টেরেসা মে।
তিন দিনের ভারত সফরে রবিবার দিল্লি পৌঁছচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর সফরের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে ভারতকে বেছে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশেও বার্তা দিলেন মে।
ব্রিটেনের মানুষ গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) পক্ষে রায় দেওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী হন টেরেসা মে। তাঁর এই সফরের কেন্দ্রেও রয়েছে ব্রেক্সিট-উত্তর ব্রিটিশ অর্থনীতির স্বার্থ। ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচিব লিয়াম ফক্সও তাঁর সঙ্গে যাচ্ছেন।
ভারতের বাজার
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের ফলে ব্রিটেনের বাজার ছোট হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই জার্মানির মতো দেশের তুলনায় ব্রিটেনের অর্থনীতিতে রফতানির অংশ বেশ কম। ব্রিটিশ পণ্যের জন্য ভারতের বিরাট ও ক্রমবর্ধমান বাজারের দরজা খোলাটা তাই জরুরি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মে। সেই বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত সহযোগিতার সমস্ত দিক পর্যালোচনা করতে চান মে। নতুন ‘ইন্ডিয়া-ইউকে টেক সামিট’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনাও করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বণিকসভা সিআইআই এবং কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলনটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম প্রযুক্তি সম্মেলন হতে চলেছে। পাশাপাশি বৈঠক হবে যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিটিরও।
এই সফরে সফরসঙ্গী বাণিজ্য দল বাছার ব্যাপারেও নতুন পথে হেঁটেছেন মে। আগের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ভারতে গিয়েছিলেন দেশের বড় বড় সংস্থার সিইও’দের নিয়ে। মে-র দলে কিন্তু থাকছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীরা। এই ধরনের শিল্পকেই তাঁর সরকার গুরুত্ব দিতে চায়।
অভিবাসন নীতি
তবে, দিল্লিতে লাল কার্পেটের নীচে কিছু কাঁটাও অপেক্ষা করছে টেরেসা মে-র জন্য।
প্রশ্ন উঠবে, মুখে অবাধ বাণিজ্যের কথা বললেও, ব্রিটেনে অভিবাসী কমানোর যে নীতি তিনি অনুসরণ করতে চান— সেটি তার বিরোধী। তাঁর সফরের ঠিক আগে, গত বৃহস্পতিবার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা নীতি পরিবর্তন করেছে ব্রিটেন। বহুজাতিক সংস্থাগুলি অন্য দেশ থেকে ব্রিটেনে কর্মী নিয়ে যাওয়ার জন্য যে শ্রেণিতে ভিসার আবেদন করে, তাতে ভিসা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্মীর ন্যূনতম বাৎসরিক বেতন ২০,৮০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৩০,০০০ পাউন্ড করা হয়েছে। এই নীতিতে ভারতীয় তথ্যপ্রযু্ক্তি কর্মীদের ব্রিটেনের ভিসা পেতে সমস্যা হবে।
অবশ্য নতুন এই নীতি নেওয়ার আগে, ব্রেক্সিটের পরই ভারতীয়দের ব্রিটিশ ভিসা পাওয়া কঠিন হয়েছে বলে অভিযোগ। ২০১৬ সালে ব্রিটেনে পড়তে আসা ভারতীয়ের সংখ্যা ৪০,০০০ থেকে ২৫,০০০-এ নেমে এসেছে। অথচ, এই সময়ে চিনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। পড়াশোনা শেষ করার পরে ভারতীয় ছাত্ররা আগে দু’বছর এ দেশে কাজ করার যে সুযোগ পেতেন, এখন আর সে সুযোগও নেই। বার্ষিক উপার্জন ১৮,৬০০ পাউন্ডের কম হলে কর্মরত ভারতীয়রা তাঁদের পরিজনদের ব্রিটেনে আনতে পারেন না, সেটাও একটা সমস্যা।
সম্প্রতি মে-র কনজার্ভেটিভ দলের সরকার প্রস্তাব দিয়েছিল, সমস্ত নিয়োগকর্তাকে জানাতে হবে, তাঁরা কত বিদেশি কর্মী নিয়োগ করেছেন। তুমুল প্রতিবাদে সেই প্রস্তাব রূপায়িত হয়নি। অভিবাসী নিয়ে কড়াকড়িতে এ দেশে জনপ্রিয় ভারতীয় ‘কারি’র কারবারও ধাক্কা খেয়েছে, কারণ অনেক রেস্তোরাঁই দক্ষ ভারতীয় রাঁধুনি পাচ্ছে না।
টেরেসা মে অবশ্য দিল্লি রওনা হওয়ার আগে বলেছেন, ‘‘ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়রা আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।’’ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আলোচনায় আমি দু’দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব, যাতে সম্পদ ও কর্মসংস্থান বাড়ে।’’
টাটা স্টিল
লন্ডন ও দিল্লির মধ্যে এই মুহূর্তে আরও একটি কাঁটার নাম টাটা সংস্থা। ব্রিটেনে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থায় কর্মরত মানুষের সংখ্যা এক লক্ষেরও বেশি। ‘টাটা স্টিল ইউকে’-র সঙ্গেও জড়িয়ে আছে বহু মানুষের জীবিকা। তবে বিপুল ক্ষতির কারণে ব্রিটেনের ইস্পাত ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে চায় টাটারা। ব্রিটিশ রাজনীতিকদের একাংশের দাবি, যত দিন না নতুন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে, টাটা-ই ব্যবসা চালিয়ে যাক। না-হলে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। ভারতে এসে টাটা গোষ্ঠীকে এই প্রস্তাবে রাজি করানোর চাপও রয়েছে টেরেসা মে-র ওপর।
গত সপ্তাহে বিরোধী লেবার পার্টির সাংসদ অ্যাঞ্জেলা স্মিথ হাউস অব কমনস-এ দাবি জানিয়েছেন, এই সফরে মে যেন টাটা সংস্থার কাছ থেকে ব্রিটেনে ইস্পাত ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা আদায় করেন। মে অবশ্য জানিয়েছেন— তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তাঁর মন্ত্রীরা টাটার সঙ্গে কথা বলছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy