কলম্বোয় চিনা বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় বেজিং। বন্দর তৈরির জন্য বিনামূল্যে যে জমি চিনা সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, সেই জমির মালিকানা আবার নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নিয়েছে মৈত্রিপালা সিরিসেনার সরকার। ভারতের চাপেই শ্রীলঙ্কায় এই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে চিনকে, মনে করছে বেজিং। তার প্রতিফলন এ বার চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে। কমিউনিস্ট সরকার পরিচালিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ভারতের প্রবল প্রভাবের জেরেই সেখানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চিনকে।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় চিনা বন্দর তৈরির কাজ অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। মাহিন্দা রাজাপাক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন শ্রীলঙ্কা দ্রুত চিনের কাছাকাছি যেতে শুরু করে। কলম্বোয় চিনা উদ্যোগে পোর্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে ভারতের আপত্তিকে পাত্তাই দেননি রাজাপাক্ষে। কিন্তু মৈত্রিপালা সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে বসার পরই দ্রুত পট পরিবর্তন শুরু হয়েছে। কলম্বো আবার নয়াদিল্লির কাছাকাছি চলে এসেছে। সে দেশের রাজধানীতে চিনা বন্দর তৈরির জন্য যে ২০ একর জমি চিনা সংস্থাগুলির হাতে শ্রীলঙ্কার সরকার তুলে দিয়েছিল, সেই জমির মালিকানা সত্ত্ব আবার শ্রীলঙ্কার সরকার নিজেদের হাতে নিয়েছে। চিনকে জানানো হয়েছে, ৯৯ বছরের লিজে ওই জমি দেওয়া হচ্ছে। জমি চিনা সংস্থাগুলির হাতে তুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নেপাল ফের প্রচণ্ডর হাতে
বেজিং বুঝতে পেরেছে, কলম্বোর উপরে নয়াদিল্লির প্রভাব এখনও অপরিসীম। তাই কলম্বো পোর্ট সিটি প্রকল্পে যে ১৫০ কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে, ভারতের সংশয় নিরসন করা না গেলে সেই টাকা জলে যাবে। কিন্তু ভারত মহাসাগরের বুকে কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চলে চিন এই বন্দর গড়ে তুললে ভারতের ভ্রূ কুঞ্চন যে হবেই, চিন তাও জানে। গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, ‘‘ভারত অনেক দিন ধরেই আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে, কলম্বো পোর্ট সিটি প্রকল্প ভারত মহাসাগরের বুকে চিনের সামরিক সম্প্রসারণের আরও একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে এবং তা ভারতের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর হবে।’’ চিনা সংবাদপত্রটি আরও লিখেছে, ‘‘ভারত মহাসাগরে কলম্বোর অবস্থান কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, চিন-শ্রীলঙ্কার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সব সময়ই নয়াদিল্লির সংশয় বাড়াবে।’’ গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয় প্রতিবেদন এর পরে স্বীকার করা হয়েছে, ‘‘শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভারতের প্রভাব খুব বেশি এবং ভারত সব সময়ই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চিনের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।’’
কূটনীতিকরা বলছেন, গ্লোবাল টাইমসের এই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট, কলম্পো পোর্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে প্রবল চাপে রয়েছে চিন। ওই বন্দর যাতে চিন সামরিক কাজে ব্যবহার করতে না পারে, শ্রীলঙ্কার সরকার তাও ক্রমশ নিশ্চিত করে ফেলছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়াতেই ভারতের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy