Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওঁরা চান পাচার ও শিশুশ্রম মুক্ত বিশ্ব

কেউ পিয়ানোয়। আর কয়েক জন ব্যস্ত কফি তৈরিতে।

নিউ হ্যাম্পশায়ারে পড়ুয়াদের ‘ফ্রিডম ক্যাফে।’ —নিজস্ব চিত্র।

নিউ হ্যাম্পশায়ারে পড়ুয়াদের ‘ফ্রিডম ক্যাফে।’ —নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
নিউ হ্যাম্পশায়ার শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০৮:১৫
Share: Save:

ক্লাস ছুটির পরে বা ক্লাসের ফাঁকে ওঁরা চলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের স্টুডেন্ট সেন্টারে। কেউ করেন গান। কেউ আঁকেন ছবি। কেউ পিয়ানোয়। আর কয়েক জন ব্যস্ত কফি তৈরিতে।

আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট সেন্টারের মতো নয় ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার-এর ডারহাম ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট সেন্টার। এখানে চলছে ‘ফ্রিডম ক্যাফে।’ কী থেকে মুক্তি চান এখানকার ছাত্রছাত্রীরা? ক্যাফের কর্মী ছাত্রছাত্রীরা জানালেন, তাঁরা মানব-পাচার মুক্ত বিশ্ব চান। তারা চান, শিশু শ্রমিক ও চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক মুক্ত পৃথিবী। তাই এটি ‘ফ্রিডম ক্যাফে।’ এখানে ছাত্রছাত্রীরা পালা করে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন।

ক্যাফে থেকে উপার্জিত টাকা তাঁরা বিভিন্ন সংগঠনকে দান করেন। এক কাপ কফি এগিয়ে দিয়ে অর্থনীতির স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্রী এলিভিয়া বলেন, “যে সব সংগঠন মানব-পাচার ও শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তাদের আমরা আর্থিক সাহায্য করি। যেমন, এই কফির দাম তিন ডলার। এর দেড় ডলার আমরা ওই সব সংগঠনকে দেব। বাকি দেড় ডলারে ক্যাফে চালানোর খরচ উঠবে। যে যা-ই খান, তার অর্ধেক আমরা দান করি।” ক্যাফের দেওয়ালে ভর্তি শিশু শ্রমিক, চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ও মানব-পাচারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান ও ছবি। ক্রেতাদের বিনামূল্যে ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয়। পাসওয়ার্ড, ‘এন্ড ট্র্যাফিকিং’। সপ্তাহাম্তে ক্যাফে-তে গানবাজনা হয়, পাচার-মুক্ত পৃথিবীর কথা সেখানেও।

বছর চারেক আগে এটি শুরু করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র ব্রায়ান বেসিট। তিনি বললেন, “শুরুর সময় এমন পরিকল্পনা ছিল না। আমাদের বিশ্ববদ্যালয়ে মানব-পাচার ও শিশু শ্রমিকের সমস্যা নিয়ে সম্মেলন হয় ২০১৪ সালে। তখনই মনে হয়েছিল, এটা পৃথিবীর গভীর অসুখ। কিছু করা দরকার।” ব্রায়ান জানান, তাঁর প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী স্বেচ্ছায় ক্যাফেতে কাজ করতে এগিয়ে আসেন। ক্যাফে সাজাতে সাহায্য করেন এখানকারই এক ভারতীয় ব্যবসায়ী।

শুধু কফি নয়, বিক্রির জন্য এখানে রয়েছে চকলেট, আর চা-ও। ক্যাফের কর্মী ও ছাত্রী অ্যামিয়েন জানান, অনেক চকলেট, কফি, বা চা প্রস্তুতকারক সংস্থা শিশু শ্রমিক বা চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দিয়ে কাজ করায়। সেই সব সংস্থা থেকে আমরা চকলেট বা চা-কফি কিনি না। ঘানার এক সংস্থা থেকে চকলেট কেনা হয়। তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, ঘানার ওই সংস্থা শিশু শ্রমিক বা চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দিয়ে কাজ করায় না। কেনান নামে এক ছাত্রী জানান, শিশু শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে ক্যাফে-তে ‘চকলেট প্রোটেস্ট পার্টি’ও হয়।

এ বছর ক্যাফের আয় তিন হাজার ডলারে নিয়ে গিয়ে মানব পাচারের বিরুদ্ধে আর্থিক তহবিল তৈরি কর্মীদের লক্ষ্য। এখনও পর্যন্ত ১৫৭১ ডলার উঠেছে। এলিভিয়া বলেন, “যে ভাবে আমরা এগোচ্ছি, তাতে মনে হয় ডিসেম্বরের আগেই লক্ষ্য পূরণ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

University of New Hampshire Freedom Cafe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE