Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শরণার্থী জীবনে রং আনেন জোয়েল

লম্বা কাপড়ে রঙের আঁচড় টানছে কচিকাঁচারা। উৎসাহ দিচ্ছেন জোয়েল বার্গনার।এ বছর পা রেখেছেন বাংলাদেশের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে। মে মাসের শেষ সপ্তাহটা সেখানে থেকে বোঝার চেষ্টা করেছেন তাঁদের যন্ত্রণা।

হাসিমুখ: কচিকাঁচাদের সঙ্গে জোয়েল। —নিজস্ব চিত্র।

হাসিমুখ: কচিকাঁচাদের সঙ্গে জোয়েল। —নিজস্ব চিত্র।

অন্বেষা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:৪৪
Share: Save:

লম্বা কাপড়ে রঙের আঁচড় টানছে কচিকাঁচারা। উৎসাহ দিচ্ছেন জোয়েল বার্গনার। নিউ ইয়র্কবাসী এই ম্যুরাল শিল্পী প্রথম বিশ্বের স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে যখন তখন পাড়ি দেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। ঘুরে গিয়েছেন কলকাতা, শিলিগুড়িও।

বছর পাঁচেক আগে যাত্রা শুরু। বন্ধু ম্যাক্স ফিডারের সঙ্গে মিলে তৈরি করেছেন ‘আর্টোলিউশন কোম্পানি’। সঙ্কটে থাকা মানুষদের রং-তুলিতে টেনে আনার কাজে কখনও জর্ডনে সিরীয় শরণার্থী শিশুদের কাছে। কখনও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে প্যালেস্তাইনিদের পাশে। আর এ বছর পা রেখেছেন বাংলাদেশের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে। মে মাসের শেষ সপ্তাহটা সেখানে থেকে বোঝার চেষ্টা করেছেন তাঁদের যন্ত্রণা। শিল্পীর চোখ কি সিরীয় শরণার্থীদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মিল খুঁজে পায়?

জোয়েল বলেন, “কিছু মিল অবশ্যই আছে। কারও সঙ্কটকে ছোট না করে বলছি, রোহিঙ্গাদের কষ্ট একেবারে আলাদা। নিজের দেশই ওঁদের কাছে ভয়াবহ। সিরিয়ায় যত দিন যুদ্ধ শুরু হয়নি, জীবনযাপন স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের যে ভাবে থাকতে হয়েছে এত দিন, তা ভয়ঙ্কর। নিজের দেশে যাদের হাত-পা বাঁধা, তাঁদের কাছে পরদেশের অস্থায়ী শিবিরেই স্বস্তি। তাই ওঁদের অনেকেই ফিরে যেতে চান না।”

জোয়েল জেনেছেন, যাঁরা ফেরার কথা ভাবেন, তাঁরা বলেন, ‘স্বাধীনতা পাব নিশ্চিত জানলে তবেই যাব।’ রাষ্ট্রপুঞ্জের বাহিনীর সাহায্য চান ওঁরা। মায়ানমারের গ্রামে যেখানে তাঁদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, চান সেগুলো আবার তৈরি করে দেওয়া হোক। সরকারি সিলমোহর থাকুক তাতে। যাতে কেউ চাইলেই উৎখাত করতে না পারে। কিন্তু মায়ানমার সরকার এ সবের অনেক কিছুই মানবে না, তাঁরা জানেন। তাই ফেরার কথা ভেবেও পিছিয়ে যান। জোয়েল বলেন, “আমি বিশেষজ্ঞ নই। তবু বুঝি, মায়ানমারে ওঁদের ফেরা নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশে পাকাপাকিভাবে থাকা নিশ্চিত নয়। ওঁদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।” এই পরিস্থিতিতেও রোহিঙ্গা শিবিরে রংতুলিতে আগ্রহ অবাক করেছে জোয়েলকে। চার জন পুরুষ ও চার জন মহিলা শিল্পীকে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাঁরা।

জর্ডনের যে শিবিরে জোয়েল গিয়েছিলেন, সেটি ছিল মরুভূমির আশপাশে। তিনি যখন টেকনাফ সীমান্তে এলেন, তখন বর্ষা নামার অপেক্ষা। বৃষ্টিতে মাটি আর বাঁশের শিবির টলোমলো। “লোকজনের চোখে অদ্ভুত আতঙ্ক। বালির বস্তা দিয়ে কোনওমতে ঠেকা দিয়ে চলছে। অনেকের আশঙ্কা, বর্ষা পুরোপুরি নামলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।” বলছেন জোয়েল।

সদ্য কন্যাসন্তানের এই জনক শিবিরের শিশুদের সঙ্গে মিশে যান অনায়াসে। জানান, সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপে ইতিউতি খেলে বেড়ায় শিশুরা। জোয়েল বার করে আনেন ওদের ভিতরের শিল্পীকেও। “প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা, ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় দেশ ছেড়ে চলে আসা— সব অভিজ্ঞতা রয়েছে ওদের শৈশবে। এত সঙ্কটে শিশুদের থাকার কথা নয়,” বলে যান জোয়েল। তবু ওদের খেলা-গান-ছবি আঁকা আছে। নানা বয়সের শিশুরা তাঁর কাছে স্বপ্নের কথা বলে। কেউ ডাক্তার হবে। কেউ শিক্ষক। কেউ বলে দেশ ঘুরবে। কেউ বিয়ে করে ঘর বাঁধার কথাও বলে। কেউ বলে স্বাধীনতার কথা। শান্তিরও। ভাষা বাধা হয়নি।

বাংলাদেশে এসে জোয়েল শিখেছেন কিছু বাংলা শব্দ। শিশুদের কেউ কেউ জানে একটু-আধটু ইংরেজি। তাতেই মন ছুঁয়ে যায়। শিল্পী বলেন, “বেশি প্রশ্ন করে ওদের কষ্ট দিই না, আমি তো সাংবাদিক নই!” দক্ষতা বাড়ানোর কর্মশালায় জোয়েল শুধুই বন্ধু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Joel Bergner Street Artist Rohingya Refugees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE