Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেরা সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে কি না, অভিভাবকরা নজর রাখুন: হাসিনা

ছেলেরা সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে কি না— অভিভাবকরা নজর রাখুন। শুক্রবার রাতের ভয়াবহ জঙ্গি হানার পরে বাংলাদেশের অভিভাবকদের উদ্দেশে এই আর্জিই জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তখনও উদ্বেগ। জঙ্গিদের হাতে পণবন্দি ছিলেন হোসনে আরা করিম নামে এই মহিলার ছেলে-বৌমা। পরে অবশ্য উদ্ধার করা হয় তাঁদের। ছবি: এপি।

তখনও উদ্বেগ। জঙ্গিদের হাতে পণবন্দি ছিলেন হোসনে আরা করিম নামে এই মহিলার ছেলে-বৌমা। পরে অবশ্য উদ্ধার করা হয় তাঁদের। ছবি: এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

ছেলেরা সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে কি না— অভিভাবকরা নজর রাখুন। শুক্রবার রাতের ভয়াবহ জঙ্গি হানার পরে বাংলাদেশের অভিভাবকদের উদ্দেশে এই আর্জিই জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কী সেই সঠিক শিক্ষা? সেটাও বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইসলাম ধর্মের নামে মানুষ খুনের কথা বলে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্মে শান্তি ও সহাবস্থানের কথাই বলা হয়েছে। কিছু অল্পবয়সী ছেলেকে ভুল শিক্ষা দিয়ে বিপথগামী করে তোলা হচ্ছে। তাতে কলুষিত হচ্ছে ইসলাম। এখন অভিভাবকদেরই নজর রাখতে হবে তাঁদের ছেলেদের ওপর, তারা যাতে বিপথে না যায়।

শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় এই আবেদন জানান হাসিনা। তার আগে সকালে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘রমজানের দিনে এশার আজানের পরে তো সব মুসলমানের নমাজ পড়ার কথা। নমাজ না-পড়ে এরা গেল মানুষ মারতে! এ কেমন মুসলমান তারা!’’ হাসিনার বিস্ময়, দেশের মানুষ হয়ে এরা কী ভাবে দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে! আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এরা তো এ দেশেরই ছেলে! হোটেলের মধ্যে কী যে ভয়ানক ভাবে তারা মানুষ খুন করেছে, চোখে দেখা যায় না।’’

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ভুল শিক্ষাতেই ‘মাথা নষ্ট’ করা হচ্ছে কিছু সুকুমারমতি ছেলের। তার পরে এই সব বিপথগামী ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের উন্নতি যারা সহ্য করতে পারে না, তারাই জঙ্গিদের অভিযানে পাঠাচ্ছে। মানুষ খুন করে দেশের নামে কলঙ্ক ছেটানো তাদের লক্ষ্য।’’ বাংলাদেশে জঙ্গিদের সাম্প্রতিক উত্থানের প্রতিবাদে সরব হয়েছে অনেক সংগঠন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদেও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে সরব হয়েছেন বাংলাদেশের বহু মানুষ। নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাশালী এক সাংসদের হাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক প্রধান শিক্ষকের হেনস্থার বিরুদ্ধে কান ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ছাত্ররা। দেশ জুড়ে এই অভিনব প্রতিবাদের ফলে কড়া ব্যবস্থা নিতে হয় সরকারকে।

কিন্তু শুধু প্রশাসনিক কড়াক্কড়িতে যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে ঠেকানো যাচ্ছে না, হাসিনা প্রশাসন তা বুঝেছে। সে জন্য তরুণদের বিপথগামিতা ঠেকানোর একটা অন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। আর এ কাজে তাদের হাতিয়ার ইসলামের ‘সঠিক শিক্ষা’। কোরান ও তার সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া বেশ কিছু বইকে পাঠ্য করা হয়েছে স্কুল ও মাদ্রাসাগুলিতে। ইসলাম যে ধর্মের নামে মানুষ খুনকে নিন্দা করে, জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না— তা এখন স্কুল পর্যায় থেকে শেখানো হচ্ছে তরুণদের। এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে সরকার।

এর সঙ্গেই দেশের এক লক্ষ কুড়ি হাজার আলেম-উলেমাকে পাশে টেনেছে সরকার। তারা ফতোয়া দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে ইসলাম-বিরোধী বলে বর্ণনা করেছে। ইসলাম যে সম্প্রীতির ধর্ম, সহাবস্থানের ধর্ম— সে কথাও বলা হয়েছে ফতোয়ায়। দেশের বহু প্রভাবশালী আলেম ও উলেমা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এই ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। চর্চার জন্য এই ফতোয়ার কপি বাংলাদেশের সব মসজিদে রাখা হচ্ছে। মাদ্রাসায় তা পড়ানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে খামতি দিচ্ছে না সরকার। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৩ হাজার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে বহু জঙ্গি রয়েছে। একই সঙ্গে যুবকদের বিপথগামিতা ঠেকাতেও মরিয়া প্রচেষ্টায় নেমেছে সরকার। ভয়াবহ এই জঙ্গি হানার পরে অভিভাবকদের উদ্দেশে হাসিনার আর্জি তাই বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sheikh hasina terrorist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE