Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘আশায় রয়েছি, ভবিষ্যদ্বাণী যেন ভুল প্রমাণিত হয়’

সারা বিশ্বের মতো আমেরিকাতেও একনায়কতন্ত্রী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোর রমরমা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন আগেই পিটসবার্গের ইহুদি সিনাগগে এক ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট’ গুলি চালিয়ে এগারোজন নিরীহ ইহুদিকে হত্যা করেছে।

৬ নভেম্বর আমেরিকার মানুষ মার্কিন কংগ্রেসের নির্বাচনে ভোট দেবেন। ছবি: রয়টার্স।

৬ নভেম্বর আমেরিকার মানুষ মার্কিন কংগ্রেসের নির্বাচনে ভোট দেবেন। ছবি: রয়টার্স।

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৪
Share: Save:

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২০১৬-র নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, তার ঠিক আগেই আনন্দবাজারে লিখেছিলাম, শেষ পর্যন্ত হিলারি ক্লিন্টনই ভোটে জিতবেন। এখন মনে হয়, আমার সেই ভবিষ্যদ্বাণী সাধারণ মানুষের কানাকানি, মাটির সঙ্গে লেগে থাকা প্রায় নিঃশব্দ ফিসফাস এবং খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল না। পিছনে ফিরে তাকালে দেখি, সে বার বিভিন্ন রেস্তরাঁ, পাব এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের প্রতি বিরাট সমর্থন লক্ষ্য করেছিলাম। ঠিক যেমন এই নভেম্বর মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে আবার লক্ষ্য করছি।

থাকি নিউ ইয়র্কে। যা কিনা লিবারাল ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ঘাঁটি। এখানেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে অন্য জায়গাগুলোর ছবিটা কী রকম, তা কল্পনা করে নিতে সমস্যা হয় না। ট্রাম্প ও তাঁর দল যেখানে প্রকাশ্যেই শ্রমিক ইউনিয়নের ধ্বংস চান, সেখানে ইউনিয়ন শ্রমিকরা কী করে এবং কেন তাঁদের ভোট দেবেন, তা নিয়ে অনেক ভেবেছি। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি।

৬ নভেম্বর আমেরিকার মানুষ মার্কিন কংগ্রেসের নির্বাচনে ভোট দেবেন। নির্বাচিত করা হবে হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের ৪৩৫ জন সদস্য এবং একশো জনের মধ্যে পঁয়ত্রিশ জন সেনেটরকে। এখন হাউস এবং সেনেট দু’জায়গাতেই সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু তারা আশা করছে, এই নির্বাচনে যদি তারা অনেক বেশি আসনে জয়লাভ করতে পারে, তা হলে কংগ্রেসের কর্তৃত্ব তাদের হাতে আসবে এবং তখন তারা ট্রাম্পকে তাঁর অসংখ্য জনবিরোধী এবং আইনবিরোধী কাজের জন্যে ‘ইমপিচ’ করে পদচ্যুত করতে পারবে। যেমন, সাতের দশকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জন্যে নিক্সনকে ‘ইমপিচ’ করা হয়েছিল। কিন্তু, আমার মনে হয়, ডেমোক্র্যাটরা কিছু আসনে জিতলেও কংগ্রেসে যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।

আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব আইন বদলাচ্ছেন ট্রাম্প

পাশে: ইলিনয়ের এক প্রচারসভায় ট্রাম্প সমর্থকেরা। ছবি: এপি।

তার কারণ হল, সারা বিশ্বের মতো আমেরিকাতেও একনায়কতন্ত্রী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোর রমরমা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন আগেই পিটসবার্গের ইহুদি সিনাগগে এক ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট’ গুলি চালিয়ে এগারোজন নিরীহ ইহুদিকে হত্যা করেছে। আর এক জন ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট’ এক সুপারমার্কেটে গুলি চালিয়ে দু’জন নিরীহ কৃষ্ণাঙ্গকে খুন করেছে। আর এক ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট’ বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিন্টন-সহ ডেমোক্র্যাট নেতা ও ট্রাম্প-বিরোধীদের বাড়িতে পোস্টাল বোমা পাঠিয়েছে। তার ট্রাকের সারা গায়ে ট্রাম্পের স্টিকার লাগানো। সাংবাদিকদের ওপরে লাগাতার আক্রমণ তো চলেছেই।

তবে প্রতিরোধও চলছে। কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে এখন বার্নি স্যান্ডার্স ছাড়া এমন কোনও নেতা নেই, যিনি সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন। বার্নি স্যান্ডার্সকে হিলারি ও বিল ক্লিন্টন-পন্থী মূলস্রোত ডেমোক্র্যাটরা আবার সমর্থন করেন না। ডেমোক্র্যাটপন্থী বড়মাপের সংবাদমাধ্যমগুলোও তাঁর হয়ে খুব জোরদার প্রচার চালায় না। ফলে, শিক্ষিত, উদারনৈতিক, মুক্তমনা মার্কিনদের যে জনরোষ ৬ নভেম্বরের ব্যালট বাক্সে আছড়ে পড়তে পারত, তা আদৌ হবে কি না, এ বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

তবে আশায় রয়েছি, এ দেশের মানুষ আমাকে আবার ভুল প্রমাণিত করবেন। আমি চাই, আমার ভবিষ্যদ্বাণী যেন আবার ভুল হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE