Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জেরুজালেমে সংস্কার যিশুর সমাধিক্ষেত্রে

গত দু’শো বছরে হাত পড়েনি। তাই অবিলম্বে ঠিক করা জরুরি হয়ে পড়েছিল বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। টানা ন’মাস ধরে চলেছে সংস্কারের কাজ। এ বার চাক্ষুষ দেখার পালা।

সংবাদ সংস্থা
জেরুজালেম শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

গত দু’শো বছরে হাত পড়েনি। তাই অবিলম্বে ঠিক করা জরুরি হয়ে পড়েছিল বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। টানা ন’মাস ধরে চলেছে সংস্কারের কাজ। এ বার চাক্ষুষ দেখার পালা।

ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পরে যে সমাধিক্ষেত্রে যিশুখ্রিস্টের দেহ শায়িত রয়েছে বলে মনে করা হয়, সংস্কার হয়েছে মূলত সেটিরই। বুধবার জেরুজালেমের পুরনো শহরে ‘হোলি সেপালকর’ গির্জায় এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ফের খুলে দেওয়া হবে মিনারের মধ্যে থাকা সেই সমাধিক্ষেত্র।

গ্রিক বিজ্ঞানী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দলের নজর ছিল মিনারের মধ্যে থাকা সমাধি-কক্ষের ঠিক উপরের একটি ছোট আকৃতির অংশে। তাকে বলা হয় এডিকিউল। খ্রিস্ট ধর্মে এটিই সব চেয়ে পবিত্র মিনার হিসেবে গণ্য হয়। এই সংস্কারের প্রকল্প যারা দেখাশোনা করেছে সেই ‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড’-এর বনি বার্নহ্যাম বলছেন, ‘‘এটা মিনারের পূর্ণ রূপান্তরণ। এখনই সংস্কারে হাত না দিলে যে কোনও অংশ ভেঙে পড়ার ঝুঁকি ছিল।’’ সংস্কারে খরচ হয় ২৬ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা।

অ্যাথেন্সের ‘ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’-র ৫০ জন বিশেষজ্ঞ সূক্ষ্ম সংস্কারের কাজ করেছেন নিপুণ ভাবে। এঁদের হাতেই এর আগে অ্যাথেন্সে সংস্কার হয়েছে অ্যাক্রোপলিস-এর। এঁরা কাজ করতেন মূলত রাতে। যাতে দর্শনার্থীরা সমাধিক্ষেত্র দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন। পাথরে খোদাই সমাধিক্ষেত্রের উপরে মার্বেলের একটি ঢাকনা গত অক্টোবরে প্রথম তোলা হয়। সেটি দেখে বিশেষজ্ঞরা বোঝার চেষ্টা করছিলেন সমাধি-শয্যায় যেখানে যিশুর দেহ রাখা আছে, সেই পাথর কী রকম অবস্থায় রয়েছে। সংস্কারের ওই মার্বেল ঢাকনায় একটা ছোট জানলা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা ওই শয্যার পাথর এক ঝলক দেখতে পান। মিনারের মধ্যে পুণ্যার্থীদের মোমবাতি গলে গলে পড়ে থাকা অংশ ছেঁচে তুলে সাফ করা হয়েছে। সংস্কারে ব্যবহার হয়েছে অত্যাধুনিক রেডার থেকে শুরু লেজার স্ক্যানার এবং ড্রোনও।

বুধবারের অনুষ্ঠানে হাজির থাকছেন অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু এবং পোপ ফ্রান্সিসের এক প্রতিনিধি। ‘হোলি সেপালকর’ গির্জাটি জেরুজালেমের কেন্দ্রস্থলে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, শহরের এই অংশেই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন যিশু। তার পরে সমাহিত এবং পুনর্জীবন লাভ। সারা পৃথিবী থেকে গির্জার ভিতরে মিনারটি দেখতে আসেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। ‘যিশুর সমাধি’ দেখার জন্য দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে এই মিনারে ঢুকে চোখের জল বাঁধ মানে না বহু পুণ্যার্থীর। কখনও হাতে প্রিয়জনের ছবি, কখনও ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তি।

এই বিশেষ গির্জায় ভাগে ভাগে অধিকার রয়েছে ল্যাটিন (রোমান ক্যাথলিক), গ্রিক অর্থোডক্স, আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টোলিক, সিরিয়ান অর্থোডক্স, ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স গির্জার। অতীতে দায়িত্ব এবং দখল নিয়ে তিক্ততা ছড়ায় এত জন ‘অভিভাবকের’ মধ্যে। যার ফলে দশকের পর দশক পার হয়ে গিয়েছে, সংস্কারের কথা হয়নি। এই অভিভাবকদের লড়াই-বিশ্বাসহীনতার জেরে সেই ১২০০ শতাব্দী থেকে গির্জার চাবি গচ্ছিত এক মুসলিম পরিবারের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jerusalem Jesus’ Tomb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE