Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

শৌচালয় মুছে দিন শুরু হত ওদের

অসভ্যতা করবে না। খাবার ভাগ করে খাবে না। নিজের ডাকনাম বলবে না। কাঁদবে না। এগুলো করলে কপালে আরও দুঃখ আছে! এমন হাজারো বারণ। বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন শরণার্থী শিশুদের যে সব আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, সেখানে এই নিয়ম-নীতির বেড়াজালে বিপন্ন শৈশব।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
টেক্সাস শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫৭
Share: Save:

অসভ্যতা করবে না। খাবার ভাগ করে খাবে না। নিজের ডাকনাম বলবে না। কাঁদবে না। এগুলো করলে কপালে আরও দুঃখ আছে!

এমন হাজারো বারণ। বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন শরণার্থী শিশুদের যে সব আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, সেখানে এই নিয়ম-নীতির বেড়াজালে বিপন্ন শৈশব। বাচ্চাদের বলা হচ্ছে, কথামতো না চললে বাবা-মায়ের কাছে ফেরা আরও কঠিন।

তাই রাত ন’টায় আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়া, কাকভোরে ওঠা। তার পরে শৌচালয় সাফাই। তবে মিলবে প্রাতরাশ। গুয়াতেমালার লেতিসিয়া বলে, ‘‘সব কিছুর জন্যই লাইন দিতে হত।’’ লম্বা কালো চুলের ছোট্ট মেয়েটা গত মে মাসে মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে বেআইনি ভাবে সীমান্ত পেরোতে গিয়ে। দক্ষিণ টেক্সাসের কেন্দ্রে রয়েছে সে। বছর বারোর লেতিসিয়ার সঙ্গে দু’বছরের ছোট ভাই ওয়াল্টার-ও রয়েছে। ওদের বলে দেওয়া হয়েছে, অন্য বাচ্চাদের ছোঁয়া যাবে না। ভাই-বোন হলেও না। ভাইকে ভরসা দিতে চেয়েও তাই পারেনি লেতিসিয়া।

মেক্সিকো সীমান্তে বিচ্ছিন্ন অভিবাসী শিশুদের সঙ্কটে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর জ়িরো টলারেন্স নীতি বদলে প্রশাসনিক নির্দেশ আনেন। গত সপ্তাহে কোর্টের নির্দেশ মেনে পাঁচ বছরের নীচে ১০৩ জন শরণার্থী শিশুর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশুকে ফেরানো হয়েছে। কিন্তু ২৮০০-রও বেশি শিশু এখন অনিশ্চয়তায় ডুবে। এক ছাদের তলায় নানা দেশের নানা বয়সি বাচ্চা— জানে না বাবা-মায়ের সঙ্গে ফের কবে দেখা হবে। লেতিসিয়ার মা যেমন আটক রয়েছেন অ্যারিজ়োনায়। মাকে চিঠি লেখে মেয়ে। কিন্তু বকুনির ভয় আছে যে! ডর্ম রুমে কিছু লেখা যাবে না। তাই ছোট বাক্সে চিঠিগুলো জমাচ্ছে লেতিসিয়া। মায়ের সঙ্গে দেখা হলে সব একসঙ্গে দেবে, ভেবেছে সে।

শিকাগোর এক কেন্দ্রে ৪৩ দিন আটক ছিল ব্রাজ়িলের দিয়েগো মেগালেস। বয়স ১০। মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সময়ে সে মাকে কথা দিয়েছিল, কাঁদবে না। কথা রেখেছে। ওই কেন্দ্রে ব্রাজ়িলেরই আরও দু’টি ছেলে ছিল। ৯ বছরের দিয়োগো আর ১০-এর লিওনার্দো। তিন জনে বন্ধু হয়ে যায়। পরে কোর্টের নির্দেশে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হয় দিয়েগোর। বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ার সময়ে জড়িয়ে ধরতেও পারেনি সে। নিয়ম নেই যে।

কিছু কিছু কেন্দ্রে আছে খেলার ব্যবস্থা। অল্পবিস্তর পড়াশোনাও। অঙ্ক, ইতিহাস, সিভিকস। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের নাম। ট্রাম্পের কথাও শুনেছে গুয়াতেমালার আর এক কিশোরী ইয়োজ়েলিন। টেক্সাসের গরম হাওয়ায় এক ঘণ্টা ধরে শারীরিক কসরত। বাইরের খোলা জায়গা থেকে পালানোর চেষ্টা অস্বাভাবিক নয়। ইয়োজ়েলিন জানায়, কেউ ছোটাছুটির চেষ্টাই করে না। ফিসফাসও নয়। দিন পনেরো আগে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে।

২৪ জুন, রবিবার ছিল ভিক্টর মনরয়ের জন্মদিন। কেউ তো জানেই না শিকাগোর আটক কেন্দ্রে। চুপিচুপি ১১। কেউ তো গান গাইল না! গুয়াতেমালায় মা গাইত। ভিক্টর তাই নিজেই এক বার বড়দের গিয়ে বলে, আজ আমার জন্মদিন। ওরা শুধু ‘‘শুভ জন্মদিন’’ বলে চলে যায়। বোন লেইদিও আছে তার মতো। কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে। খেলার সময়টুকু দেখা। দু’সপ্তাহ পরে খোঁজ মিলেছে বাবার। আপাতত স্বস্তিতে ভিক্টর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE