ধর্মের নামে সন্ত্রাসকে তীব্র ধিক্কার জানালেন তিনি। ধিক্কার জানালেন আইএস জঙ্গিদের বর্বরতাকেও। কিন্তু বারাক হুসেন ওবামা মনে করিয়ে দিলেন, খ্রিস্টধর্মকে সামনে রেখে হিংসার নজিরও রয়েছে ইতিহাসে। তার প্রমাণ ধর্মযুদ্ধ বা ‘ক্রুসেড’ ও ‘ইনকুইজিশন’। এবং মনে করালেন, আমেরিকাতেও এককালে ধর্মের জুজু দেখিয়ে বৈধতার সিলমোহর পেত বর্ণবিদ্বেষ ও দাসত্ব।
বার্ষিক ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ এই বক্তৃতা শেষ হওয়া ইস্তক নিজের দেশেই সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়েছেন ওবামা। সরব হয়েছেন বিরোধী রিপাবলিকানরা, বরাবরই যাঁরা গোঁড়া খ্রিস্টানদের ঘনিষ্ঠ। তাঁদের অভিযোগ, আইএস ও খ্রিস্টধর্ম গুলিয়ে ফেলেছেন ওবামা।
প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম বৃহস্পতিবারে নানা দেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এই প্রাতরাশ বৈঠক হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টদের। তারই পোশাকি নাম ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’। অনেকে ভেবেছিলেন, বাগ্মী ওবামা বরাবরের মতো হাততালি কুড়োবেন। কিন্তু বক্তৃতার পর তাঁদের উপলব্ধি, এই বক্তৃতা নিছক ‘গ্যালারি শো’ নয়। বিতর্কের ঝড় যে উঠবে, ওবামা বিলক্ষণ জানতেন। তাই চাঁছাছোলা ভাষায় তিনি বলেছেন, “ধর্মের নামে ভয়াবহতা কোনও একটি গোষ্ঠীর কুক্ষিগত নয়। সকলেরই এই মানসিকতা দেখা দিতে পারে, যা আদতে ধর্মবিশ্বাসকেই বিকৃত করে।”
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও আজ ছুঁয়ে গিয়েছেন ওবামা। তা হল, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লক্ষ্মণরেখা। তাঁর কথায়, “কেউ অন্যের ধর্মকে অপমান করল, আর আমরা বললাম সেটা তার আইনি অধিকার। তা হলে ওই অপমানের নিন্দা করার দায়িত্বটাও আমাদের ওপর বর্তায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকেই আমাদের উচিত সেই অপমানিত ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো।”
অনেকের মতে, এখানেই ‘শার্লি এবদো’ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে নিজের মত জানিয়ে দিলেন ওবামা। বিতর্কিত ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে বহুদিন ধরেই কট্টরপন্থীদের নিশানায় ছিল এই ফরাসি কাগজটি। তাদের দফতরে জঙ্গি হানার পর বেশ কয়েক জন রাষ্ট্রনেতা প্যারিসে প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটেন। কিন্তু ছিলেন না ওবামা। সেই গরহাজিরার কারণই কি ঘুরিয়ে ব্যাখ্যা করলেন এ দিন? অনেকের মত ঠিক তা-ই। পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, “অন্যের ধর্মকে অপমান করা উচিত নয়।” ওবামা সেই সুরেই বলেছেন, “কারও মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয়, সে কাউকে অপমান করলে কেউ কিছু বলবে না।” কে বলছেন? দুনিয়া কাঁপানো মার্কিন ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’-এর পুরোধা মার্টিন লুথার কিঙ্গ জুনিয়রের একনিষ্ঠ ভক্ত!
ওবামার মতে, দেশ তখনই শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যখন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সমান অধিকার পায়। তিনি অবশ্য মনে করেন, আমেরিকা আজ বদলেছে। তবে রিপাবলিকানরা তাতে ভুলছেন না। তাঁদের অভিযোগ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিন খ্রিস্টানদের ভাবনার সঙ্গে যোগই নেই ওবামার। ভার্জিনিয়ার প্রাক্তন রিপাবলিকান গভর্নর জিল গিলমোরের বক্তব্য, “প্রথম কোনও প্রেসিডেন্টের এত আপত্তিকর বক্তৃতা শুনলাম।”
প্রেসিডেন্টকে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন তাঁরা অবশ্য বলছেন, ওবামার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনেক শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্টের চেয়ে আলাদা। বহু মুসলিম মার্কিনকে চেনেন তিনি। এ-ও জানেন, অনেক মার্কিনেরই ইসলাম নিয়ে ধারণা অস্পষ্ট। তা ছাড়া, ধর্ম-জনিত বৈষম্যের নানা অভিযোগ আসে তাঁর কাছে। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে এই বিষয়ে তাঁর কথাও হয়েছে। এ বার নিজের বার্তাটা দিতে বারাক ওবামা বেছে নিলেন ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’কেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy