Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেশভাগ নয়, ভিন্ন জোয়ার বার্সেলোনায়

সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের হুঙ্কার, ‘‘দেশ-ভাগ চলবে না, আমরা সবাই ক্যাটালোনিয়ারই।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘এখানকার অনেকেই বিশ্বাস করেন, তাঁরা যতটা ক্যাটালোনিয়ার, ততটাই স্পেনের!’’

একসঙ্গে: ক্যাটালোনিয়ার প্রস্তাবিত পতাকায় খুলির ছবি লাগিয়ে মিছিলে জাতীয়তাবাদীরা। রবিবার বার্সেলোনায়। ছবি: এএফপি।

একসঙ্গে: ক্যাটালোনিয়ার প্রস্তাবিত পতাকায় খুলির ছবি লাগিয়ে মিছিলে জাতীয়তাবাদীরা। রবিবার বার্সেলোনায়। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
বার্সেলোনা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৬
Share: Save:

এক রাতেই খর্ব করা হয়েছে স্বাধীনতা। স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে প্রাদেশিক পার্লামেন্ট। বরখাস্ত করা হয়েছে প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট কার্ল পুইদমঁ-সহ বহু নেতা, এমনকী পুলিশ-প্রধানকেও। আজ কিন্তু ক্যাটালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনার দখল নিল কাতারে কাতারে জাতীয়তাবাদী। ঐক্যের যে ছবিটা গত কাল দেখেছিল মাদ্রিদ, আজ তারই সাক্ষী হল বার্সেলোনা।

সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের হুঙ্কার, ‘‘দেশ-ভাগ চলবে না, আমরা সবাই ক্যাটালোনিয়ারই।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘এখানকার অনেকেই বিশ্বাস করেন, তাঁরা যতটা ক্যাটালোনিয়ার, ততটাই স্পেনের!’’

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় জানিয়েছেন, ক্যাটালোনিয়ার ভাগ্য নির্ধারণে আগামী ২১ ডিসেম্বর ভোট হবে। নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য মাদ্রিদ স্বাগত জানিয়েছে পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট পুইদমঁকেও। যদিও স্পেন সরকার এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে, দেশদ্রোহের অপরাধে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

আজ বার্সেলোনার পথেও একই আঁচ মিলেছে। দেশ-ভাগের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ হাজার মানুষ আজ জড়ো হন রাজধানীর ব্যস্ততম প্যাসিগ দে গ্রাসিয়া এলাকায়। অনেকেরই দাবি, এ ভাবে স্বাধীনতার নামে দেশভাগকে প্রশয় দিচ্ছেন যিনি, সেই পুইদমঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। বিচ্ছিন্নতাবাদী সুর তোলার অপরাধে পুইদমঁকে যে জেলে যেতে হতে পারে, সে আশঙ্কা করছেন তাঁর সমর্থকেরাও। সে ক্ষেত্রে পুইদমঁকে বেলজিয়াম রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে বলে ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে। সে দেশের অভিবাসন মন্ত্রী থিও ফ্র্যাঙ্কেন আজ বলেন, ‘‘আশা করা যায় পুইদমেঁর সঙ্গে কোনও অবিচার হবে না।
তবে উনি চাইলে, এ দেশে আশ্রয় নিতে পারেন।’’

পুইদমেঁর গলায় অবশ্য তেমন আশঙ্কার লেশমাত্র নেই। বরং নায়কোচিত ভঙ্গিতেই শনিবার তাঁর নিজের শহর গিরোনায় এক জনসভায় পুইদমঁ বলেন, ‘‘হেরে যাওয়ার কথা ভাববেন না। জয়ের আশা নিয়েই এগিয়ে যান। তবে দেখবেন, যেন কোনও হিংসা না ছড়ায়, কেউ অপমানিত না হন। সকলের মতাদর্শকে সম্মান জানিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যান।’’

স্পেনের সরকারি মুখপাত্র ইনিগো মেনডেজের অবশ্য দাবি, পুঁইদমের ও সব হুঙ্কারের কোনও মানে হয় না। গদিও নেই, ক্ষমতাও নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আন্দোলন, স্বাধীনতা, সব শেষ।’’ মেনডেজের আরও বক্তব্য— ‘‘ওঁরা যে ‘দ্য রিপাবলিক অব ক্যাটালোনিয়া’ গঠনের ডাক দিয়েছিল, দেশটা তৈরি হলে ২৪ ঘণ্টা পরেই কি আর কেউ মনে রাখত? রাখত না!’’

যদিও মেনডেজের এই তত্ত্বকে অনেকেই সহজ ভাবে নিতে পারছেন না। ১ অক্টোবরেও বার্সেলোনায় হাজির ছিল স্পেনের পুলিশ। অভিযোগ উঠেছিল, ব্যালট ছিনিয়ে আর রবার বুলেট চালিয়ে গণভোটটাই ভেস্তে দিতে চেয়েছিল মাদ্রিদ। তবু ভোট পড়েছিল সাড়ে ২২ লক্ষ। পুইদমঁ দাবি করেছিলেন, ক্যাটালোনিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ চাইছেন স্পেন থেকে আলাদা হতে। তবু সেই গণভোটকে খারিজ করে দেয় স্পেনের সাংবিধানিক আদালত। কোনও আলোচনাতেই যেতে চায়নি স্পেন। গোপন ব্যালটে নামে ক্যাটালোনিয়ার পার্লামেন্ট। পুইদমেঁরা জিতেও যান। তার পরেও ক্যাটালোনিয়ার ‘স্বাধীনতা’ খর্ব করে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। কূটনীতিকরা তাই প্রশ্ন তুলছেন, রাহয় যে যুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছেন পুইদমঁকে, ২১শে-র সেই ভোটে যদি জিতে যান প্রাক্তন প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট, তা হলে কী হবে?

স্পেন-ভাগ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE