Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
international news

শব্দের অস্ত্রে কূটনীতিক তাড়াতে চাইছে চিন? উদ্বেগ আমেরিকার

শোনা যাচ্ছে, সেই ভুতুড়ে শব্দ কানে যাওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিনে থাকা মার্কিন কূটনীতিকরা। উদ্বেগে-উৎকষ্ঠায় স্বাস্থ্য অ্যালার্ট জারি করেছে আমেরিকা। সেই শব্দ শুনে অসুস্থ হয়ে পড়া কূটনীতিকদের ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখছেন দক্ষিণ চিনের গুয়াংঝু শহরে মার্কিন কনস্যুলেটে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং।- ফাইল চিত্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং।- ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ১৮:৪২
Share: Save:

আমেরিকার কপালে আবার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে চিন!

বেজিংয়ের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক বাড়বৃদ্ধিতে উষ্মা তো ছিলই, এ বার ভুতুড়ে এক শব্দের অস্ত্রও (সোনিক ওয়েপ্‌ন) চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটনের। তাদের সন্দেহ, শব্দ দিয়ে মার্কিন কূটনীতিকদের ‘মগজধোলাই’-এর ফন্দি আঁটা হয়েছে!

শোনা যাচ্ছে, সেই ভুতুড়ে শব্দ কানে যাওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিনে থাকা মার্কিন কূটনীতিকরা। উদ্বেগে-উৎকষ্ঠায় স্বাস্থ্য অ্যালার্ট জারি করেছে আমেরিকা। সেই শব্দ শুনে অসুস্থ হয়ে পড়া কূটনীতিকদের ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখছেন দক্ষিণ চিনের গুয়াংঝু শহরে মার্কিন কনস্যুলেটে। অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েক জন কূটনীতিককে আমেরিকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে এক জনের ব্রেন ট্রমা ধরা পড়েছে।

অসুস্থ হয়ে পড়া মার্কিন কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, কোথা থেকে আচমকা একটা ভারী ধাতব শব্দ হয়। চার পাশ ঝনঝন করে ওঠে। শব্দটা তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে অনেকটা দূর পর্যন্ত। আর সেই শব্দটা যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা বলছেন, শব্দটা কানে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায় মাথায়। ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যেতে থাকে। মাথা ঘুরতে শুরু করে, মাথা ঘামতেও থাকে।

আমেরিকার সন্দেহ, ওই শব্দের অস্ত্রে কাবু করেই দেশ থেকে মার্কিন কূটনীতিকদের হঠাতে চাইছে বেজিং।

চিনের আগে কিউবায়...

বছরদু’য়েক আগেও এই শব্দের অস্ত্রে কাবু হতে হয়েছিল মার্কিন কূটনীতিকদের। কিউবায়। ২০১৬ সালে ওই অস্ত্রে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাভানা থেকে ওয়াশিংটনে ফেরত পাঠাতে হয়েছিল ২৪ জন মার্কিন কূটনীতিককে। তবে এটা নিশ্চিত করে এখনও বলা যায়নি, ওই মার্কিন কূটনীতিকরা হাভানায় ভুতুড়ে শব্দের অস্ত্রেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

আরও পড়ুন- কিমের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা পম্পেয়োর​

আরও পড়ুন- ব্যাকফ্লিপ দিতেই পকেট থেকে বেরিয়ে পড়ল পিস্তল! চলল গুলিও, তারপর...​

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক ডগলাস স্মিথও বলেছেন, ‘‘শ্রবণযোগ্য শব্দতরঙ্গ দিয়ে ব্রেন (মস্তিষ্ক)-এর তেমন কোনও ক্ষতি হতে পারে না। অন্তত এমন কিছু এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের জানা নেই। বরং আমরা নিশ্চিত, শব্দের জন্য ওঁরা (হাভানায় অসুস্থ হয়ে পড়া মার্কিন কূটনীতিকরা) অসুস্থ হয়ে পড়েননি।’’

মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর ‘আক্রমণ’, সন্দেহ

কিউবার পর চিন। দু’টি কমিউনিস্ট দেশেই মার্কিন কূটনীতিকদের এই ভুতুড়ে শব্দের অস্ত্রে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় মার্কিন প্রশাসনে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, এই সবের পিছনে কোনও গোপন পরিকল্পনা আছে কি না।

মার্কিন দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর খবর জানাচ্ছে, মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করেছেন, চিন বা রাশিয়া আলাদা ভাবে অথবা গোপনে শলা-পরামর্শ করে এই ভাবে মার্কিন কূটনীতিকদের টার্গেট করছেন না তো? ওয়াশিংটন এখনও এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কিছুই বলেনি বেজিংকে। মার্কিন প্রশাসন সূত্রের খবর, গোটা ব্যাপারটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনে ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর চিন বিশেষজ্ঞ বনি গ্লেসার বলেছেন, ‘‘পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে আগ বাড়িয়ে কারও দিকে (পড়ুন, চিন) অভিযোগের আঙুল তোলাটা উচিত হবে না। আমি মনে করি না, আমেরিকা এটাকে (সোনিক ওয়েপ্‌ন) ‘আক্রমণ’ বলে মনে করছে।’’

এ বার মেপে পা ফেলতে চাইছে ওয়াশিংটন

দেশটার নাম যেহেতু চিন, তাই আমেরিকা এ ব্যাপারে খুব মেপে পা ফেলতে চাইছে। কারণ, পণ্যশুল্ককে কেন্দ্র করে হালের সাময়িক উত্তেজনার পরেও চিনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক যথেষ্টই জোরালো। আমেরিকায় চিনা পুঁজি বিনিয়োগ আরও বাড়ুক, চাইছেন মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতিদের একাংশও। আগামী ১২ জুন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের সার্বিক সাফল্য ও পিয়ংইয়ংকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেজিংকে এখন পাশে পাওয়ার খুব দরকার ওয়াশিংটনের।

সোনিক ওয়েপ্‌নের ইস্যুতে বেজিংয়ের সঙ্গে যতটা মেপে পা ফেলতে চাইছে ওয়াশিংটন, বছরদু’য়েক আগে কিউবার সঙ্গে ততটা মেপে পা ফেলেনি আমেরিকা। ২০১৬-য় শব্দের অস্ত্রে অসুস্থ হয়ে ২৪ জন মার্কিন কূটনীতিক হাভানা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে কিউবার সমালোচনা করতে দেরি করেনি ওয়াশিংটন। পাল্টা হিসেবে আমেরিকা থেকে কিউবার ১৫ জন কূটনীতিককেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। বিজ্ঞানী- বিশেষজ্ঞরা কী বললেন, তার তোয়াক্কা করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যেই শূলে চড়িয়েছিলেন কিউবা সরকারকে।

তা হলে কি মাইক্রোওয়েভ? নাকি আলট্রা-সাউন্ড?

শ্রবণযোগ্য শব্দে মস্তিষ্কের অতটা ক্ষতি হতে পারে না বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেওয়ার পর অন্য তরঙ্গের শব্দ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে মার্কিন কূটনীতিক মহলে। উঠছে মাইক্রোওয়েভ বা ইনফ্রা-সাউন্ড অথবা আল্ট্রা-সাউন্ডের কথা। প্রশ্ন উঠছে, এমন কোনও তরঙ্গের শব্দে কি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা?

কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ, ওই সব তরঙ্গের শব্দ বেশি দূর ছড়াতে পারে না। আর ওই সব তরঙ্গের শব্দ কখনও ধাতব মাধ্যমে তৈরি হয়ও না।

মার্কিন কূটনীতিকদের অসুস্থতার আদত কারণটা তা হলে কী হতে পারে?

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বললেন, নজরদারির জন্য যে ‘বাগিং’ করা হয় বা মোবাইল, ল্যাপটপ ‘জ্যাম’ করা হয়, তার ফলে ওই অসুস্থতা হতে পারে। হাভানায় মার্কিন কূটনীতিকরা যে ভুতুড়ে শব্দ শুনেছিলেন বলে জানিয়েছেন, তা ওই ‘বাগিং’ বা ‘জ্যামিং’-এর যন্ত্রগুলি থেকে বেরনো বিভিন্ন ধরনের আলট্রা-সাউন্ডের ‘ধাক্কাধাক্কি’র ফলে সৃষ্টি হয়।

দায় বর্তাতে পারে আমেরিকার কাঁধেও!

সে ক্ষেত্রে মুশকিলটা হল, দায় এড়াতে পারে না ‘বাগিং’ বা ‘জ্যামিং’-এর মার্কিন যন্ত্রগুলিও। কারণ, হাভানা যদি মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর নজরদারির জন্য ওই যন্ত্রগুলি ব্যবহার করে থাকে, তা হলে কিউবা প্রশাসনের ওপর নজর রাখার জন্য ওই সব য্ন্ত্র তো মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গেও থাকা উচিত!

তা হলে তো মার্কিন ‘অস্ত্র’-এই মার্কিন কূটনীতিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়! অন্তত সেই সম্ভাবনাটা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আর কেনই বা চিন এমনটা করবে, প্রশ্ন তুলেছেন চিনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ঝু ফেং। তাঁর কথায়, ‘‘এটা যদি চিন সরকার করে থাকে, তা হলে তো প্রশ্ন ওঠেই, তারা এটা কেন করবে? বিদেশি কূটনীতিকদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে লাভটা কী হবে চিনের? তাই এটা কোনও কারণ হতে পারে বলে আমি মনে করি না।’’

‘‘যত্তোসব আজগুবি গপ্পো’’, বলছেন অবশ্য বহু বিশেষজ্ঞই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE