Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্বে ঠান্ডা যুদ্ধেরই ছায়া

স্ক্রিপাল কাণ্ডে এমনিতেই পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না রাশিয়ার। এ সপ্তাহের গোড়ায় ৬০ জন রুশ কূনীতিককে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন।

সংবাদ সংস্থা
মস্কো শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

আমেরিকার ইটের জবাব পাটকেলেই দিয়েছে মস্কো। তবে দু’দেশের এই দ্বন্দ্বে উদ্বিগ্ন খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেজ। রুশ-মার্কিন এই কলহে ঠান্ডা যুদ্ধের আমলও ফিরে আসতে পারে বলে আজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

স্ক্রিপাল কাণ্ডে এমনিতেই পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না রাশিয়ার। এ সপ্তাহের গোড়ায় ৬০ জন রুশ কূনীতিককে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। বন্ধ হতে চলেছে সিয়াটলের রুশ দূতাবাসটিও। এর পাল্টা জবাবই কাল দিয়েছে রাশিয়া। আর তাতে দু’দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে এ বার ঠিক একই সংখ্যক মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রেমলিন। রাশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন দূতকে ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হবে সেন্ট পিটার্সবার্গের মার্কিন দূতাবাসও। এর পরই হোয়াইট হাউস সরকারি ভাবে বিবৃতি দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছে, মস্কোর এই সিদ্ধান্তের প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তবে বিষয়টি তারা তাদের মতো বুঝে নেবে। ঠান্ডা যুদ্ধের পরে এত গভীর দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে এই দুই দেশ আর জড়িয়ে পড়েছিল কি না, মনে করতে পারছেন না কেউই। যদিও রুশ বিদেশমন্ত্রী বিবৃতি জারি করে জানিয়েছেন, কালকের সিদ্ধান্ত তাঁরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিয়েছেন।

যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত এ মাসের গোড়ায়। রাশিয়ায় নিযুক্ত প্রাক্তন ব্রিটিশ চর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়ার উপর রাসায়নিক হামলা চলে ব্রিটেনের সালিসব্যারিতে। গোটা ঘটনায় রাশিয়ার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল ব্রিটিশ সরকার। ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে এর পরই বহিষ্কার করে ব্রিটেন। পাল্টা ২৩ জন ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে রাশিয়াও। ব্রিটেনের পাশে দাঁড়িয়ে প্রায় ২০টি দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। যার সর্বশেষ সংযোজন আমেরিকায় নিযুক্ত ৬০ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার। রাশিয়া বরাবর স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ খারিজ করেছে। কিন্তু পশ্চিমী দুনিয়া তা মানতে নারাজ।

শুধু আমেরিকাই নয়। আজ রুশ সরকারের বহিষ্কারের খাড়া নেমে এসেছে ওলন্দাজ কূটনীতিকদের উপরও। ব্রিটেনকেও ক্রেমলিন হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, এক মাসের মধ্যে রাশিয়া থেকে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের উপস্থিতি কমিয়ে ফেলতে হবে। আজ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ডেকে পাঠিয়েছিল রুশ বিদেশ মন্ত্রক। সকাল থেকেই বিদেশ দফতরের অফিসে একের পর এক বিদেশি রাষ্ট্রদূত এসে দেখা করেন। রুশ সরকার আজ আরও জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যে সব দেশ ‘অনৈতিক ভাবে’ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেবে ক্রেমলিন। যা শুনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সারা স্যান্ডার্স বলেন, ‘‘এর থেকেই বোঝা যায় যে, এ বিষয়ে আলোচনার রাস্তাতেই হাঁটতে রাজি নয় মস্কো।’’

আর পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার এই সংঘাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজও আজ সাংবাদিকদের কাছে ঠান্ডা যুদ্ধের আবহ ফিরে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যদিও রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আজ স্পষ্ট করেছেন, আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক শোধরানোর দিকেই নজর রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।

এ দিকে আজ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, স্ক্রিপাল কন্যা ইউলিয়ার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি কথা বলতে পারছেন। স্যালিসবারির হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে স্ক্রিপাল আর ইউলিয়ার। তবে প্রাক্তন ব্রিটিশ চর বিপন্মুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে তিনি স্থিতিশীল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE