অভিনব: প্রাচীন মিশরীয় অলঙ্কার ও (নীচে) সেই পাথর।
হলদে-সবুজ রঙা, কাচের মতো স্বচ্ছ মরু-সাগরের পাথর। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, ‘লিবিয়ান ডেজ়ার্ট গ্লাস’ বা ‘গ্রেট স্যান্ড সি গ্লাস’। পশ্চিম মিশরের মরুভূমিতে যত্রতত্র মেলে। প্রাচীন মিশরীয়দের খুব পছন্দের ছিল এই পাথর। তাঁরা গয়না বানিয়ে পরতেন।
কিন্তু এমন পাথর কেন শুধু ওখানেই মেলে? তারা কোত্থেকেই বা এল? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে সমাধান হল কয়েকশো বছরের রহস্য। জানা গেল— ওই পাথরের আড়ালে রয়েছে ‘উল্কাপাত’।
১৯৯২ সালে ব্রিটিশ ভূপর্যটক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার তুতেনখামেনের গুপ্তধন উদ্ধার করেছিলেন। রাজার ধনরত্নের মধ্যে তিনি একটি দামি পাথরে মোড়া ব্রেস্টপ্লেট খুঁজে পান। তাতেও তিনি দেখতে পান, ওই মরু-সাগরের পাথর।
রহস্যময় পাথর নিয়ে বহু গবেষণা, পড়াশোনা, খোঁজখবর চলছিল এত দিন। কার্টার তুতেনখামেনের ওই ব্রেস্টপ্লেট খুঁজে পাওয়ার পরে আরও তোড়জোড় শুরু হয়, পাথরটি কী? প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল, প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ বছর আগে ওই ধরনের পাথরের জন্ম। পৃথিবীর খুব কাছে কোনও একটি গ্রহাণুতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তার জেরেই বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক শক্তি ঘনীভূত হয়, বাতাসে বিস্ফোরণ ঘটে। যাকে বলে ‘এয়ারব্লাস্ট’। তাতেই ওই পাথরের জন্ম। মরুভূমির বালি উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল সেই এয়ারব্লাস্টে। প্রচণ্ড উত্তাপে বালি গলে যায়। পরে তা জমে গিয়ে পাথরটি তৈরি হয়।
কিন্তু নয়া গবেষণায় পুরনো তথ্য খারিজ করা হয়েছে। কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যারন ক্যাভোসির বিশ্বাস, প্রচণ্ড গতিতে মিশরের মরুভূমিতে আছড়ে পড়েছিল উল্কা। তার জেরেই এই কাণ্ড। ওই পাথরে উপস্থিত ‘জ়িরকন’ নামের একটি খনিজ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পরে অ্যারনের দেওয়া তথ্য ‘জিয়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। অ্যারনের দাবি, ওই পাথরে থাকা জ়িরকন অন্য একটি খনিজের সন্ধান দিয়েছে। সেটির নাম ‘রিয়েডায়েট’। এক মাত্র উল্কাপাতের জেরেই ওই খনিজটি তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘‘উল্কাপাত না এয়ারব্লাস্ট, কী থেকে পাথরটি তৈরি হয়েছে, সে নিয়ে বিতর্ক অবশ্য এখনই মিটছে না।’’
অ্যারনের কথায়, ‘‘উল্কাপাত বা এয়ারব্লাস্ট, দু’টোর জন্যই বালি গলে গিয়ে ওই ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র উল্কাপাতেই শক্তি-তরঙ্গ তৈরি হতে পারে, যা রিয়েডায়েট তৈরি করতে সক্ষম।’’ তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালে রাশিয়ার চিলিয়াবিনস্কে এয়ারব্লাস্ট হয়েছিল। সে সময়ে পাথর-রহস্যের পিছনে ওই তত্ত্বটি আরও জোরদার হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীদের নজর এড়িয়ে বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়েছিল উল্কা এবং তা বাতাসে বিস্ফোরণ ঘটায়। সাত হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু মিশরের ঘটনায়, উল্কা সরাসরি এসে মাটিতে আছড়ে পড়েছিল বলে দাবি অ্যারনের। বলেন, ‘‘উল্কাপাতের পরিণতি কখনও কখনও ভয়াবহ হয়। কিন্তু অল্পই ঘটে। ফলে আবার একটা ‘লিবিয়ান ডেজ়ার্ট গ্লাস’ তৈরির সম্ভাবনা এখনই নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy