Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
International News

‘আফ্রিকার শিং’ বাগিয়ে চোখরাঙানি, জিবুটির দিকে রওনা দিল চিনা নৌসেনা

আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের প্রভাব বাড়াতেই ভারত মহাসাগর জুড়ে চিনের সামরিক তৎপরতা। তবে ভারতকে চাপে রাখাও চিনা নৌসেনার এই তৎপরতার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতকে ঘিরতে ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ নীতি নিয়েছে চিন।

জিবুটির পরিকাঠামো সামরিক নয় বলেই এত দিন দাবি করছিল চিন। কিন্তু মঙ্গলবার ঝাংজিয়াং থেকে চিনা রণতরী জিবুটির দিকে রওনা দেওয়ার পর চিন স্বীকার করেছে, সেখানে সামরিক ঘাঁটিই তৈরি করা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স।

জিবুটির পরিকাঠামো সামরিক নয় বলেই এত দিন দাবি করছিল চিন। কিন্তু মঙ্গলবার ঝাংজিয়াং থেকে চিনা রণতরী জিবুটির দিকে রওনা দেওয়ার পর চিন স্বীকার করেছে, সেখানে সামরিক ঘাঁটিই তৈরি করা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ১৭:০৪
Share: Save:

জিবুটি সামরিক ঘাঁটির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল চিনা বাহিনী। ভারত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমতম প্রান্তে এডেন উপসাগরের কোলে অবস্থান জিবুটির। ‘আফ্রিকার শিং’— এই নামেই পরিচিত পৃথিবীর ওই অঞ্চল। কৌশলগত বা সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই ভূখণ্ডে সামরিক ঘাঁটি তৈরির কাজ বছর খানেক আগে থেকেই শুরু করেছিল চিন। এ বার বাহিনী নিয়ে বেশ কয়েকটি চিনা রণতরী রওনা হয়ে গেল জিবুটির দিকে। চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া এই খবর জানিয়েছে। নিজেদের দেশের বাইরে এই প্রথম কোনও সামরিক ঘাঁটি তৈরি করল চিন।

গোটা ভারত মহাসাগরেই নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চায় চিন। আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের প্রভাব বাড়াতেই ভারত মহাসাগর জুড়ে চিনের সামরিক তৎপরতা। তবে ভারতকে চাপে রাখাও চিনা নৌসেনার এই তৎপরতার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতকে ঘিরতে ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ নীতি নিয়েছে চিন। মলদ্বীপের কাছ থেকে দ্বীপ কিনেছে তারা। মায়ানমারের কোকো দ্বীপে বন্দর তৈরি করেছে। বন্দর বানিয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে, শ্রীলঙ্কার হামবানটোটায় এবং পাকিস্তানের গ্বাদরে।

গত বছর জিবুটিতে বন্দর তৈরি করা শুরু হয়েছিল। চিন প্রথমে জানিয়েছিল, জিবুটিতে লজিস্টিকস হাব তৈরি করা হচ্ছে। চিনের পণ্যবাহী জাহাজ এবং রণতরীগুলি আন্তর্জাতিক জলপথে যাতায়াত বা টহলদারির সময়ে যাতে জ্বালানি ভরতে পারে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারে, তার জন্যই জিবুটিতে বন্দর তৈরি করা হচ্ছে বলে চিন জানিয়েছিল। কিন্তু আসলে যে জিবুটিতে নৌ-ঘাঁটিই তৈরি করা হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মহল জানত। দক্ষিণ চিনের ঝাংজিয়াং বন্দর থেকে চিনা রণতরীগুলি বাহিনী সমেত জিবুটির দিকে রওনা দেওয়ার পর জিবুটি বন্দরের চরিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে গেল।

মঙ্গলবারই চিনা সংবাদ সংস্থা জানায়, জিবুটি ঘাঁটির উদ্দেশে সামরিক বাহিনী রওনা দিয়েছে। শিনহুয়া জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা, জলদস্যুদের উপর নজরদারি, আফ্রিকায় মানব কল্যাণমূলক কর্মসূচি-সহ যে সব আন্তর্জাতিক অভিযানে চিনা বাহিনী অংশ নেয়, জিবুটির ‘সহায়ক ঘাঁটি’ (সাপোর্ট বেস) সেই সব অভিযানে চিনের সাফল্যকে আরও সুনিশ্চিত করবে।

জিবুটির উদ্দেশে বাহিনী পাঠানোর আগে দক্ষিণ চিনের ঝাংজিয়াং বন্দরে সামরিক অনুষ্ঠান। ছবি: রয়টার্স।

ভারতকে নানা দিক থেকে ঘিরে থাকা মলদ্বীপ, মায়ানমার, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় চিন বন্দর তৈরি করলেও, এখনও সেই বন্দরগুলিকে তারা সামরিক ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করতে পারেনি। সেগুলি মূলত বাণিজ্যিক পরিকাঠামো হিসেবেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু জিবুটির পরিকাঠামোটি পুরোদস্তুর সামরিক পরিকাঠামো এবং এটিই নিজেদের দেশের বাইরে চিনের প্রথম সামরিক ঘাঁটি।

আরও পড়ুন: দিল্লিতে বসেই হুঁশিয়ারি চিনের

এত দিন চিন স্বীকার করত না যে জিবুটিতে তারা আসলে সামরিক ঘাঁটি বানাচ্ছে। সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া-তে যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানেও সরাসরি লেখা হয়নি যে জিবুটির ঘাঁটি একটি সামরিক ঘাঁটি। কিন্তু চিনা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস কোনও রাখঢাক করেনি। জিবুটিতে সামরিক ঘাঁটিই তৈরি করা হয়েছে বলেই সেখানে লেখা হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির মূল মুখপত্র পিপলস ডেইলি-তেও লেখা হয়েছে, ‘‘এটা অবশ্যই পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রথম বৈদেশিক ঘাঁটি এবং আমরা সেখানে বাহিনী রাখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE