Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভিডিয়ো গেম ভেবে ছুটে গিয়ে বন্দুকবাজের গুলিতে ঝাঁঝরা শিশু

মৌয়াদ ইব্রাহিম। তিন বছরের এই খুদে নিউজ়িল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাস হামলার সর্বকনিষ্ঠ নিহত। যখন তার ছোট্ট দেহটা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল, তখনও পায়ে সাদা মোজাটা পরা। টলমল পায়ে দৌড়তে গিয়ে যাতে পড়ে না যায়, তার জন্য বিশেষ গ্রিপ রয়েছে ওটায়।

মৌয়াদ ইব্রাহিম।

মৌয়াদ ইব্রাহিম।

সংবাদ সংস্থা
ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৬:৩৪
Share: Save:

দাদাকে সে মোবাইলে এ রকম একটা ভিডিয়ো গেম খেলতে দেখেছিল। এ ভাবেই একটা লোক গুলি চালাচ্ছিল সেখানে। খেলা ভেবেই হয়তো ছোট্ট ছোট্ট পায়ে বন্দুকধারী জঙ্গির দিকে ছুটে গিয়েছিল সে। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় দেহটা।

মৌয়াদ ইব্রাহিম। তিন বছরের এই খুদে নিউজ়িল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাস হামলার সর্বকনিষ্ঠ নিহত। যখন তার ছোট্ট দেহটা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল, তখনও পায়ে সাদা মোজাটা পরা। টলমল পায়ে দৌড়তে গিয়ে যাতে পড়ে না যায়, তার জন্য বিশেষ গ্রিপ রয়েছে ওটায়। সে দিকে তাকিয়ে সাত-পাঁচ ভেবে যাচ্ছিলেন মৌয়াদের বাবা। যদি হাতটা ধরে থাকতে পারতেন। যদি ও দিকে ছুটে না যেত ছেলেটা!

মৌয়াদের পূর্বপুরুষের ভিটে আফ্রিকার সোমালিয়ায়। বিশ বছর আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটা থেকে শরণার্থী হয়ে পালিয়ে এসেছিলেন মৌয়াদের বাবা। কিন্তু তাঁরই সন্তানকে যে এ দেশে সন্ত্রাসের শিকার হতে হবে, ভাবতে পারেননি আদান ইব্রাহিম। প্রতি শুক্রবারের মতো ওই দিন দুপুরেও বাড়ি থেকে ছেলেকে নিয়ে মসজিদে যান তিনি। কোনও কোনও দিন নমাজের পরে ছেলেকে নিয়ে রাস্তার উল্টো দিকে হ্যাগলে পার্কে খেলতে যেতেন। এ দিন যখন নমাজের মধ্যেই ওই জঙ্গি বন্দুক নিয়ে ছেলেদের প্রার্থনাঘরে ঢোকে, ছোট্ট মৌয়াদ হয়তো ভিডিয়ো গেম ভেবেছিল। চিৎকার-চেঁচামেচির মধ্যে বাবার হাত ছাড়িয়ে সে ছুটে গিয়েছিল জঙ্গির দিকে। গুলির ঝড় থামলে মৌয়াদের ছোট্ট শরীরটা কোলে করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন একটি লোক। পা থেকে জুতোটা খুলে পড়েছিল প্রার্থনাঘরের দরজার কাছে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরে এক-এক করে মৃতদেহগুলি পরিবারের হাতে দেওয়া হচ্ছে। সেই নিয়ে খানিক উষ্মাও জন্মেছে নিহতদের পরিবারের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন জানিয়েছেন, বুধবারের মধ্যে সব দেহ দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল রেকর্ড, হাতের ছাপ নেওয়া ইত্যাদি কাজ সারতে এই সময়টুকু লাগবেই। রবিবার রাতে মৌয়াদের দেহটা বাড়ির লোকজনকে দেওয়া হয়। আজ সমাহিত করা হয়েছে তাকে। ইব্রাহিম পরিবারের বন্ধু মহম্মদ হাসান আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘বড় হয়ে ও হয়তো চিকিৎসক হত। প্রধানমন্ত্রীও হতে পারত। কত সম্ভাবনা ছিল।

কেন এমন হল?’’ উত্তর খুঁজছে আরও বহু মুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Christ Church Attack Mosque Video Game
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE