Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

যুদ্ধ শেষ! শান্তি চাইল ১০০ বছরের উৎসব

আজ ১১/১১। একশো বছর আগে এই ১১ নভেম্বরেই শেষ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি প্রাণ কেড়ে আজকের দিনেই থেমে গিয়েছিল ইউরোপের সবক’টা কামান। শতাব্দী পেরিয়ে যুদ্ধ শেষের সেই মুহূর্তটাকে ধরে রাখতে গিয়ে আজ আরও একটা মুহূর্ত তৈরি হল। 

শান্তির খোঁজে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রবিবার প্যারিসে। পিটিআই

শান্তির খোঁজে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রবিবার প্যারিসে। পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
প্যারিস শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৮
Share: Save:

কখনও ইলশেগুঁড়ি, তো কখনও ঝমঝমিয়ে— বৃষ্টি পড়েই চলেছে। তবু এরই মধ্যে কালো-কালো ছাতা মাথায় ‘আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ’ স্মৃতিসৌধের নিচে দাঁড়িয়ে পড়লেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১১টা। সার দিয়ে দাঁড়ালেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোয়ান, এবং ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। লাইনে ভারতীয় উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুও। আর সবার শেষে এলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক ছাতার নীচে প্রায় গোটা বিশ্ব।

আজ ১১/১১। একশো বছর আগে এই ১১ নভেম্বরেই শেষ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি প্রাণ কেড়ে আজকের দিনেই থেমে গিয়েছিল ইউরোপের সবক’টা কামান। শতাব্দী পেরিয়ে যুদ্ধ শেষের সেই মুহূর্তটাকে ধরে রাখতে গিয়ে আজ আরও একটা মুহূর্ত তৈরি হল।

ভ্যাটিকান সিটি থেকে সতর্কবার্তা দিলেন পোপ ফ্রান্সিস— ‘‘যুদ্ধ থেকে আমরা কোনও শিক্ষাই নিই না। কিন্তু এ বার শান্তির পথে হাঁটতেই হবে।’’ কোথাও গান স্যালুট, তো কোথাও যুদ্ধশহিদদের স্মৃতিতে দু’মিনিটের নীরবতা পালন— ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া-রাশিয়া থেকে শুরু করে ভারত, নিউজিল্যান্ডও আজকের দিনটি পালন করেছে। প্রায় ৭০ জন রাষ্ট্রনেতার উপস্থিতিতে প্যারিসই তবু সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ল।

‘আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ’। ছিল ‘বিজয়স্তম্ভ’, এখন ‘স্মৃতিসৌধ’। নিজের ‘গ্র্যান্ড আর্মি’-র ঢেঁড়া পেটাতে ১৮০৬ এই স্তম্ভটি তৈরি করেছিলেন নেপোলিয়ন। পরে এখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত এক অজ্ঞাতপরিচয় সৈনিকের দেহ সমাহিত করা হয়। আজ সেখান থেকেই মাইক হাতে মাকরঁ ‘নয়া যুদ্ধের’ ডাক দিলেন। যুদ্ধটা শান্তি চেয়ে। বললেন, ‘‘আসুন, পরস্পরকে ভয় না পেয়ে, বিশ্বাসের একটা যৌথ ভিত্তি গড়ে তুলি।’’ দেশাত্মবোধকে, জাতীয়তাবাদের ঠিক উল্টোটা বলে ব্যাখ্যা করলেন তিনি। কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, এটা ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকেই কটাক্ষ করে। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদিও তাতে বিশেষ আমল দেননি। বরং এই মুহূর্তে ‘জোটবদ্ধ এবং নতুন ইউরোপ’ চাই বলে আর্জি পেশ করলেন ট্রাম্প। রবিবার প্যারিসের অনুষ্ঠানে না-থাকলেও শান্তির পক্ষে বার্তা দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি টুইট করেন, ‘‘ভারত সরাসরি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে না-জড়ালেও, অন্যের হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের বাহিনী লড়াই করেছে। দিনটা স্মরণীয়।’’

বৃষ্টিধোয়া প্যারিসে আজ যেন নতুন দিনের স্বপ্নই দেখালেন বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতারা। বোঝার উপায় থাকল না যে, একটু আগেই এখানে একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে। সভাস্থলের দিকে ট্রাম্পের কনভয় তখন সবে ঢুকছে। হঠাৎ দেখা গেল, উর্ধ্বাঙ্গ সম্পর্ণ অনাবৃত করে দুই মহিলা নেমে পড়েছেন মাঝরাস্তায়। কখনও দৌড়ে, তো কখনও প্রায় হামাগুড়ির ভঙ্গিতে। তাঁদের পিঠে লেখা, ‘স্বাগত যুদ্ধাপরাধীরা’। আর বুকে কালো কালিতে— ‘ভুয়ো শান্তিপ্রতিষ্ঠাতা’। স্লোগানে বোঝা গেল, আমেরিকা এখনও বিশ্বের একটা বড় অংশের কাছে ‘যুদ্ধবাজ’ই। ফ্রান্সের পুলিশ ব্যাপারটা বেশি দূর গড়াতে দেয়নি। কিন্তু পরে প্যারিসের রাস্তায় রাস্তায় উড়তে দেখা গেল ‘ট্রাম্প-বেলুন’। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরোধিতায় নামল ৫০টিরও বেশি সংগঠন।

এ দিন ‘আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ’-এ বেশির ভাগ রাষ্ট্রনেতারা একসঙ্গে এলেও, ট্রাম্প আসেন আলাদা। হোয়াইট হাউস বলল— প্রোটোকল। একা এলেন পুতিনও। ক্রেমিলিন যদিও এর কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। মাকরঁ-ম্যার্কেলদের সঙ্গে সার দিয়ে দাঁড়ানোর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মোটামুটি সবার সঙ্গেই হাত মেলাতে দেখা যায়। ব্যাতিক্রম শুধু ট্রুডো। সেই ট্রুডো, যাঁকে ট্রাম্প এর আগে ‘অসৎ এবং দুর্বল’ বলে বিঁধেছিলেন! যুদ্ধের আঁচটা তাই রয়েই গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE