Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
International News

ট্রাম্পের মুলুকে এক মুসলিম দেশ থেকে ‘অভিবাসী’ এই সরস্বতী!

ওয়াশিংটন ডিসির এমব্যাসি রো। সার দিয়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বিভিন্ন দেশের পতাকায় সুসজ্জিত রাস্তার দু’ধার। কোনও কোনও দেশের দূতাবাসের সামনে মূর্তিও রয়েছে।

ওয়াশিংটনে সরস্বতীর সেই মূর্তি। ছবি: সংগৃহীত।

ওয়াশিংটনে সরস্বতীর সেই মূর্তি। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৮:১২
Share: Save:

ওয়াশিংটন ডিসির এমব্যাসি রো। সার দিয়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বিভিন্ন দেশের পতাকায় সুসজ্জিত রাস্তার দু’ধার। কোনও কোনও দেশের দূতাবাসের সামনে মূর্তিও রয়েছে।

ভারতীয় দূতাবাসের সামনে মহাত্মা গাঁধীর মূর্তি। ব্রিটিশ দূতাবাসের সামনে উইনস্টন চার্চিল। দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসের সামনে নেলসন ম্যান্ডেলা।

প্রত্যেকটি মূর্তিই দর্শনীয়। কিন্তু আশ্চর্য হতে হয় ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের সামনে গেলে। দেবী সরস্বতীর ১৬ ফুট দীর্ঘ শ্বেতশুভ্র মূর্তি বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনবসতির দেশটির দূতাবাসের সামনে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জমানা শুরু হওয়ার পর অনেক মার্কিনির কাছেই ওয়াশিংটন ডিসির ইন্দোনেশীয় দূতাবাসের সামনে সরস্বতীর এই মূর্তি খুব বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

ইন্দোনেশিয়া হল সেই দেশ, যে দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস। হিন্দু জনবসতিও রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত বালি অঞ্চলের প্রায় পুরোটাতেই হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাস। কিন্তু অন্য ধারার সামাজিক ও ধর্মীয় আদানপ্রদানে অভ্যস্ত ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার কথা শোনা যায় না। সরস্বতীর পরিচয় সে দেশে শুধু হিন্দুদের উপাস্য হিসেবে নয়। সরস্বতী সে দেশে জ্ঞান ও বিদ্যার প্রতীক।

ভারতের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা এ প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত। তিনি দার্জিলিং-এর সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্দোনেশিয়ার বিশ্বাস হল ইসলাম। কিন্তু তাঁরা সরস্বতীকেই জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী মনে করেন।’’

২০১৩ সালে ওয়াশিংটনের ইন্দোনেশীয় দূতাবাসের সামনে সরস্বতীর মূর্তিটি বসানো হয়। তখন থেকেই এমব্যাসি রো-এর আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ওই মূর্তি। ইন্দোনেশিয়া থেকে শিল্পীরা ওয়াশিংটন গিয়ে মূর্তিটি তৈরি করেন। পাঁচ সপ্তাহ সময় লেগেছিল। মাত্র পাঁচ সপ্তাহে ওই নয়নাভিরাম মূর্তির নির্মাণও আশ্চর্য করেছিল অনেককে।

সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে আজ ওয়াশিংটন ডিসির সেই সরস্বতীর মূর্তি আবার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। গত মাসেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানা শুরু হয়েছে আমেরিকায়। প্রেসিডেন্ট পদে বসেই একের পর এক বিতর্কিত নির্দেশিকায় সই করতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। সাতটি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের আমেরিকা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। ট্রাম্প বলছেন, ধর্মের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের কোনও সম্পর্ক নেই, আমেরিকাকে সুরক্ষিত রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুখে যা-ই বলুন, তাঁর সিদ্ধান্ত যে মূলত মুসলিমদের উপরেই প্রভাব ফেলছে, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। অন্যান্য দেশে তো বটেই, ট্রাম্পের নিজের দেশেও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়। ইন্দোনেশিয়ার দেওয়া উপহারটাকে তাই ওয়াশিংটনে অনেকেই দৃষ্টান্তমূলক উপহার বলে মনে করছেন আজ। ৭০ শতাংশের বেশি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর বাস যে দেশে, সেই আমেরিকার রাজধানী শহরকে ৮৮ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া এক অসামান্য মূর্তি উপহার দিয়েছে— মূর্তিটি হিন্দু ধর্মে উপাস্য দেবী সরস্বতীর।

আরও পড়ুন: শরণার্থীদের জন্য বিপুল অর্থসাহায্য সুন্দর পিচাইয়ের

ওয়াশিংটনের ওই সরস্বতীর মূর্তিটির কথা উল্লেখ করে আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনেকে বলতে চাইছেন— কাউকে দূরে ঠেলে দেওয়া কখনওই নিজের সুরক্ষার উপায় হতে পারে না। পরস্পরকে কাছে টেনে নেওয়া গেলেই বরং সুরক্ষিত থাকা যায়। ওয়াশিংটনকে ইন্দোনেশিয়ার দেওয়া উপহার সম্প্রীতির যে অসামান্য নজির তৈরি করেছে, একে অপরকে কাছে টানতে পারলে এমন নজিরই তৈরি হয়, বলছেন ট্রাম্পের সমালোচকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Washington DC USA Indonesia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE