পাঠের মধ্যে চালানো হয় নাচের ভিডিয়ো।
প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ। বন্দিদশা। আর প্রতিষেধক রবীন্দ্রনাথ।
২৫শে বৈশাখের প্রাক্কালে মিলল সেই বার্তা, তা-ও ভাইরাসের প্রকোপ যে দেশ থেকে শুরু হয়েছে, সেই চিন থেকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিনে অনলাইনে প্রদর্শিত হল তাঁর নাটক, ‘মুক্তধারা’। ‘ওয়াটারফল অব ফ্রিডম, আ স্পিরিচুয়াল ভ্যাকসিন ফ্রম টেগোর’ নামের ওই অনুষ্ঠানে নাটকের চিত্রনাট্য পাঠের সঙ্গে ছিল নাচ, গানের ভিডিয়ো।
চিনে রবীন্দ্রজয়ন্তীর উদ্যাপন নতুন নয়। কিন্তু এ বার সংক্রমণের জেরে জীবনের সমস্ত ছন্দই এলোমেলো। তবু কবিপ্রণামে যাতে ছেদ না পড়ে সে জন্য যৌথ ভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শিয়িংরেন নাট্যগোষ্ঠী ও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্ট্রোডাকশন টু টেগোর’ কোর্সের সঙ্গে যুক্ত সকলে। সহযোগিতায় দুই অনুবাদক অধ্যাপক তং ইয়োউছেন, শি চিংউ।
আয়োজকেরা জানান, ভিডিয়ো কনফারেন্সে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ জন রবীন্দ্র-গবেষক, অনুরাগী ‘মুক্তধারা’ পাঠ করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নানা দেশের বাসিন্দা। অনলাইনে এই সম্প্রচার সরাসরি দেখেন তিনশোরও বেশি দর্শক। নাটকের চিত্রনাট্য পাঠের মাঝে মাঝে চালানো হয় আগে রেকর্ড করে রাখা গান ও নাচের ভিডিয়ো। আয়োজকেরা জানান, জনসমক্ষে ‘মুক্তধারা’র এই প্রদর্শন চিনে এই প্রথম।
আরও পড়ুন: ইসলামবিরোধী পোস্ট করে কানাডায় বিপাকে প্রবাসী ভারতীয়
রবীন্দ্রনাথ তাঁর মুক্তধারা নাটকে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। বার্তা দিয়েছেন, সর্বশক্তিমান রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে মুক্ত জীবনের ছন্দের। আজকের দিনে এই আয়োজন তাই খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তিনি এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পূর্ব ইওরোপে নাৎসি আগ্রাসনের সময় নিধন শিবিরে নিয়ে যাওয়ার আগে কী ভাবে ইহুদি বন্দিদের জীবনীশক্তি
জুগিয়েছিল রবীন্দ্রনাথেরই ডাকঘর নাটক। তাঁর কথায়, ‘‘এই কারণেই তো রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। যে ভাবে ডাকঘর মৃত্যুপথযাত্রীদের আতঙ্ক থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছিল, তেমনই মুক্তধারাও জীবনের প্রবাহমানতার শিক্ষা দিচ্ছে।’’
এমন উদ্যোগের কথা শুনে উচ্ছ্বসিত নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদারও। তিনি বললেন, ‘‘এখনকার এই দূরে দূরে থাকার সময়ে যে শব্দটা বার বার আসছে তা হল জোট বাঁধা। এই জোট বাঁধার কথা মুক্তধারা নাটকেই রবীন্দ্রনাথ কী অদ্ভুত ভাবে আমাদের জানিয়েছেন। এমন উদ্যোগের কথা শুনলে এই সঙ্কট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য মানসিক শক্তি অনেক বেড়ে যায়।’’
জোট বাঁধার একই সুর শোনা গিয়েছে অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ওয়েই লিমিংয়ের কথায়। এই অনুষ্ঠানকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের থেকে পাওয়া ‘আধ্যাত্মিক প্রতিষেধক’ বলছেন কেন? আনন্দবাজারকে ওয়েই লিমিং বললেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের দর্শন বিশ্বকে পাখির এক নীড়ে পরিণত করার দর্শন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে বিশ্বকে বাঁচাতে এই দর্শনই আদর্শ প্রতিষেধক হতে পারে।’’
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়েছে চিন। সে দেশেও নানা অভিযোগ উঠেছে। সেই চিনে এমন আয়োজনের কথায় চমৎকৃত দেবশঙ্কর। তিনি বলছেন, ‘‘চিনে ইদানীং একটা ছাঁচে-ঢালাই সংস্কৃতির কথা শোনা যায়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নামক শক্তি যে সেই ছাঁচ ভেঙে দিতে পারে, তার ফাঁকফোকর দিয়ে আলো বার করতে পারে এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’’
আয়োজকদের তরফে অধ্যাপিকা ওয়েই লিমিং এবং অনুষ্ঠানের নির্দেশিকা হাও ইংচুয়ে জানিয়েছেন, এ ভাবে আরও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জোট বেঁধে তাঁরা রবীন্দ্রচর্চা চালিয়ে যাবেন। অধ্যাপিকা ওয়েই লিমিং-এর বার্তা, ‘‘এই সঙ্কট কাটাতে ভারতীয় ও চিনের নাগরিকদের একসঙ্গে লড়তে হবে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy