জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহার।
দীর্ঘ কূটনৈতিক দৌত্যের পর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ জঙ্গি তালিকায় জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহারের অন্তর্ভুক্তি ঘটল আজ। এর আগে চারবার বাধা দেওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তে সায় দিল চিন। গত কালই তাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছিল। সেটাই হল। হওয়ামাত্র, মাসুদের অন্তর্ভুক্তি হয়ে গেললোকসভা ভোট-প্রচারের বিষয়-তালিকাতেও।
এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন টুইট করে জানান, ‘‘বড়-ছোট সবাই একসঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় মাসুদ আজহারকে ঢোকানো গিয়েছে। সবাইয়ের সমর্থন পেয়েছি। আমরা কৃতজ্ঞ।’’ এই সিদ্ধান্তের ফলে মাসুদ আজহারের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে এবং তার গতিবিধিতে রাশ টানা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সাউথ ব্লক।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রাথমিক ভাবে বিষয়টিকে ‘ভারতের জয়’ বললেও তার পরপরই প্রচারে একে কাজে লাগাতে কসুর করেননি। রাজস্থানের জনসভায় বলেন, ‘‘বালাকোট অভিযানের দিনও আমি রাজস্থানে ছিলাম। আজও বড় খবর নিয়ে এসেছি।’’ অমিত শাহ টুইট করেন, ‘‘এই জন্যেই শক্তিশালী নেতার প্রয়োজন। এটা সন্ত্রাসের প্রতি মোদীর ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির ফসল।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজনৈতিক শিবিরও এই প্রচারের সম্ভাবনাই তুলে ধরেছে। তাদের মতে, তিন দফা ভোট বাকি থাকতে মাসুদকে নিয়ে এই ঘোষণায় শাসক দল অবশ্যই প্রচারের জন্য আরও একটা বড় অস্ত্র হাতে পেল। বিরোধীদের দুশ্চিন্তা, দেশপ্রেম-দেশভক্তির চড়া সুর আর পুলওয়ামা-বালাকোট নিয়ে উচ্চগ্রামে প্রচারের আবহে মোদী এ বার মাসুদকে নিয়েও ছাতি ফোলাবেন। মোদী এ দিন বলেওছেন, ‘‘মনমোহনের কথা শুনত না তাঁর দলই। এখন নতুন ভারতের গলা সারা পৃথিবী শুনতে, মান্য করতে বাধ্য হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুম্বই হামলার পনেরো দিনের মধ্যে লস্করের মাথা হাফিজ সঈদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকাভুক্ত করাতে পেরেছিল মনমোহন সরকারই। সেটুকুই।
কে এই মাসুদ
• প্রথমে হরকত-উল-আনসার, হরকত-উল-মুজাহিদিনের নেতা, পরে জইশ-ই-মহম্মদের মাথা।
• সংসদ, পঠানকোট এবং পুলওয়ামা হামলার মূল চক্রী বলে অভিযোগ।
• কাশ্মীরে গ্রেফতার ১৯৯৪-এ। কন্দহর বিমান ছিনতাইয়ে পণবন্দিদের ছাড়াতে মাসুদকে মুক্তি দেয় ভারত।
মাসুদ সংক্রান্ত ঘোষণাকে স্বাগতই জানান মনমোহন নিজে। কংগ্রেসের তরফে রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা টুইট করেন, ‘‘ইতিবাচক পদক্ষেপ। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত অটল।’’ অখিলেশ যাদবও বলেন, ‘‘কূটনীতিকদের অভিনন্দন। পাকিস্তান অবিলম্বে মাসুদকে গ্রেফতার করে তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুক।’’
প্রশ্ন হল, অবশেষে কেন নমনীয় হল বেজিং? সম্প্রতি ওবর মহা-যোগাযোগ প্রকল্পে ভারতের প্রতি ইতিবাচক সঙ্কেত পাঠিয়েছিল তারা। তাদের দেখানো ভারতের মানচিত্রে গোটা কাশ্মীর এবং অরুণাচলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয় যে, মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। খুব দ্রুত চিন তাদের মনোভাব নিরাপত্তা পরিষদকে জানাবে। সূত্রের বক্তব্য, ভারতের মতো দেশকে ওবর প্রকল্পের বাইরে রাখলে প্রকল্পটি আধাখ্যাঁচড়া হয়ে থাকত। ভারতে নতুন সরকার এলে এ ব্যাপারে যাতে চাপ তৈরি করা যায়, তার জন্য আগেভাগে মাসুদকে ‘উপহার’ হিসেবে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তা ছাড়া, পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে ব্রিটেন, আমেরিকা এবং ফ্রান্স যে ভাবে চাপ তৈরি করেছিল চিনের উপর, তাতে এই সিদ্ধান্তে আসা ছাড়া উপায়ও ছিল না শি চিনফিং-এর— এমনটাও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিছু দিন আগেই বিদেশসচিব বিজয় গোখলে মোদীর দূত হয়ে চিনে গিয়ে মাসুদের ব্যাপারে দরবার করেন। মোদী সরকারের পক্ষ থেকে গত এক মাসে এই তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছিল, যাতে নির্বাচনের আগে বা মধ্যে বিষয়টি ঘটানো যায়। আজ তারা সফল হল। মোদীর চিন নীতি নিয়ে রাহুল গাঁধীর করা একটি টুইট (‘এক, গুজরাতে শি-এর সঙ্গে দোলনায় দোলা, দুই, দিল্লিতে শি-কে জড়িয়ে ধরা, তিন, চিনে শি-এর কাছে মাথা নত করা’) তুলে ধরে বিজেপি এখন বলছে, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy