Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘রোহিঙ্গা’ না-বলাটা কৌশল পোপের

আলোচনার দরজা খুলে রেখে মায়ানমারের শাসকদের কাছে ‘সঠিক বার্তা’টি পৌঁছে দিতে এ’টি তাঁর কূটনৈতিক কৌশল ছিল বলেও দাবি করেছেন পোপ ফ্রান্সিস।

প্রতীক্ষা: কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বালুখালি আশ্রয় শিবিরে। ছবি: রয়টার্স।

প্রতীক্ষা: কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বালুখালি আশ্রয় শিবিরে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ভ্যাটিক্যান সিটি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০১
Share: Save:

মায়ানমারে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের মুখ চেয়ে এবং শরণার্থীদের ভালর জন্যই তিনি সে দেশে দাঁড়িয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি বলে জানালেন পোপ। আলোচনার দরজা খুলে রেখে মায়ানমারের শাসকদের কাছে ‘সঠিক বার্তা’টি পৌঁছে দিতে এ’টি তাঁর কূটনৈতিক কৌশল ছিল বলেও দাবি করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। এশিয়া সফর সেরে ফেরার পথে বিমানে তাঁর সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই ব্যাখ্যা দেন রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের এই প্রধান ধর্মগুরু।

এশিয়া সফরে মায়ানমার ও বাংলাদেশে এসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। মায়ানমার সফরে গিয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের নাম না-করে ‘রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত শরণার্থীদের’ দুর্দশার বিষয়ে সরব হয়েছিলেন। বাংলাদেশে এসেও শুধু এক বারই তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চরণ করেছিলেন। সমবেত প্রার্থনার পরে নিজের বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যেও আমি সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি দেখি।’’ কিন্তু তা নিয়েই মায়নমারের বহু নাগরিক সামাজিক মাধ্যমে পোপের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, পোপ গিরগিটির মতো র‌ং বদলেছেন। আবার তিনি মায়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ না-করায় ক্ষুব্ধ অনেক বাংলাদেশিও। সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের ক্ষোভের আঁচও ছুঁয়েছে ভ্যাটিক্যানকে।

আরও পড়ুন: মুক্তিতেই বা কী হবে, বলছেন শিবিরের রোহিঙ্গারা

এ বিষয়ে পোপ নিজে কী বলছেন?

ফিরতি বিমানে সাংবাদিকদের পোপ জানিয়েছেন, মায়ানমার সফরের আগে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ দুর্দশার বিষয়টি নিয়ে তিনি বিলক্ষণ অবগত ছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল— আলোচনার সময়ে সে দেশের সেনা ও নাগরিক প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া। মায়ানমারের রোমান ক্যাথলিক মিশন তাঁকে জানায়, সে দেশে দাঁড়িয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চরণ করলে শাসক পক্ষ তাঁর সঙ্গে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিতে পারে। একই সঙ্গে নির্যাতন নেমে আসতে পারে সে দেশে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের ওপরেও। পোপ বলেন, ‘‘প্রকাশ্য বক্তৃতায় আমি শরণার্থীদের পরিস্থিতিটা তুলে ধরেছি, মানবাধিকারের বিষয়টিও সামনে এনেছি। এ কথাও বলেছি, নাগরিকত্ব থেকে কাউকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। রোহিঙ্গা শব্দটি বলিনি, যাতে একান্ত বৈঠকে আরও অনেক কিছু আমি তাদের বলে আসতে পারি।’’ একটি লাতিন প্রবাদ শোনান পোপ, যাঁর মর্মার্থ— বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।

মায়ানমারের সেনা প্রধান মিন আউং হ্লাইং ও সে দেশের শাসক দলের নেত্রী আউং সান সু চি-র সঙ্গে বৈঠককে ‘খুবই কার্যকরী’ বলে অভিহিত করেছেন পোপ। জানিয়েছেন, তাঁদের যা বলার তিনি বলে আসতে পেরেছেন। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না সে দেশের সরকার। তাদের কথায়, এই সম্প্রদায় বহু বছর আগে মায়ানমারে ঢুকে পড়া বাংলাদেশি শরণার্থী। পোপ জানিয়েছেন, এঁদের নাগরিকত্বহীন দুরবস্থার কথা তিনি জানতেন। কিন্তু ঢাকায় এসে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার যখন তাদের চরম দুর্দশার কথা তাঁকে শুনিয়েছেন, তিনি চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE