা সহায়ক পরিস্থিতি তৈরির বার্তা দিতেই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশের ধারণা, পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের মানচিত্রে দেখিয়ে দিল্লির দীর্ঘ দিনের দাবিকে মান্যতা দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলার কাজে আর কোনও বাধা রাখতে চাইছে না বেজিং। যাতে, ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।’

অভ্যন্তরীণ নীতি ঘোষণার আগে বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের অবস্থান বদলের সময় বেজিং এর আগেও সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা সংবাদমাধ্যমগুলিকে দিয়ে এই ভাবে মানুষের মতামত বুঝে নিতে চেয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু ভেবে নেওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ, ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে নিজেদের অবস্থানে বদল আনছে চিন, সরকারি ভাষ্যে এখনও পর্যন্ত তার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি বেজিং।

বিশেযজ্ঞদের মতে, তেমন কোনও সম্ভাবনাও নেই। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে নির্মীয়মাণ অর্থনৈতিক করিডরের জন্য ইতিমধ্যেই বহু খরচ করেছে চিন। ফলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের মানচিত্রে ঢুকিয়ে বেজিং সেই অর্থনৈতিক করিডরের ভবিষ্যতকে কখনওই অনিশ্চিত করে তুলতে পারে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE