Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ডায়েরিতে ‘বর্ণবিদ্বেষী’ আইনস্টাইন

গরমে নাজেহাল হয়েই বুদ্ধি কম ভারতীয়দের

কিন্তু, এই আইনস্টাইনই, তাঁর সাড়া জাগানো বক্তৃতার দু’দশক আগে, নিজস্ব দিনলিপিতে এমন সব কথা লিখেছিলেন, যা থেকে মনে হবে, তিনি নিজেও ‘শ্বেতাঙ্গদের সেই অসুখে’ ভুগতেন। 

সংবাদ সংস্থা
লস অ্যাঞ্জেলেস শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

সাত দশক আগের কথা। পেনসিলভ্যানিয়ার লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হচ্ছেন কয়েক জন কৃষ্ণাঙ্গ পড়ুয়া। মার্কিন মুলুকে এমন ঘটনা সেই প্রথম। ঐতিহাসিক সেই অনুষ্ঠানে অতিথি আলবার্ট আইনস্টাইন। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘‘বর্ণবিদ্বেষ শ্বেতাঙ্গদের একটা অসুখ।’’ ১৯৪৬ সালের আইনস্টাইনের সেই উক্তি ক্রমে ক্রমে প্রবচনের মর্যাদা পেয়েছে। আর এই উক্তির জন্য বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মেধাকে কুর্নিশ জানিয়েছে বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী দুনিয়া।

কিন্তু, এই আইনস্টাইনই, তাঁর সাড়া জাগানো বক্তৃতার দু’দশক আগে, নিজস্ব দিনলিপিতে এমন সব কথা লিখেছিলেন, যা থেকে মনে হবে, তিনি নিজেও ‘শ্বেতাঙ্গদের সেই অসুখে’ ভুগতেন।

‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র একটি বিশেষ দল কয়েক বছর ধরে আইনস্টাইনের গবেষণাপত্র, ব্যক্তিগত চিঠি এবং ডায়েরি নিয়ে কাজ করছে। ‘আইনস্টাইন পেপার প্রজেক্ট’ নামে সেই উদ্যোগের অন্যতম কর্তা জ়িভ রোজ়েনক্রাৎজ় ডায়েরির কিছু অংশ প্রকাশ করেছেন। একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রে রোজ়েনক্রাৎজ় লিখেছেন, ‘‘সবাই হয়তো বলবেন, আইনস্টাইন নিজেকে অনেক পাল্টে ফেলেছিলেন। তবে এ কথাটা মনে হয় মেনে নেওয়াই ভাল যে, এই লেখাগুলো থেকে এক ভিন্ন আইনস্টাইন উঠে এসেছেন। মানুষ আইনস্টাইন আর এই লেখক আইনস্টাইনের স্ববিরোধ স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’

কী আছে সেই ডায়েরিতে?

১৯২২-এর অক্টোবর থেকে ১৯২৩-এর মার্চ, পাঁচ মাস এই ডায়েরিতে লিখেছিলেন আইনস্টাইন। তখন তিনি পূর্ব এশিয়া, প্যালেস্তাইন-সহ এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ডায়েরিতে ভারতীয় ও চিনাদের সম্পর্কে নানা বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। ডায়েরির লেখা থেকে স্পষ্ট যে, আইনস্টাইন এই সময়ে মনে করতেন এক জন মানুষের বুদ্ধির বিকাশ তার ভৌগোলিক অবস্থানের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তিনি লিখেছেন, ‘‘খেয়াল করে দেখেছি, ভারতীয়রা বিনা অনুযোগে অনেক যন্ত্রণা ও কষ্ট সহ্য করতে পারে। তাদের ভৌগোলিক অবস্থানই এই অবস্থার জন্য দায়ী। এ রকম আবহাওয়ায় থাকতে হলে আমরাও কি ভারতীয়দের মতো হয়ে যেতাম না!’’ আইনস্টাইনের আরও দাবি, ‘‘স্মৃতিচারণ করতে, বা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে, ভারতীয়দের গড়ে পনেরো মিনিট বেশি সময় লাগে। এর কী কারণ, সে বিষয়ে আমি অনেক ভেবেছি। এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, অতিরিক্ত গরমেই তাদের বুদ্ধি-বিকাশের এই হাল।’’

চিনাদের সম্পর্কেও অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন আইনস্টাইন। লিখেছেন, ‘‘আমি বুঝতেই পারি না, কী কৌশলে চিনা মহিলারা ওই জাতির পুরুষদের আকৃষ্ট করেন। এমন কোন জাদু তাঁদের ঝুলিতে রয়েছে, যার পাল্লায় পড়ে চিনা পুরুষেরা বাচ্চার জন্ম দিতে বাধ্য হন?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘চিনারা যদি সব জাতিকে ছাপিয়ে যায়, সেটা খুবই দুঃখের হবে।’’

রোজ়েনক্রাৎজ়ের কথায়, ‘‘মানবদরদী বলে আইনস্টাইনের যে ভাবমূর্তি আমাদের মনে তৈরি হয়েছে, তা ভেঙে দিতে এই ডায়েরির কয়েকটা পাতা যথেষ্ট। জীববিজ্ঞান দিয়ে মানুষের বৌদ্ধিক বিকাশকে এ ভাবে বোঝানোর প্রচেষ্টাকে বর্ণবিদ্বেষের উদাহরণ ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Albert Einstein আইনস্টাইন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE