প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি পারবেন ক্ষমতা ধরে রাখতে? ছবি: রয়টার্স।
জন এফ কেনেডির কথা আলাদা। প্রথম দফার মেয়াদ ফুরোনোর আগেই খুন করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিন জন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় বারের জন্য হোয়াইট হাউসে আসার সুযোগ পাননি। সেই তালিকার প্রথম দু’টি নাম জেরাল্ড ফোর্ড এবং জিমি কার্টার। আর তৃতীয় জন হলেন সিনিয়র জর্জ বুশ। ১৯৯১-এ প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের জেরে পদ খোয়াতে হয়েছিল বুশকে। তাঁর জায়গায় আসেন বিল ক্লিন্টন। তিনিও পাক্কা ৮ বছর কাটিয়ে যান হোয়াইট হাউসে।
কিন্তু এ বার কী হবে? প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি পারবেন ক্ষমতা ধরে রাখতে? পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০-তে। অনেকেই মঙ্গলবারের নির্বাচনকে সেই ভোটের সেমিফাইনাল বলেছেন। কেউ বলছেন, ২০২৪-পর্যন্ত ট্রাম্পই থাকছেন। অনেকে সিঁদুরে মেঘও দেখছেন।
প্রথম দফার এখনও অর্ধেকটা পথ বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েকটা বিষয় প্রকট হয়ে উঠেছে ট্রাম্প-জমানায়। প্রেসিডেন্টের অভিবাসন নীতি থেকে শুরু করে অসহিষ্ণুতা, বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে কথা হচ্ছে বিস্তর। প্রশ্ন উঠছে, এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেশে মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়েও। ওবামা-বিরোধী ভাবাবেগ উস্কে আর নানাবিধ প্রতিশ্রতি দিয়ে রিপাবলিকান গলের অন্দরে ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এখন অনেকেই বলছেন, তার বেশির ভাগটাই পাঁকের তলায় চাপা পড়ে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, এই পাঁকেই পদ্ম ফুটবে! ট্রাম্পের যে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝড় উঠেছে, সেগুলোই নাকি তাঁর মুকুলে নয়া পালক যোগ করবে!
সমীকরণটা এতটাও সহজ নয় বোধ হয়। বরং সর্বত্র একটা নেই-রাজ্যের ছবি। ক্যাপিটল হিলে এখন আর সে রকম বিচক্ষণ লোক কোথায়? প্রেসিডেন্ট নিজেই তো বন্ধু-শত্রু নির্বিশেষে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে চলেছেন। কাকে যে পাশে চান, বোঝা যাচ্ছে না। এতে আর কিছু না হোক, তাঁর কাজকর্মের প্রতিই মানুষ আসলে আস্থা হারাচ্ছেন।
অনেকের কাছেই এটা অনেকটা স্বপ্নভঙ্গের মতো। আমেরিকায় এই মুহূর্তে শ্রমজীবীদের একটা বড় অংশ আফ্রিকা ও স্পেনের বংশোদ্ভূত। ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে আনার পিছনে এদের ভূমিকা যথেষ্ট বড়। প্রচারে রিপাবলিকানরা যে চাকরি ও কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটা এঁরা বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু আদৌ পরিবর্তন হয়েছে কি? ২০০৮ নাগাদ দেশ জুড়ে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, তার অনেকটা প্রশমিত হলেও চাকরির সেই বাজার কোথায়!
ডেমোক্র্যাট মুখ তথা প্রাক্তন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন নন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকেই চেয়েছিলেন ভারতের মতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে কাজ করতে আসা মানুষের একটা বড় অংশ। কিন্তু ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আসার পর-পরই খেলা ঘুরতে শুরু করল। এই হয়তো দেখা গেল, এক পা এগিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। পরের দিন কিন্তু তিনিই আবার দু’পা পিছিয়ে গিয়েছেন! ইদানীং তাই অনেকেই খেই হারাতে শুরু করেছেন। তবে এটাও ঠিক যে, ভারত বা চিনের মতো দেশে ‘আউটসোর্সিং’ বন্ধ করার হুমকি ট্রাম্প আগেই দিয়েছিলেন। তার পর ক্ষমতায় এসে অভিবাসন নীতিতে হাত দিলেন। এর সঙ্গে আবার জুড়ল বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ। চিনের সঙ্গে এখন এ দেশের যা সম্পর্ক হয়েছে, তা আর বলা নয়। দেশের নাগরিক সমাজও আঙুল তোলা শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
আগামী মঙ্গলবারের লড়াইটা যে ট্রাম্পের পক্ষে খুব সহজ হবে না, সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন তো কার্যত গণভোটই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy