Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
International News

মানুষের মনে আশঙ্কা ও বিরক্তি যুগপৎ বাড়িয়েছেন

মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম বর্ষপূর্তি হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কোন দিশা দেখাচ্ছেন তিনি? বিশ্লেষণে শিবাজীপ্রতিম বসুমার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ট্রাম্পের চেয়েও এই প্রশ্ন মার্কিন মুলুক ও অন্যান্য দেশের বিপুল মানুষের মনে জেগেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
Share: Save:

মাইকেল উলফ্ কে?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ট্রাম্পের চেয়েও এই প্রশ্ন মার্কিন মুলুক ও অন্যান্য দেশের বিপুল মানুষের মনে জেগেছে। কারণ, বছর চৌষট্টির নিউ ইয়র্কের এই সাংবাদিকের সদ্যপ্রকাশিত বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ প্রকাশের আগেই পাঠকের মনে এমন ঝড় তুলেছে যে প্রকাশকদের প্রকাশনার দিন এগিয়ে আনতে হয়েছে, গত দশ দিনে লক্ষাধিক কপি নিঃশেষিত, সুদূর আফ্রিকার নানা দেশে মূল বইয়ের ‘নকল’ কপি হাতে হাতে ঘুরছে, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। স্বয়ং ট্রাম্প, তাঁর কন্যা ইভাঙ্কা, স্ত্রী মেলাইনা, একদা-ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ ব্যানন-সহ হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরস্থ দু’শো জন অতি গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে যে বই-বোমাটি উলফ্ ফাটিয়েছেন, তা পড়ে মনে হচ্ছে ট্রাম্প যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক প্যারাম্বুলেটর-চড়া এক খামখেয়ালী পূর্ণবয়স্ক শিশু, যাকে ঠেলে নিয়ে যেতে যেতে হোয়াইট হাউসের ‘ইনসাইডার’রা ভাবছে ‘এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু...’!

আরও অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক ও ভাষ্যকারের করা বর্তমান রাষ্ট্রপতির এক বছরের সালতামামিও এমন এক খ্যাপাটে, অতি রক্ষণশীল পুরুষতান্ত্রিক, বর্ণ-বিদ্বেষী, গণতান্ত্রিক অধিকার পাত্তা-না-দেওয়া, কূটনীতিকে বুড়ো-আঙুল-দেখানো অসহিষ্ণু মানুষের ছবি এঁকেছে, যিনি নির্দ্বিধায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের বোতাম টিপে দেওয়ার আহম্মকি করতে পারেন! তাঁর মুসলিম/আরব বিদ্বেষ, মার্কিন মুলুকে কর্মএরত অথবা কর্মপ্রত্যাশী, প্রযুক্তি-দক্ষ ভারতীয়-সহ অন্যদেশের নাগরিক-বিরোধী অভিবাসন নীতি, সংবাদমাধ্যমকে ভিলেন বানানো, উদার-গণতন্ত্রবিরোধী কথাবার্তা, উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উনের সঙ্গে দায়িত্বহীন বাগযুদ্ধ প্রভৃতি কেবল স্বদেশে নয়, বিশ্বের এক বিরাট অংশের মানুষের মনেই আশঙ্কা ও বিরক্তি যুগপৎ বাড়িয়েছে। এমনকি, হলিউডের বহু বিখ্যাত নক্ষত্র যে ভাবে তাঁর প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করছেন, তাঁকে ‘ভাঁড়’ বানিয়ে টেলিভিশনের ‘শো’-গুলি যেমন হাসির হুল্লোড় তুলেছে, তেমনটা তাঁর আগের ৪৪ জন রাষ্ট্রপতির বেলায় হয়নি।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের প্রথম বছর, কী পেলাম আর কী হারালাম

ট্রাম্প অবশ্য এ সব থোড়াই কেয়ার করেন! বরং তাঁর সময়ে ক্রমাগত চাঙ্গা হওয়া শেয়ার বাজার, জিডিপি-র হার বৃদ্ধি, দেশজ-মার্কিনীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি প্রভৃতি এবং সর্বোপরি গত মাসে এক বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের কর মকুব প্রভৃতিকেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে মেলে ধরতে চাইবেন। এবং, তাতে সফলও হবেন, কারণ, যে যুগে আমরা বাস করছি, তা হল, এক উত্তর-সত্য (‘পোস্ট ট্রুথ’) জনপ্রিয়বাদী/পপুলিস্ট রাজনীতির যুগ— যেখানে ‘সত্য’/‘মিথ্যা’ নয়, (দুঃ)সাহসের সঙ্গে কিছু বানানো তথ্য বলে যেতে পারলেই জনতার এক বিরাট অংশ (যাদের এক বিপুল অংশ ক্রমাগত ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, টুইটারে মেতে থেকে ইতিমধ্যেই স্বাধীন চিন্তাশক্তি হারিয়েছে) বলবে, কেয়া বাৎ! তার সঙ্গে, পপুলিস্ট রাজনীতির দস্তুর অনুযায়ী জনপ্রিয়বাদী রাজনীতির নায়ক, জনতা, এমনকী বিদেশের কোনও অংশের বিরুদ্ধে লোক খেপিয়ে (তারাই জনতার ‘দুর্দশার জন্য দায়ী’ প্রতিপন্ন করে), ট্যাক্স ছাড় দিয়ে বা জনগণকে নানা জনমোহিনী ‘উপহার’ দিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখেন। কেবল ট্রাম্পের মতো দক্ষিণপন্থী নন, উগো শাভেজের মতো ‘বামপন্থী’কেও এই দলে ফেলা যায়। এ দেশেও এই উদাহরণ আছে, ক্রমশ বাড়ছে। পুরনো পার্টি কাঠামো ও এলিট রাজনীতির তোয়াক্কা না-করা এই রাজনীতিরও কিন্তু সীমাবদ্ধতা আছে। যত দিন সেই ‘সীমানা’ না পার হন তত দিন মিডিয়া যা-বলুক ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা থাকবে। আর না হলে? আরে মশাই, ট্রাম্পের মতো দুর্ঘট নায়কেরা কবে আর ইতিহাসের কথা ভেবেছেন!

(লেখক রাজনৈতিক ভাষ্যকার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE