Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
International News

‘ধর্ষণের আগে প্রত্যেক বার প্রার্থনা করানো হত’

প্রায় তিন বছর হয়ে গেল, উত্তর ইরাকে আইএস জঙ্গিদের কবল থেকে পালিয়ে এসেছেন মুরাদ। লন্ডনের এক হোটেলে বসে সেই দিনগুলোর কথাই বলছিলেন তিনি।

আইএস জঙ্গিদের কবল থেকে পালিয়ে আসা ইয়াজিদি মহিলা নাদিয়া মুরাদ। ছবি: সংগৃহীত।

আইএস জঙ্গিদের কবল থেকে পালিয়ে আসা ইয়াজিদি মহিলা নাদিয়া মুরাদ। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ১৩:৩৯
Share: Save:

ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা তাঁকে যৌনদাসী বানিয়ে রেখেছিল। শ’য়ে শ’য়ে ইয়াজিদি মহিলা আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি। তাঁর মতোই যৌনদাসী হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। সেই নরক থেকে পালিয়ে এসে ভয়ানক দিনগুলোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম। ‘দ্য লাস্ট গার্ল’ বইটিতেই সেই জীবনের কাহিনি তুলে ধরেছেন নাদিয়া মুরাদ।

প্রায় তিন বছর হয়ে গেল, উত্তর ইরাকে আইএস জঙ্গিদের কবল থেকে পালিয়ে এসেছেন মুরাদ। লন্ডনের এক হোটেলে বসে সেই দিনগুলোর কথাই বলছিলেন তিনি। বলেন, “কাউকে না কাউকে তো এই কথা তুলে ধরতেই হত।” বর্তমানে রাষ্ট্রপুঞ্জের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর মুরাদ আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি ইয়াজিদি মহিলা এবং যাঁরা জঙ্গিদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছে তাঁদের নিয়ে কাজ করছেন।

আরও পড়ুন: ‘কাশ্মীরিদের আজাদি দেবই’, মুক্তি পেয়েই হুঙ্কার হাফিজ সইদের

সাক্ষাত্কারে কী বলেছেন মুরাদ?

সালটা ২০১৪। তখন আইএস জঙ্গিদের দখলে চলে গিয়েছে গোটা উত্তর ইরাক। ইরাকের এই অংশে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ থাকতেন। জঙ্গিরা এসেই গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়। খুন, ধর্ষণ, লুঠপাট তো চলেই, সেই সঙ্গে ইয়াজিদি মহিলা, তরুণী, কিশোরীদের তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে চলে যৌনদাসী বানানোর জন্য। মুরাদ জানান, তাঁর এই বই প্রকাশ করার একমাত্র লক্ষ্য, গোটা বিশ্ব জানুক, কী ভাবে ইয়াজিদি মহিলাদের উপর অত্যাচার চালায় আইএস।

আরও পড়ুন: অনলাইনে এ বার বিক্রি হচ্ছে বোয়িং বিমানও!

উত্তর ইরাকের ছোট্ট গ্রাম কোচো-তে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন মুরাদ। তিনি তখন পড়াশোনা করছেন। গ্রামের প্রতিটি পরিবারই খুব গরিব। কিন্তু দারিদ্র কখনও সেই গ্রামের খুশি ছিনিয়ে নিতে পারেনি। সব ঠিকঠাকই চলছিল। ২০১৪-য় গ্রামে জঙ্গিরা এল। বুড়ো-বাচ্চা সকলকে গ্রামেরই একটা স্কুলে ঢুকিয়ে দিল তারা। মহিলাদের থেকে পুরুষদের আলাদা করে দেওয়া হল। তাঁদের রাখা হল স্কুলের বাইরে। তার পর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির আওয়াজ, আর সেই শব্দকে ছাপিয়ে মানুষের আর্তনাদ। সে দিন মুরাদের ছয় ভাইকেও গুলি করে মেরেছিল জঙ্গিরা। এর পর মুরাদ ও গ্রামের অন্য মহিলাদের একটা বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় মসুলে। বাসে যেতে যেতেই চলে শারীরিক নিগ্রহ। মসুলে নিয়ে গিয়ে অল্পবসয়ী মেয়েদের যৌনদাসী হিসাবে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। মুরাদের দাবি, এক জন তাঁর পেটে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়। সেই ব্যক্তিই তাঁকে কিনে নেয়। অনেক ইয়াজিদি মহিলা সম্ভ্রম বাঁচাতে আত্মহত্যা করেন।

মুরাদ বলেন, “নরক থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছিলাম। ধরা পড়তেই চলে গণধর্ষণ। ভেঙে পড়িনি। আমার মতোই হাজারো মহিলা জঙ্গিদের কব্জায় ছিল, এটাই আমাকে সাহস জুগিয়েছিল। নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে থাকলাম এক দিন মুক্ত হবই!” সেই সুযোগও এসে গেল এক দিন। এক জঙ্গি দরজা না আটকেই বেরিয়ে গিয়েছিল। তক্কে তক্কে ছিলেন মুরাদ। জঙ্গি চলে যেতেই সোজা দৌড়। আর পিছনে ফিরে তাকাননি। “ধরা পড়লেই মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সাহসে ভর করে বেরিয়ে পড়েছিলাম”— বলেন মুরাদ। অন্ধকার রাস্তা ধরে বহু ক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটা বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় চান। সেই পরিবারই তাঁকে মসুল থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। পরে ২০১৫-য় জার্মানির শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তিনি।

মুরাদ বলেন, “মসুলে ২০ লক্ষ মানুষের বাস। দু’হাজার মেয়েকে আটকে রেখেছিল জঙ্গিরা। মসুলের বাসিন্দারা কেউ এগিয়ে আসেনি তাঁদের উদ্ধারে। যাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন তাঁরা হাজার হাজার ডলার দাবি করছিলেন।” বন্দি থাকাকালীন ইউরোপ, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া থেকে একের পর এক জঙ্গি আসত, আর নিত্য দিন ধর্ষণ করত তাঁকে। ধর্ষণের আগে প্রার্থনাও করিয়ে নেওয়া হত।

তাঁর মতো অনেক ইয়াজিদি মহিলা এখনও আইএস জঙ্গিদের কবলে। মুরাদ বলেন, “জানি কী দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আজ সেই সব মেয়েদের কাহিনি তুলে ধরছি।”

মুরাদ মেকআপ আর্টিস্ট হতে চান। নিজের একটা স্যাঁলো খুলতে চান। আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে চান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE