Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘চৈত্র সেলের’ সিঙ্গাপুরে কি দর কষাকষি!

কাল সকালে ফের বরফ গলার ইঙ্গিত সিঙ্গাপুরে। কোরিয়া যুদ্ধের পরে এই প্রথম এক টেবিলে বসছে আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়া।

আগাম: বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্মদিন। সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারই উদ্যাপন। ছবি: এপি।

আগাম: বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্মদিন। সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারই উদ্যাপন। ছবি: এপি।

তারক দাস
সিঙ্গাপুর শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

শুরুটা হয়েছিল শীতকালীন অলিম্পিক্স দিয়ে। ফেব্রুয়ারিতে আসর বসেছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়। আর তার মাস খানেক আগেই যৌথ বৈঠকে ঠিক হয়ে যায়, সেখানে টিম পাঠাতে তৈরি উত্তর কোরিয়া। একটু একটু করে বরফ গলতে শুরু করে দুই কোরিয়ার। কাল সকালে ফের বরফ গলার ইঙ্গিত সিঙ্গাপুরে। কোরিয়া যুদ্ধের পরে এই প্রথম এক টেবিলে বসছে আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়া। এ দিকে বিশ্বকাপের আর তিন দিন বাকি। মস্কোয় জোর প্র্যাকটিস চলছে রোনাল্ডো-মেসিদের। তবু রাশিয়ার চোখ সিঙ্গাপুরেই।

শুধু রাশিয়া নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের বৈঠকে কী হয়, সে দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্বই। শোনা যাচ্ছে, হাসিমুখে পরস্পরকে করমর্দন করে বৈঠকে বসবেন ‘মোটা খ্যাপাটে বুড়ো’ আর ‘বেঁটে রকেট ম্যান’।

কয়েক মাস আগেও দু’জনে দু’জনকে হুমকি দিতেন— উড়িয়ে দেব। এখন দু’জনের মধ্যে দূরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি নয়। শাংগ্রি-লা হোটেলে উঠেছেন ট্রাম্প। আর কিম, সেন্ট রেজিস সিঙ্গাপুরে। আর কয়েক দিন পরেই ট্রাম্পের জন্মদিন। তাই তাঁর জন্য বিশেষ ভোজের আয়োজন করেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে কেক কাটেন ট্রাম্প। খোশমেজাজে ছিলেন কিম-ও। সন্ধেবেলা বোন কিম ইয়ো জংকে নিয়ে হাঁটতে বেরোন। সঙ্গে ছিলেন সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী ভিভিয়ান বালকৃষ্ণন।

আরও পড়ুন: কী করবেন খামখেয়ালি ট্রাম্প, উদ্বেগে আমেরিকা

কাল সকাল ৯টায় বৈঠক শুরু হচ্ছে দক্ষিণের রিসর্ট-দ্বীপ সেন্টোসার ক্যাপিলা হোটেলে। ট্রাম্পের দফতর সূত্রের খবর, কাল দুই নেতার সঙ্গে থাকবেন শুধু দোভাষীরা। সেন্টোসা আদতে বিনোদন পার্ক। যার মধ্যে ইউনিভার্সাল স্টুডিয়ো থেকে শুরু করে ক্যাসিনো— সবই রয়েছে। মালয় ভাষায় ‘সেন্টোসা’-র অর্থ ‘শান্তি ও স্থিরতা’। এই বৈঠক নিয়ে যে সিঙ্গাপুর তিনটি স্মারক প্রকাশ করেছে, তার একটিতে লেখা— ‘বিশ্বশান্তি’।

ফুটবল ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের মতোই উত্তেজনায় ফুটছে সিঙ্গাপুর। এখানে এখন ‘দ্য গ্রেট সিঙ্গাপুর সেল’ চলছে। আমাদের যেমন চৈত্র সেল! তবু সব ছাপিয়ে যাচ্ছে কিম-ট্রাম্পের বৈঠক। তাবড় দুই রাষ্ট্রনেতার কনভয় দেখতে কাল থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন সিঙ্গাপুর। কিমের কনভয় যাবে আর্চার্ড রোড দিয়ে। আর ট্রাম্পের অ্যান্ডারসন রোডে।

কালই এক জন ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। জানালেন, বছর তিরিশ আগে খিদিরপুর ডকে চাকরি করতেন। এখন অবশ্য তাঁর ধ্যানজ্ঞান সিঙ্গাপুরই। তাঁর কথায়, ‘‘নিরাপত্তার কড়াকড়িতে বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ থাকবে ক’দিন। ভাড়াও হয়তো কম জুটবে। কিন্তু তাতে কী? এই বৈঠকের আয়োজন গোটা বিশ্বকে আরও এক বার জানিয়ে দেবে সিঙ্গাপুর কতটা নিরপেক্ষ এবং নিরাপদ দেশ।’’

দেশের বেশির ভাগ ভাল হোটেলেই এখন জায়গা নেই। দেশ-বিদেশ থেকে সাংবাদিক এসেছেন অন্তত ৩ হাজার। তাঁদের জন্য কাল পেল্লাই ভোজেরও বন্দোবস্ত থাকছে। ১৫টি দেশের ৪৫ রকমের খাবার পড়বে তাঁদের প্লেটে। থাকবে ভারতীয় পোলাও এবং চিকেন কোর্মাও।

কিন্তু বৈঠক আদৌ ফলপ্রসূ হবে তো! আজ সকালেই ট্রাম্প টুইট করেছেন, ‘‘সিঙ্গাপুরে এসে দারুন লাগছে। সর্বত্র উত্তেজনা।’’ মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ পরমাণু অস্ত্র-ছাড়া করাটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’’ তবে বলেছেন, ‘‘পিয়ংইয়্যাং রাজি না হলে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকবে।’’

আর এখানেই প্রশ্ন— কিম রাজি হবেন কেন? ‘অস্ত্রে অরুচি’র কথা জানিয়ে কিম জানিয়েছিলেন, এ বার তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মন
দিতে চান। তাই বৈঠকে কিম ট্রাম্পের কাছে কী চেয়ে বসেন সেটাই দেখার। ট্রাম্প অবশ্য আগেই বলে রেখেছেন, এক বৈঠকে সব সমাধান হওয়ার নয়। আজ তিনি ফোন করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন-কে। তাঁকে বলেন, ‘‘বৈঠক নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।’’

কূটনীতিকদের একাংশ তবু বলছেন, ট্রাম্পের এক কথায় হেলায় সব অস্ত্র ছেড়ে দেওয়ার বান্দা কিম নন। পিয়ংইয়্যাংয়ে যেমন ‘আমেরিকা বিরোধী’ জাদুঘর রয়েছে, কোরীয় উপদ্বীপে তেমনই দিব্যি ঘাঁটি গেড়ে রেখেছে মার্কিন সেনা। বৈঠক ইতিবাচক হলে, সেনা সরিয়ে নেওয়ার নিয়ে এখনও সদর্থক কোনও ইঙ্গিত দেয়নি ওয়াশিংটন। বৈঠকের পুরো ব্যাপারটাই তাই ট্রাম্পের ‘লোকদেখানো’ বলে মনে করছেন অনেকে। সিঙ্গাপুরেরই এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘ট্রাম্প বরাবরই প্রচার ভালবাসেন। এ বারও তাঁর লক্ষ্য বিশ্বের সেরা ‘ডিল-মেকার’ হিসেবে একটা ভাবমূর্তি গড়ে তোলা।’’

আর যদি বৈঠক ফলপ্রসূ না হয়? ‘শট-সার্কিটের’ ভয় পাচ্ছেন অনেকে। দু’দেশের মধ্যে ফের সংঘাতের আশঙ্কাও অমূলক নয় বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।

(লেখক সিঙ্গাপুরে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE