Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গি পরিবারের খোঁজ, শ্রীলঙ্কায় দায় নিল আইএস

গোড়ায় সন্দেহটা ছিলই। আজ ইসলামিক স্টেট (আইএস) সরাসরি দাবি করল, ইস্টার রবিবারে শ্রীলঙ্কার গির্জা এবং পাঁচতারা হোটেলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে তাদেরই হাত রয়েছে। তদন্তে প্রকাশ, গোটা একটা পরিবার হামলায় জড়িত বলে সন্দেহ। 

হামলাকারী: সন্দেহভাজন বোমারুর সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে ঢোকার এই ছবি দেখা গিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

হামলাকারী: সন্দেহভাজন বোমারুর সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে ঢোকার এই ছবি দেখা গিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

সংবাদ সংস্থা
কলম্বো শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৩
Share: Save:

গোড়ায় সন্দেহটা ছিলই। আজ ইসলামিক স্টেট (আইএস) সরাসরি দাবি করল, ইস্টার রবিবারে শ্রীলঙ্কার গির্জা এবং পাঁচতারা হোটেলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে তাদেরই হাত রয়েছে। তদন্তে প্রকাশ, গোটা একটা পরিবার হামলায় জড়িত বলে সন্দেহ।

কলম্বোয় শাংগ্রি লা হোটেলে যে দুই আত্মঘাতী বোমারু হামলা চালিয়েছিল, তারা দুই ভাই বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। বয়স কুড়ির ঘরে। তদন্তকারী অফিসারদের মতে, তারা তাদের ‘পারিবারিক সেল’ থেকেই সক্রিয় ছিল। কলম্বোতেই তাদের বাড়ি। মশলা রফতানির ব্যবসায় জড়িত ছিল তারা। দুই ভাইয়ের এক জন হোটেলে ঢোকার সময়ে ভুয়ো পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু অন্য জন আসল ঠিকানাটাই লিখেছিল। সেটাই তদন্তে বড় সূত্র হিসেবে উঠে এসেছে। এ দিন যখন বিশেষ টাস্ক ফোর্স ওই বাড়িতে হানা দেয়, এক ভাইয়ের স্ত্রী বোমা ফাটিয়ে দুই শিশু-সহ নিজেকে শেষ করে ফেলে। তিন জন পুলিশও মারা যান। তদন্তকারীরা পরে বলেন, একটা পরিবার নিজেরা মিলেই একটা জঙ্গি সেল চালাচ্ছিল। আত্মীয়স্বজনদের কাউকে কাউকে ব্যাপারটা জানিয়েওছিল। ‘‘বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীদের দ্বারাই এরা অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রত্যক্ষ যোগ কতটা ছিল, তা স্পষ্ট নয়।’’ এ দিকে আইএস মুখপত্র আমাক হামলার দায় নেওয়ায় তাদের সঙ্গে এই পরিবারের কী ভাবে কতটা যোগাযোগ ছিল বা আদৌ ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজে থেকে দেখা গিয়েছে, সন্দেহভাজন আর এক বোমারুর ছবি। শার্ট-প্যান্ট চটি পরা এক যুবক ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঢুকছে সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে। তার আগে সে একটি বাচ্চা মেয়েকে পিঠে চাপড় দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে রাস্তা পেরোতে এগিয়ে যায়।

এ দিন শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে আবার পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, গত মাসে নিউজ়িল্যান্ডের মসজিদে বন্দুকবাজের হামলায় ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। রবিবার শ্রীলঙ্কার গির্জায় বিস্ফোরণ তারই বদলা। তবে এ ব্যাপারে কোনও প্রমাণ পেশ তিনি করেননি। বিজয়বর্ধনে এ দিন জানান, শুধু মৌলবাদী গোষ্ঠী ‘ন্যাশনাল তৌহিত জামাত’ নয়, এই বিস্ফোরণে

আরও একটি স্থানীয় গোষ্ঠী সাহায্য করেছে, যাদের নাম ‘জামিয়াতুল মিলাতু ইব্রাহিম।’ দু’টিকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য পদক্ষেপ করা হবে। নিহতদের সংখ্যা এ দিন ৩২১ ছুঁয়েছে।

নেগোম্বোর সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চের ভিতরেই আজ থেকে শুরু হয়েছে গণ শেষকৃত্য। কড়া রোদ্দুরে খালি পায়ে অশ্রুসিক্ত শয়ে শয়ে মানুষ ফুল হাতে দাঁড়িয়ে ছিল ছায়ার নীচে। তাঁদের সঙ্গে কফিনটা হাল্কা। কিন্তু শোকের ভারে নুয়ে পড়েছেন সকলে—

কফিনে শায়িত তাঁদের ১১ বছরের শিশু। দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে পতাকা ছিল অর্ধনমিত। সব সংবাদপত্রের প্রথম পাতা ছিল কালোয় ঢাকা।

কলম্বোর আর্চবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রঞ্জিত প্রশ্ন তুলেছেন, আগাম সতর্কবার্তা হাতে আসা সত্ত্বেও কেন এত বড় হামলা এড়ানো গেল না। যার জেরে শ্রীলঙ্কা সরকার আজ ক্ষমাও চেয়েছে। সরকারি মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী রজিত সেনারত্নে বলেছেন, ‘‘আমরা সতর্কবার্তা দেখেছিলাম। আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। সরকারের তরফ থেকে আমরা এই ঘটনার জন্য স্বজনহারা পরিবার এবং সব প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’’ সতর্কবার্তা ঠিক জায়গায় না-পৌঁছনো নিয়ে গত কাল প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার সমালোচনা করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী তথা মন্ত্রিসভাকে কিছুই জানানো হয়নি। রাষ্ট্রপতিই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ভারত সরকারের একটি সূত্রের দাবি, গির্জাগুলিতে হামলা হতে পারে বলে প্রথম বিস্ফোরণের দু’ঘণ্টা আগেও শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দাদের সতর্ক করেছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। গত ৪ এপ্রিলও ভারতের সতর্কবার্তা এসেছিল কলম্বোয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE