Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আমি যৌন নিগ্রহের শিকার, ফেসবুকে জানিয়ে জেলে যেতে হল এই তরুণীকে

গত মে মাসে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন বছর ৩৩-এর মিশরীয় তরুণী আমাল ফাথি। তিনি যে যৌন নিগ্রহের শিকার এবং অপরাধীর এ অবধি কোনও শাস্তি হয়নি, সে কথাটাই জানিয়েছিলেন তিনি।

আমাল ফাথি

আমাল ফাথি

সংবাদ সংস্থা
কায়রো শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১০
Share: Save:

যৌন নিগ্রহের শিকার। সাহস করে এই কথাটুকুই জানিয়েছিলেন ফেসবুকে।

সাজা হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। তবে অপরাধীর নয়। তাঁর নিজেরই।

গত মে মাসে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন বছর ৩৩-এর মিশরীয় তরুণী আমাল ফাথি। তিনি যে যৌন নিগ্রহের শিকার এবং অপরাধীর এ অবধি কোনও শাস্তি হয়নি, সে কথাটাই জানিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গত ক’মাস বিচার চলার পরে শনিবার মিশরের আদালত তাঁকে ‘ভুয়ো খবর ছড়ানোর অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত করেছে। দু’বছরের জেল ও ১০ হাজার মিশরীয় পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে আমালকে।

আমালের আইনজীবী দোয়া মুস্তাফা জানান, আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছেন তাঁরা। তবে মুস্তাফা এ-ও জানান, ২০ হাজার পাউন্ড দিলে আপাতত কারাদণ্ড স্থগিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে কোর্ট। যদিও তাতে লাভ কিছু হবে কি না, জানা নেই। কারণ ইতিমধ্যেই অন্য একটি মামলায় নাম জড়িয়েছে আমালের। অভিযোগ, তিনি একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য। আমালের বন্ধুদের দাবি, ‘‘ও মানবাধিকার কর্মী। কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য নয়।’’

আমাল পেশায় এক জন অভিনেত্রীও। মে মাসের ভিডিয়ো পোস্টে আমাল জানিয়েছিলেন, কী ভাবে একটি ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা রক্ষী তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন। এবং প্রশাসন যে মেয়েদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ, ভিডিয়োটিতে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। ফেসবুকে এই পোস্টের দু’দিনের মাথায় তাঁর বাড়িতে হানা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। আমাল, তাঁর স্বামী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে স্বামী-পুত্রকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আমাল বন্দিই রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো খবর ছড়ানো’ ও ‘আপত্তিকর জিনিস সঙ্গে রাখা’র অভিযোগে মামলা শুরু হয়। শনিবার দু’টি মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হন আমাল। দুই মামলাতে এক বছর করে মোট দু’বছর সাজা হয়েছে। সঙ্গে জরিমানা। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য হওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে, সেই মামলা এখনও চলছে।

শনিবার রায়ের খবর ছড়াতে সময় লাগেনি। লন্ডনের একটি মানবাধিকার সংগঠন বলেছে, ‘‘লজ্জাজনক ঘটনা। যৌন নিগ্রহের প্রতিবাদ জানানোর সাহস দেখিয়েছিলেন উনি। অবিচারের জঘন্যতম উদাহরণ। যে আক্রান্ত, সে-ই কি না জেলে। আর অপরাধী মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, মিশরের ৬০ শতাংশ মহিলা জীবনে কখনও না কখনও, কোনও না কোনও ভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার। ২০১৭ সালেই একটি আন্তর্জািতক সংবাদ সংস্থা কায়রোকে মেয়েদের জন্য সব চেয়ে বিপজ্জনক শহরের তকমা দিয়েছে। আমালের স্বামী মহম্মদ লোতফির কথায়, ‘‘সেটাকেই তো স্বীকৃতি দিল আদালত। যে কেউ হেনস্থা করতে পারে। অপরাধীর শাস্তি হবে না। আর নিগৃহীতার জন্য— মুখ বন্ধ রাখো। না হলে জেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Egypt Ciaro Molestation Jail Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE