Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাক্ষাৎকারে টেরেসা-নিন্দা, পরে ট্রাম্প বললেন ভুয়ো! 

নেটো সম্মেলনের সময়ে ব্রাসেলসে বসে ট্রাম্প ওই ট্যাবলয়েডকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বলে দাবি। তিনি ব্রিটেনে আসার পরে তা প্রকাশিত হয়েছে। যাতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী টেরেসা যে পথে ব্রেক্সিট নিয়ে এগোচ্ছেন, তাতে আমেরিকার সঙ্গে ব্রিটেনের অসাধারণ ব্যবসায়িক চুক্তি হওয়া সম্ভব নয়। আরও খোলসা করে ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকা এর পরে ব্রিটেনের পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে মীমাংসা করবে। ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তির কোনও পরিসর থাকবে না। ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘আমি ওঁকে বলেছিলাম, এটা নিয়ে (ব্রেক্সিট মীমাংসা) কী ভাবে এগোনো উচিত। এটা ওঁরই সিদ্ধান্ত। উনি ভিন্ন পথে এগোতে চান।’’

প্রতিবাদ: ট্রাফালগার স্কোয়ারে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি।

প্রতিবাদ: ট্রাফালগার স্কোয়ারে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৮:৪০
Share: Save:

লাল কার্পেট, অভ্যর্থনা আর সৌজন্যের নৈশভোজে প্রথমে তাল কেটেছিল ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের প্রকাশিত খবরে। গত কাল সন্ধ্যায় অক্সফোর্ডশায়ারের ব্লেনিম প্যালেসে সস্ত্রীক ট্রাম্পকে স্বাগত জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা ও তাঁর স্বামী ফিলিপ মে।

তার পর আজ ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, টেরেসাকে রীতিমতো ‘অপমান’ করে চোখা চোখা মন্তব্যে ভরিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রেক্সিট মীমাংসা নিয়েই মূলত টেরেসাকে বিঁধেছেন ট্রাম্প। তাঁর সাফ কথা, ব্রেক্সিট নিয়ে টেরেসা তাঁর কোনও কথাই শোনেননি।

বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতেই স্বকীয়তা বজায় রেখে উল্টো সুর ট্রাম্পের গলায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি মোটেও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করিনি। ওই সাক্ষাৎকার ভুয়ো।’’ এর পরেই ট্রাম্প জানান, টেরেসা নাকি তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘চিন্তা করবেন না। ওটা সংবাদমাধ্যমের ব্যাপার।’’

নেটো সম্মেলনের সময়ে ব্রাসেলসে বসে ট্রাম্প ওই ট্যাবলয়েডকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বলে দাবি। তিনি ব্রিটেনে আসার পরে তা প্রকাশিত হয়েছে। যাতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী টেরেসা যে পথে ব্রেক্সিট নিয়ে এগোচ্ছেন, তাতে আমেরিকার সঙ্গে ব্রিটেনের অসাধারণ ব্যবসায়িক চুক্তি হওয়া সম্ভব নয়। আরও খোলসা করে ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকা এর পরে ব্রিটেনের পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে মীমাংসা করবে। ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তির কোনও পরিসর থাকবে না। ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘আমি ওঁকে বলেছিলাম, এটা নিয়ে (ব্রেক্সিট মীমাংসা) কী ভাবে এগোনো উচিত। এটা ওঁরই সিদ্ধান্ত। উনি ভিন্ন পথে এগোতে চান।’’

ট্যাবলয়েডে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র সারা স্যান্ডার্সের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মে-কে প্রেসিডেন্ট খুবই পছন্দ করেন, শ্রদ্ধাও করেন। সারার দাবি, ট্রাম্প কখনওই টেরেসা সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলেননি। এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি ডাউনিং স্ট্রিট। তবে ব্রিটেনের বিদেশ দফতরের ইউরোপ ও আমেরিকা সংক্রান্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান বলেছেন, ট্রাম্প ওই সব কথা বলার পরে অনেক মুহূর্ত পার হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার নৈশভোজে ইতিবাচক কথা হয়েছে। সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়িক আদানপ্রদানের উপরেই। অ্যালানের মতে, ট্রাম্পের ব্যবহার ‘রূঢ়’, এমনটা ভাবছে না সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘উনি বিতর্ক-পন্থী। ওটাই ওঁর স্টাইল।’’ ট্রাম্পের প্রথম সফরে টেরেসাও চেয়েছেন, আমেরিকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে কথা বলতে। তাঁর মতে, আমেরিকা এবং ব্রিটেনকে বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার ‘সুযোগ’ করে দিতে পারে ব্রেক্সিট। যদিও সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের মন্তব্য টেরেসার এই সব উদ্যোগে জল ঢেলে দিল বলে মত কূটনীতিকদের। আজ বিকেলেই বাণিজ্য নীতি আলোচনায় ট্রাম্পের সঙ্গে চেকার্স-এ বসবেন টেরেসা।

ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে টেরেসার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রশংসা করেছেন। অক্লেশে বলেছেন, বরিস ‘অসাধারণ প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। ট্রাম্পের সংযোজন, ‘‘ওঁর মধ্যে সেই ব্যাপারটা আছে।’’ তবে ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে পড়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। এর আগেও এ কাজ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত বছর লন্ডরে জঙ্গি হামলা সামাল দিতে সাদিক ব্যর্থ, সেটাই ফের বলেছেন তিনি। সাদিক পাল্টা জানান, অন্য যে সব শহরে জঙ্গি হানা হয়েছে, সেখানকার মেয়রদের তো সমালোচনা করছেন না ট্রাম্প— এটাই ভাবার।

ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভে আজ উত্তাল ছিল লন্ডন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় এক লক্ষ লোক ট্রাফালগার স্কোয়ার ও তার আশপাশে জড়ো হয়েছিল। আকাশে উড়ছিল ‘রাগী শিশু-ট্রাম্পের’ ২০ ফুট লম্বা বেলুনও।

সে সব অবশ্য ট্রাম্পের চোখে পড়ার কথা নয়। উইনসর ক্যাসেলে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের সঙ্গে চা-পান করে রাতে স্কটল্যান্ড উড়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Brexit Theresa may Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE